আমেরিকার এক নামি ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন যে আসন্ন সময় ভারতে ক্যান্সারের মতো ঘাতক রোগের সুনামি দেখা দিতে পারে। তিনি এর কারণ হিসেবে, গ্লোবালাইজেশন, অর্থ ব্যবস্থার উন্নতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভারতের মানুষের লাইফ স্টাইল খুব দ্রুত বদলে যাওয়ার কারণকে দায়ী করেছেন। তিনি এই সুনামির আটকানোর জন্য মেডিকেল টেকনিক এর উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন।
আমেরিকায় অবস্থিত ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক এর হেমাটোলজি এন্ড মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের অধ্যক্ষ ডাক্তার আব্রাহাম এটাও জানিয়েছে যে ভারতে যে ধরণের গম্ভীর রোগ দেখা দিতে পারে, সেটি আটকানোর জন্য মেডিকেল প্রযুক্তি আরও উন্নত করতে হবে এবং এর উপর কাজ এখনই শুরু করা দরকার। ভারতে ক্যান্সারের টিকা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ডাটা ডিজিটাল টেকনিক এর অ্যাডভান্স করা অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুনঃ পেঁপে পাতায় ভর করে ডেঙ্গিকে বুড়ো আঙুল দেখান, নিজেকে সুস্থ রাখুন
ভারতের ভয়াবহ হতে চলেছে পরিস্থিতি
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক গত মাসে জানিয়েছে যে দেশে ২০২০ থেকে ২০২২ এর মধ্যে আনুমানিক ক্যান্সারের মামলা এবং এতে হওয়া মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) অনুসারে ২০২০-তে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত প্রদেশে ক্যান্সারের আনুমানিক মামলা ২০২০-তে ১৩.৯২ লাখ বা প্রায় ১৪ লাখ ছিল। ২০২১-এ বেড়ে ১৪.২৬ লাখ হয়ে যায়। ২০২২এ তা ১৪.৬১-এ পৌঁছে গিয়েছে তা। ২০২০ তে ভারতে ক্যান্সারের কারণে আনুমানিক মৃত্যুর সংখ্যা ৭ লাখ ৭০ হাজার ছিল। ২০২১এ তা ৭ লাখ ৮৯ হাজার, ২০২২-এ ৮ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছে গিয়েছে। ডাব্লুএইচও-র রিপোর্ট অনুযায়ী বার্ষিক ক্যান্সারে কেস ২০২০ সালে Ranking-এ চিন এবং আমেরিকার পরে ভারতকে তৃতীয় স্থানে রেখেছে।
ভারতে মহিলা এবং পুরুষদের মধ্যে সাধারণ ক্যান্সার
গত কিছু বছর থেকে পরিসংখ্যান দেখতে গেলে ভারতে পুরুষরা সবচেয়ে বেশি মুখ এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে মহিলারা সবচেয়ে বেশি ব্রেস্ট এবং গর্ভাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতে ২০১৮ সালে ব্রেস্ট ক্যান্সারে সাতাশি হাজার মহিলার মৃত্যু হয়েছে। যশোদা হাসপাতালের গাজিয়াবাদের ডিপার্টমেন্ট অফ মেডিকেল ইউনিট হেড এবং কনসাল্ট্যান্ট অভিষেক জানিয়েছেন, ভারতের ক্যান্সারের সংখ্যা গত কিছু বছরে বাড়ছে। এখানে প্রত্যেক বছর ক্যান্সারের ১০ থেকে ১৫ টি মামলা সামনে আসে। যেখানে গোটা দুনিয়ার ১.৮ কোটি লোক প্রতি বছর ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা ফুসফুস মুখ এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
কেন এত বাড়ছে ক্যানসার?
ডঃ অভিষেক জানিয়েছেন যে ভারতেই শুধু নয়, গোটা পৃথিবীতে এই রোগ বাড়ার কারণ ভুল লাইফস্টাইল, খারাপ খাওয়াদাওয়া, স্মোকিং, ড্রিংকিং, দূষণ, পেস্টিসাইড এবং কেমিক্যাল সংক্রমিত ভোজন-সেবনের মতো ফ্যাক্টর শামিল রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন যে কিছু ক্যান্সার বাড়ার কারণ হলো হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, ইনফেকশন, হেপাটাইটিস বি এবং সি এর মতো সংক্রমণওয়ালা রোগ। এটি লিভার, ব্রেস্ট এবং সারভাইকাল এবং মুখের ক্যান্সারের কারণ হয় এবং সারভাইকাল ক্যান্সার সবচেয়ে বড় কারণ।
আরও পড়ুনঃ ওষুধ ছাড়াও কমবে ইউরিক অ্যাসিড, এই ৪ সুপারফুড খেয়ে দেখুন
সুরক্ষার জন্য কী জরুরি?
এগুলি থেকে সুরক্ষার জন্য টিকাকরণ অত্যন্ত জরুরি, ব্রেস্ট এবং সারভাইকাল ক্যান্সারের থেকে বাঁচতে হলে বছরে একবার স্ক্রীনিং জরুরী ৫৫ এর উপর বয়স হয়ে গেলে বছরে একবার এই স্ক্রিনিং করতে হবে এর সঙ্গে প্রত্যেকে হেলদি লাইফ স্টাইল যতটা সম্ভব অবলম্বন করার চেষ্টা করতে হবে। পুষ্টিকর খাওয়া-দাওয়া একটিভ লাইফ স্টাইল ধূমপান তামাক এবং মধ্যপান বন্ধ করা এগুলি মেনে চলতে হবে
সুরক্ষা এবং চিকিৎসার দ্বারা ক্যান্সারের সমস্যা কমানো যেতে পারে। এটা সবাই জানেন যে ক্যান্সার একটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রোগ। কিন্তু জীবনশৈলীতে বদল এবং ক্যান্সার বাড়িয়ে দেওয়া রিস্ক ফ্যাক্টরকে দূর করতে আমরা অনেকেই পদক্ষেপ করি না বা জানি না। ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ সমস্যা এবং ক্যান্সারের বিপদ থেকে বাঁচা সম্ভব সঠিক চিকিৎসা এবং সুরক্ষার মাধ্যমে। এটি করা যেতে পারে যদি রোগ সম্পর্কে আগে জানতে পারা যায়। তাহলে বেশিরভাগ ক্যান্সারই নিরাময় করা সম্ভব।
কী করতে হবে?
ভারতের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে হয়। যার কারণ ধূমপান এবং তামাক সেবন। এটি অত্যন্ত খারাপ এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের সমস্যা পাঁচ থেকে দশগুণ বাড়িয়ে দেয়। হাভার্ড ইউনিভার্সিটির রিসার্চ অনুসারে ক্যান্সার বাড়ার কারণ স্থূলত্ব। শরীরে ফ্যাট হলে ক্যানসার কোশিকা খুব দ্রুত বাড়তে পারে। গুরুত্ব কমাতে নানা রকম পদ্ধতি রয়েছে। শরীরচর্চা রয়েছে। সেগুলি করতে হবে। পাশাপাশি ফ্যাট-কোলেস্টেরল বাড়তে না পারে এই ধরনের খাবার দাবার খেতে হবে। ফল এবং সবজির মধ্যে ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের সমেত একাধিক গুরুতর রোগের সমস্যা কম করার গুণ থাকে ।সেগুলি নিয়মিত খেতে হবে।