শীতের সকালে পূর্বের নরম রোদ উঁকি দিয়েছে লজের বারান্দায়। সাত সকালে ঘুমের আড়মোড়া ভেঙে লজের বারান্দায় গুটি গুটি পায়ে এসে দাঁড়াতে শুরু করেছে পর্যটকরা।
নরম রোদে দাঁড়িয়ে গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়েই চমকে উঠলেন কলকাতা থেকে বেড়াতে আসা স্বপন মল্লিক, অনুপ দত্তরা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না শিলিগুড়ি থেকে বেড়াতে আসা সুমন সরকার।
লজের বারান্দা থেকে মাত্র ১৫-২০ মিটার দূরে তখন সাক্ষাৎ দাঁড়িয়ে বিখ্যাত একশৃঙ্গী এক গন্ডার।লজে বসেই গন্ডার দর্শনে আপ্লুত স্বপন, অনুপ, সুমন বাবুরা।
লজের চার ধারে মিনিট কুড়ির পায়চারি।আর সকালের হাল্কা কিছু প্রাতরাশ সেরে আপন খেয়ালে ফের গভীর জঙ্গলে ধিরে ধিরে মিলিয়ে গেল বুনো প্রাণীটি।
পর্যটকদের মনরক্ষা করতে বুনো প্রাণীটি জঙ্গলে মিলিয়ে যাবার পর্যটকদের মুঠোফোনের সামনে বেশ কিছু পোজ দিতে কোন কসুর করেনি একশৃঙ্গী প্রাণীটি। দুর্লভ প্রাণীটির বেশ কিছু ছবি খচাখচ মুঠোফোন বন্দী করতে ভুল করেনি ঘটনার সাক্ষী থাকা পর্যটক মহল।
ঘটনাটি ঘটেছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বনদপ্তরের সরকারি জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজে।গত তিনদিন ধরেই এই লজের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে একাধিক বন্যপ্রাণীর দল।
শুক্রবার সকালে সরকারি এই লজে পর্যটকরা একপাল হাতির দর্শন পেয়েছে।শনিবার পর্যটকদের নজরে এসেছে তিনটি বাইসন।তবে রবিবার সকালে এক্কে বারে একশৃঙ্গীর দর্শন? ভাবতেই পারছেন না বহিরাগত পর্যটক মহল।
জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজের ম্যানেজার নিরঞ্জন সাহা বলেন এই ঘটনা খুবই বিরল।কারণ গন্ডারদের বাসস্থান জঙ্গলের কোর এলাকার তৃনভূমিতে।এই প্রাণী কোর জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসে না।
অন্য বন্যপ্রাণী হাতি, বাইসন, হরিণ, এমনকি লেপার্ড ও লোকালয়ে চলে আসে।কিন্তু গন্ডারের এভাবে লোকালয়ে চলে আসার ঘটনা খুব বিরল।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান একশৃঙ্গী গন্ডারের জন্য জগৎ বিখ্যাত।এই প্রাণীটি দর্শনের জন্যই জলদাপাড়ায় দেশ বিদেশের পর্যটকরা এখানে বেড়াতে আসেন।
প্রাণীটির দর্শনের জন্য গাঁটের পয়সা খরচ করে জঙ্গল সাফারিতে যেতে হয়।তাও কপাল চওড়া না হলে কোর জঙ্গলে এর দেখা পাওয়া দায়। আর তাই লজের বারান্দা থেকে আচমকাই একশৃঙ্গীর দর্শনে উৎফুল্ল জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজের পর্যটকরা।