করোনা (Covid-19) কালের ক্ষতিপূরণ করতে পর্যটকদের (Tourist) ঘাড়ে বন্দুক রাখার চেষ্টা করেছে ভুটান (Bhutan)। নতুন করে ভুটান এর গেট পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার পর ভুটানে ঘোরার ফি চার-পাঁচ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে (Travel Cost)। যদিও ডেভলপমেন্ট ফি (Development Fee)-এর নামে এই মোটা টাকা আদায়কে ভালো চোখে দেখেননি অনেকেই। পাশাপাশি এত টাকা খরচ করে ভুটানে ঘুরতে যাবেন কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে?
ভুটান থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন পর্যটকরা
এক ধাক্কায় ডেভলপমেন্ট ফি এতটা বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ভুটান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পর্যটকদের চাহিদা বুঝে টুর অপারেটররা (Tour Operator) পর্যটকদের জন্য অন্য় ট্যুরিজম সার্কিট বেছে দিচ্ছেন। মালয়েশিয়া (Malaysia), ইন্দোনেশিয়া (Indonesia), বালি (Bali), থাইল্যান্ড (Thailand) একই খরচে হয়ে যাওয়ায় কে আর ভুটান ঘুরবে?
পুরনো রেটে পুরনো পর্যটকদের ঘুরতে দেওয়া হবে
এতে অশনি সংকেত দেখতে শুরু করেছ ভুটানের পর্যটন ব্যবসায়ী এবং টুর অপারেটররা। ফলে তাদের চাপেই খানিকটা পিছু হটল ভুটান ট্যুরিজম। তারা ভাঙছেন তবু মচকাচ্ছেন না। আপাতত তারা ২০২০ সালের ৬ মার্চের আগে যারা ভুটান যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং বুকিং করেছিলেন পরে বাতিল করতে হয়, তাদের সেই পুরনো রেটেই ঘুরতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ভুটান ট্যুরিজম।
আরও পড়ুনঃ পাহাড় প্ল্যান করে শিলিগুড়িতে আটকে পড়েছেন? যা যা উপভোগ করতে পারেন...
যাঁরা আগেই বুকিং করেছিলেন, কিন্তু আসতে পারেননি
ট্যুরিজম কাউন্সিল (Toursim Council Of Bhutan) সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তারা জানিয়েছে, ২০২০ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত যারা ভুটানে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আসতে পারেননি, এমন ৫০০ জন পর্যটকের আবেদন পেয়েছেন। তারা তাদের জন্য নতুন এসডিএফ বা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি লাগু করছেন না। আরও কেউ যদি ওই সময়ের মধ্যে ভুটান ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাদেরও ২৮ জুলাই এর মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছে। কাউন্সিল আবেদন খতিয়ে দেখে তাদের ব্যবস্থা করবে। ভারতীয় (Indian), বাংলাদেশী (Bangladeshi) বা ইউরোপীয় (European) পর্যটকদের কাছ থেকে সেই পুরনো হারেই ফি নেওয়া হবে। তবে পাশাপাশি সার্ক (SAARC) দেশগুলির পর্যটকদের কাছ থেকে কোনও ফি নেওয়া হবে না। তবে যারা ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ভুটান ভ্রমণে আসবেন বলে ঠিক করেছিলেন তাদের প্রতি রাত ২০০ ডলার মাথাপিছু এবং সার্ক দেশগুলির পর্যটক হলে ভুটানের মুদ্রায় ১২০০ নুলট্রাম (Ngultrums) চার্জ করা হবে।
জটিলতা নিয়ে অসন্তোষ সব মহলে
এ নিয়েও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নতুন পর্যটক, পুরনো পর্যটকের বিষয়টি খুব গোলমেলে এবং জটিল বলে দাবি করেছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরাও। পাশাপাশি দুজন দু'রকম টাকা দিয়ে ভুটানে ঘুরবেন এটা কেউই মেনে নেবেন না বলে তারা মনে করছেন। ফলে অযথা জটিলতার সৃষ্টি হবে এবং শেষমেষ ভুটানের পর্যটকের সংখ্যা কমতে থাকবে বলে মনে করছেন তারা। এটিকে পুরোপুরি সমর্থন না করলেও আপাতত পুরনো যাঁরা অ্যাডভান্স বুকিং করে রেখেছিলেন, তাঁদের জন্য কিছুটা স্বস্তি বলে মনে করছেন হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (HHTDN) এর সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল। তিনি জানিয়েছেন, জটিলতা ইতিমধ্য়েই তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে পুরনো যাঁরা আগাম বুকিং করে বসে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অন্তত ছাড় দেওয়ায় পর্যটকদের জন্য কিছুটা লাভ হবে। নেচার বিয়ন্ডের তরফে পার্থ গুহ জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে ভুটানের ওপর বাজে ইমপ্যাক্ট তৈরি হয়েছে। খরচ বাড়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দিকে চলে যাচ্ছে দেশি-বিদেশী পর্যটকরা।
পর্যটকদের উপর দিয়ে করোনার ক্ষতিপূরণ করতে চেয়েছিল ভুটান সরকার
করোনার সময় তবু অর্থ সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। ভুটানে ভুটান গেট বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা বাণিজ্য সমস্ত তলানিতে গিয়ে থেকেছিল। সেই ক্ষতিপূরণের জন্যই ভুটান সরকার ঠিক করেছিল পর্যটকদের কাছ থেকে ক্ষতির টাকা আদায় করা হবে। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে, পর্যটকরা মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। এতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ভুটানের পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্য়েও।