Kashmiri Foods in Kolkata: শীত পড়তে না পড়তেই কলকাতার অলি-গলিতে ওঁরা পৌঁছে যান। সুদর্শন সব যুবক, সাইকেলে চেপে বা গুটি গুটি পায়ে ঘুরে বেড়ান। দু'চাকার সুন্দর সুন্দর সব শালের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন রকমের শীতবস্ত্র থাকে। ওঁদের পরিচয় আলাদা করে দেওয়ার দরকার পড়ে না বোধহয়। ওঁরা কাশ্মীর থেকে আসেন। শীতকাল কলকাতা ওঁদের রুটিরুজি জোগায়। আর কলকাতাও অপেক্ষা করে থাকেন ওঁদের জন্য।
আরও পড়ুন: গোসাবায় বাঘের হানা, মেরেছে গরু-ছাগল, আতঙ্কে কাঁপছেন স্থানীয়রা
বেহালায় বাস
বেহালার এমনই একদল কাশ্মীরি শালবিক্রেতার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল পিনাকী গুহ নামে এক শিক্ষক এই। তিনি পীরতলা হাইস্কুলে পড়ান। শিক্ষকতার পাশাপাশি ঝোঁক বাংলার কাঁথা নিয়ে। সেই সূত্রেই তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও জমে উঠে।
কাঁথার সঙ্গে মিলেছে কাশ্মীরের বয়ন রীতি
জামেবার হল বয়ন রীতি বা ধরন। বেশ জনপ্রিয়। এটা কাশ্মীরের কাজ। মূলত করা হয় শালের ওপর। এবার পিনাকীর হাত ধরে জামেবার-এর কাজ কাঁথায় চলে আসে। তিনি তাঁদের জানান, এই ভাবে কাঁথা তৈরি হয়। কাজেই জামেবার দিয়ে তো কাঁথাও তৈরি করা যায়।
পরে তিনি কাপড় পাঠিয়ে দেন। দু'খানা কাঁথা বানিয়েছেন ওঁরা। ওঁরা মানে মহম্মদ ইউনুস ডর, ফয়াজ ডর, সাজাদ ডর, তারিক ডর, তনভির ডররা। কাশ্মীরে বাড়ি লালবাজার বাহওয়ানপুরায়। এর পর বেশ জনপ্রিয় হয় নয়া এই কাজ।
সেই সাফল্য উদযাপন করা হবে বলে ঠিক করা হয়। ঠিক করা হয়, হবে পপ-আপ। পিনাকী জানান, তাই একটা খাওয়াদাওয়া আসর বসেছিল কিছুদিন আগে। শালওয়ালা বন্ধুদের বাড়িতেই। কলকাতার বেহালার বিজে প্রেস এলাকায় থাকেন থাকেন। কী কী ছিল তার মেনুতে? জিভে জল আনা সব পদ। আর সেগুলো তৈরি করেছিলেন কাশ্মীরি যুবকরাই।
যা যা ছিল
গোস্তাবা হল কোপ্তা। যা মাংস বেটে তৈরি হয়। চিতল মাছের মুইঠ্ঠার মতো একটি পদ বলা যেতে পারে। তা দিয়ে বানানো একটি খাবার ইয়াখনি। দুধ দিয়ে তৈরি মাসের একটি পদ। গরম মশলা ফোটানো জল মেশানো হয় তাতে। ওই গোস্তাবা দিয়ে তৈরি আর একটি পদ হল রিস্তা। এতে শুকনো লঙ্কা বেশি থাকে। এর পাশাপাশি ছিল আখরোটের চাটনি। আর কাওয়া চা। এই চায়ের বৈশিষ্ট হল এর মধ্য়ে বাদাম থেঁতো করা থাকে। মিলবে কেশরও। ছিল বহু পরিচিত কাশ্মীরি পোলাও এবং রোগন জুস।
পিনাকী জানান, কাঁথা তৈরির জন্য শাড়ি আর বেড কভার পাঠিয়েছিলেন। ভিডিও কলে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী করে তা বানানো যেতে পারে। খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তারপর সেই কাঁথা বিকিয়ে হইহই করে! তা উদযাপন করতেই নয়া এক খাবারের জগতে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁরা। পপ আপে যোগ দিয়েছিলেন সিনেমা পরিচালক মেঘদূত রুদ্র। ফেসবুক পোস্টে দিলখোলা তারিফ করেছেন সেই খাবারের।
পিনাকী বলেন, "কলকাতার শীতকালে কাশ্মীরের তরুণরা আসেন। অনেক দিন ধরেই তাঁরা এখানে আসেন। তাঁদের সংস্কৃতিকে আরও বেশি করে জানতে হবে। তা হলে আমরা আরও ভাল করে একসঙ্গে থাকতে পারব। দরকার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন। খাওয়াদাওয়া এর একটা বড় মাধ্যম হতে পারে। বাংলার কাঁথা এবং কাশ্মীরের জামেবার মিলে দারুণ একটা জিনিস তৈরি হয়েছে। আমাদের এগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।"
ছবি সৌজন্য: পিনাকী গুহ