Parenting Tips: জন্মের পর থেকে স্কুল যাওয়া পর্যন্ত বাচ্চারা নিজেদের মা-বাবার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটায়। এই সময়ে মা-বাবা বাচ্চাদের নানা রকম নতুন জিনিস শেখাতে থাকেন। আর এ কারণেই মা-বাবাকে শিশুর প্রথম শিক্ষক বলা হয়। সব মা-বাবাই তাঁদের শিশুদের ভালোবাসেন। ছোটবেলায় বাচ্চাদের বিভিন্ন রকম অ্যাক্টিভিটি এবং নানা রকম অসম্পূর্ণ আদব-কায়দা শিশুদের আরও ভালোবাসার পাত্র করে তোলে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, এই ভালোবাসা বিষম হয়ে দেখা দেয় এবং বাচ্চাদের জেদি করে তোলে।
কিছু মা-বাবা এমন হন যাঁরা বাচ্চাদের প্রতি ছোট থেকেই কঠোর নিয়মানুবর্তিতা শেখান। শক্ত নিয়ম কানুনের মধ্যে বাচ্চাদের বেঁধে রেখে মা-বাবারা শুধুমাত্র এটাই চেষ্টা করেন যে তাঁদের বাচ্চারা যেন কোনও ভুল পদক্ষেপ না করে এবং ভুল দিকে পরিচালিত না হয়। কিন্তু অনেক সময় মা-বাবার এই কঠোরতা বাচ্চাদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা দেয়। আজকে আমরা আপনাদের বাবা-মাদের এমন কিছু ভুলের বিষয়ে জানাব, যেগুলি বাচ্চাদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং কিছু ক্রিয়েটিভ করতে বাধা দেয়। আপনিও এর মধ্যে একজন হন, তাহলে এটা অত্যন্ত জরুরি যে আপনার সেই ভুলগুলি জেনে নিন।
বাচ্চাদের অনুভূতিকে গুরুত্ব না দেওয়া
যদি আমরা ভারতীয় বাবা-মার কথা আলোচনা করি, তাহলে এখানে বাচ্চাদের ভাবাবেগ এবং অনুভবকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ কারণে বাচ্চারা হীনমন্যতার শিকার হন। কিন্তু যখন আপনি বাচ্চাদের গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যাবেন, তখনই শিশুরা সেই জিনিসটিতে রিঅ্যাক্ট করবে না। কিন্তু এটি লাগাতার করতে থাকলে বাচ্চারা ধীরে ধীরে মা-বাবার কাছ থেকে দূরত্ব তৈরি করে নেবে। এছাড়া এই পরিস্থিতিতে বাচ্চারা ভবিষ্যতে কোনও কথা শেয়ার করতে দ্বিধাবোধ করবে। কারণ তারা মনে করতে পারে যে, বাবা মা বাবা তাদের বক্তব্য বুঝতে পারবে না।
খাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া
অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিয়ম অনুযায়ী শিশুরা খেতে না চাইলে তাদের খাওয়ার জন্য চাপ দেন। অনেক সময় বাচ্চাদের পেট ভরা রয়েছে কি না, এ বিষয়ে না বুঝেই আমরা খাবার জন্য চাপ দিতে থাকি। অনেক সময় যে জিনিসটি খেতে চায় না, সেটি জোর করলে তারা খেয়ে নেয়, কিন্তু তাতে শরীরের পাচন রস ক্ষরণ হয় না এবং বাচ্চার কোনও লাভ হয় না। বরং এটি শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে।
শৃঙ্খলা শেখানোর ফলে শাস্তি দেওয়া
বাচ্চাদের শৃঙ্খলা শেখাতে গিয়ে আমরা কঠোর শাস্তি দিয়ে ফেলি অনেক সময়। এতে অনেক সময় বাবা-মায়েরও কোনও ভুল থাকে না। তাঁরা তাঁর মা-বাবার কাছ থেকে এমন শিখেছেন। কিন্তু এখন সময় বদলে গিয়েছে। কড়া শাস্তি দিলে আপনার বাচ্চা কিছু সময় পর্যন্ত সঠিক আচরণ করবে, কিন্তু যদি লম্বা সময়ের কথা ধরেন, তাহলে এতে আপনার বাচ্চার কনফিডেন্স নষ্ট হতে পারে। অনুশাসন শেখানোর জন্য শাস্তি দেওয়া বাচ্চাদের মেন্টাল হেলথে খারাপ প্রভাব ফেলে।
বাচ্চাদের কিছু ক্রিয়েটিভ করতে না দেওয়া
শিশুকে শুধুমাত্র পড়া এবং স্কুল সম্পর্কিত কাজকর্মের মধ্যে জড়িত রাখতে যদি আপনি চান, তাহলে বাচ্চাদের বিকাশ ব্যাহত হয়। আপনার বাচ্চাদের জীবনে কিছু বড় সাফল্য পেতে চাইলে, ক্রিয়েটিভ কিছু করার জন্য উৎসাহ যোগাতে হবে। তার সঙ্গে মজাদার গেমস খেলতে পারেন। তাকে প্রথাগত পড়ার বাইরে তার ইচ্ছেমতো কিছু জিনিস করতে দিন।
কারও সঙ্গে তুলনা করা
অনেক সময় বাচ্চাদের অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করি আমরা। অন্য শিশুর চেয়ে আপনার বাচ্চা কতটা খারাপ বা পিছিয়ে, সে বিষয়টি আমরা বারবার বলতে থাকি। যদি আপনি এমন করেন, তাহলে আপনাকে জানিয়ে দিই যে, আপনার আসলেই কোনও লাভ হয় না বরং আপনার বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে। এমন করলে বাচ্চারা নিজেরা হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করে এবং নতুন কোনও কাজ করতে সাহস পায় না। অনেক সময় এর উল্টো রিঅ্যাকশনও হয়।
বাচ্চাদের প্রতি ভালবাসা জাহির না করা
আমরা, ভারতীয় বাবা-মায়েরা অনেক সময়ে বাইরের লোকের কাছে বাচ্চাদের প্রতি ভালবাসা জাহির করি। কিন্তু বাচ্চাদের সঙ্গে যখন নিজেরা থাকি, তখন তাকে আলাদা করে কতটা ভালোবাসি সেটা বুঝতে দিই না। এরকম চলতে থাকলে বাচ্চা এবং বাবা-মায়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। লম্বা সময় পরে যা স্থায়ী দূরত্বে পরিণত হতে পারে।