আপনারা সবচেয়ে বেশি বয়স্ক ব্যক্তির বিষয়ে নিশ্চয়ই শুনেছেন। তিনি হয়তো ১১৪ বছর, কিংবা ১১৬ বছর মোটামুটি দীর্ঘজীবীদের এই বয়স পর্যন্ত বাঁচেন বলে জানেন। কেউ কেউ কম-বেশি বেঁচে থাকেন। কিন্তু আপনি কী জানেন? যে মানুষ এত বছর কী করে বেঁচে থাকতে পারে? অনেকেই অল্প বয়সে তেমন কোনও রোগ ছাড়াই মারা যান। তাহলে এরা কোন রহস্যে বেঁচে থাকেন এত বছর? বৈজ্ঞানিকরা এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে একটি অনুমানভিত্তিক রিপোর্ট তৈরি করেছেন যে, একজন ব্যক্তি সর্বাধিক কত বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন। নেচার কমিউনিকেশন-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী মানুষ সবচেয়ে বেশি ১৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। আসুন জেনে নিই যে বৈজ্ঞানিকরা এই গণনা কীভাবে করেছেন।
সিঙ্গাপুরের বৈজ্ঞানিকেরা মানুষের সর্বাধিক বয়স মাপতে গিয়ে বিশেষ এক ইন্ডিকেটরস তৈরি করেছেন। এই ইন্ডিকেটর ডায়নামিক অর্গানিজম স্টেট ইন্ডিকেটর DOSI বলে পরিচিত। এটা থেকে এটা জানা যায় যে, কোনও মানুষের শরীরে কত বছর বয়স পর্যন্ত তার সঙ্গে কার্যকর ভূমিকা থাকতে পারে। এটার জন্য তারা বিশেষ ভাবে রক্তের পরীক্ষা করেছেন। এই বৈজ্ঞানিকেরা রক্তের যাচাই করে নিজেদের ইন্ডিকেটরস এর সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে দেখেছেন। যা থেকে জানা যাচ্ছে যে যদি শরীর স্বাস্থ্য ঠিক থাকে এবং পরিস্থিতি মানুষের শরীরের অনুকূলে থাকে তাহলে তিনি ১৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন সহজেই।
বৈজ্ঞানিকরা বয়স সম্পর্কিত ভ্যারিয়েবেল এবং বয়স কমানোর ট্রাজেক্টরিকে সিঙ্গেল মেট্রিকে ফেলে দেখেছেন। এ থেকে সম্ভাব্যতম ভেরিয়েবল সামনে এসেছে। বয়স বাড়াকে বায়োলজির ভাষায় ওই পরিস্থিতিকে বলে, যখন শরীরের অঙ্গ ধীরে ধীরে কাজে অক্ষম হতে শুরু করে।শরীরে রোগ সংক্রমণ হতে শুরু করে। হতে পারে এটা ক্যান্সার বা মানসিক সমস্যা বা হৃদয়ের রোগ বা স্নায়ু ঘটিত কোনও সমস্যা কিংবা কিডনি, লিভার জনিত সমস্যা। অনেক কিছুই হতে পারে। আরেকটি বড় কারণ লাগাতার বিভাজন হতে চলা ডিএনএ। এর কারনে বেশি প্রভাব তৈরি করে এবং শরীরের অংশ বডি সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে বাধা দেয়।
এখন কথা বলতে হবে যে রক্তের পরীক্ষায় বয়স কীভাবে বের করা হয়েছে? আলাদা আলাদা স্টেজে মানুষের ব্লাড স্যাম্পেল নেওয়া হয়েছে। যার কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট সিবিসি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এই পরীক্ষায় রক্তে মজুত সাদা রক্ত কণিকা, লাল রক্ত কণিকা এবং প্লেটলেট এর মাত্রা গোনা হয়েছে। বয়স এবং সিডিসির পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখা গিয়েছে যে কোন বয়সে, কোন সম্ভাব্য রোগ হতে পারে। সঙ্গে শরীর কত রকমের রোগের সঙ্গে লড়াই করতে পারে।
এই ইন্ডিকেটর শরীরের ফিজিক্যাল ক্ষমতা বয়ান করে। যাদের লাইফস্টাইল ভাল নয়, তাদের ডিওএসআই বলে দেয় যে তারা কম দিন বাঁচবে। এটি সাধারণ রোগগুলির উপর ভিত্তি করে শরীরের বয়স জানা হয়। যা থেকে জানা যায় যে, মানুষের শরীর কোন দিকে যাচ্ছে, তিনি কতদিন পর্যন্ত সুস্থ থাকতে পারেন। যদি কোনও মানুষ কোনও রোগে আক্রান্ত না হন এবং তার লাইফস্টাইল ঠিকঠাক থাকে তাহলে তিনি বয়সে লম্বা সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন।
যখন বৈজ্ঞানিকেরা সুস্থ লোকের পরীক্ষা করে দেখেন, তখন তাঁরা জানতে পারেন, ভবিষ্যতে কোনও রোগ হবে কি না। যদিও ডিওএসআই ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাব্য রোগের বিষয়টিও বলতে পারলেও কিন্তু বর্তমানে কোনও রোগ এর সতর্কতা দিতে পারে না। কারণ তাঁদের জীবনযাত্রা সঠিকভাবে চলছে।
ডিওএসআই বাড়ন্ত বয়সের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত রয়েছে। যদি সমস্ত অঙ্গ ভারসাম্য ঠিক মত থাকে তাহলে যদি কোনও গম্ভীর ক্রনিক রোগ না থাকে জীবন যাত্রা ঠিকঠাক থাকে তাহলে ১৫০ বছর পর্যন্ত একজন ব্যক্তি বাঁচতে পারেন। বৈজ্ঞানিকরা এটাও জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে কত প্রযুক্তি আসুক না কেন বাড়ন্ত বয়সকে কমানোর কোন পদ্ধতিতে বাগে আনা যাবে না।
বাড়ন্ত বয়সের সঙ্গে শরীরের ফিজিক্যাল এবং অ্যানাটমিকাল অর্থাৎ বাইরে এবং ভেতরের ক্ষমতা কম হতে থাকে। এরপর আরও ঘাতক কাজ করতে থাকে রোগ জীবাণু। আজকের জমানায় লাইফস্টাইল সম্পর্কিত রোগ ক্রমাগত বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের গড় বয়স কমে যাচ্ছে। বয়স বাড়ানোর জন্য যে কোনও টেকনিক বা থেরাপি কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর জন্য মানুষকে ঠিকঠাক লাইফস্টাইল হঠাৎ জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে।