বিরাট কোহলি দেশে ফেরার পর ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল যে প্রথম টেস্ট ম্যাচে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর ভারতীয় ক্রিকেট দল হয়ত আর জয়ের সরণিতে ফিরতে পারবে না। কিন্তু, অ্যাডিলেড টেস্টে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ভারতীয় দলকে আরও একবার চাঙ্গা করেন অজিঙ্কা রাহানে। ক্যাঙারু ব্রিগেডের বিরুদ্ধে ভারতীয় ক্রিকেট দল ১-১ ব্যবধানে সিরিজ়ে সমতা ফিরিয়ে আনে। দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে ভারত ৮ উইকেটে জয়লাভ করে। এই ম্যাচ জয়ের পিছনে ছ'জন ক্রিকেটার নায়ক হিসেবে উঠে এসেছেন। আসুন, একনজরে ওই ৬ ক্রিকেটারের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক :
১. অজিঙ্কা রাহানে - বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে প্রথমত অজিঙ্কা রাহানে অধিনায়ক হিসেবে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন এবং অস্ট্রেলিয়াকে পরাস্ত করেন। এরপর ব্যাট হাতেও তিনি অনবদ্য পারফরম্যান্স করেন। ধামাকাদার গতিতে করেন সেঞ্চুরি (১১২ রান) এবং অজ়িদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে লিড দেওয়ার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। অস্ট্রেলিয়ার দাপুটে বোলিং আক্রমণের সামনে যারমধ্যে রয়েছেন স্টার্ক, কামিন্স এবং হ্যাজ়েলউড, তাঁদের বিরুদ্ধে শতরান করে রাতারাতি নায়ক হয়ে উঠেছেন রাহানে।
অজিঙ্কা রাহানে পঞ্চম ভারতীয় ক্রিকেটার যিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অজ়িদের বিরুদ্ধেই শতরান করলেন। এর আগে এমন কৃতিত্ব অর্জন করেছেন মহম্মদ আজ়হারউদ্দিন, সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (১ বার করে) এবং বিরাট কোহলি (৩ বার)। মেলবোর্ন টেস্টে ১১২ রান করার পাশাপাশি অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন এবং ভারতকে অসাধারণ একটা জয় উপহার দেন। আর সেকারণেই রাহানেকে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার দেওয়া হয়।
২. রবীন্দ্র জাদেজা - অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মেলবোর্ন টেস্ট ম্যাচে ভারতীয় ক্রিকেট দলের তারকা অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা বল করার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও কামাল দেখান। প্রথম ইনিংসে তিনি করেন ৫৭ রান। নিজের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করার পর তিনি হাওয়ায় ব্যাট ঘুরিয়ে তরোয়ালের খেলাও দেখান। অধিনায়ক রাহানের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি ষষ্ঠ উইকেটে ১২১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। প্রথম ইনিংসে ভারতীয় ক্রিকেট দল ৩২৬ রান তোলে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাদের ১৩১ রানের লিড ছিল। এই ম্যাচে রবীন্দ্র জাদেজা মোট তিনটে উইকেট শিকার করেছেন।
৩. জসপ্রীত বুমরাহ - জসপ্রীত বুমরাহের সামনে ব্যাট করাটা অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের কাছে রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বুমরাহ চার উইকেট নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও নেন জোড়া উইকেট। তবে যেভাবে তিনি স্টিভ স্মিথকে বোল্ড করেন, তাতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন। স্মিথ বোল্ড হওয়ার পরেই গোটা খেলার মোড়টা ঘুরে যায়। চলতি অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় জোরে বোলারদের মধ্যে জসপ্রীত বুমরাহ সবথেকে সফল হয়েছেন। দুটো টেস্ট ম্যাচে তিনি আটটি উইকেট শিকার করেছেন। বুমরাহের ইয়র্কার এবং বাউন্সার অজ়ি ব্যাটসম্যানদের রাতের ঘুম উড়ে গেছে।
৪. রবিচন্দ্রন অশ্বিন - চলতি অস্ট্রেলিয়া সফরে সবথেকে সফল বোলার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এখনও পর্যন্ত তিনি ১০টি উইকেট শিকার করেছেন। অশ্বিনের ঘুর্ণিতে ক্যাঙারু ব্রিগেড একেবারে নাজেহাল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে স্টিভ স্মিথ তো অশঅবিনের স্পিন একেবারে ধরতেই পারছেন না। এই সিরিজ়ে এখনও পর্যন্ত অশ্বিন স্মিথকে দু'বার আউট করেছেন। পাশাপাশি মেলবোর্ন টেস্টে তিনি পাঁচটি উইকেট শিকার করেছেন। অ্যাডিলেডেও তিনি পাঁচটি উইকেট নিয়েছিলেন। এভাবেই তিনি এই সিরিজ়ে মোট ১০টি উইকেট শিকার করেছেন।
৫. মহম্মদ সিরাজ - অ্যাডিলেড টেস্টে মহম্মদ শামি চোট পাওয়ার পর মেলবোর্ন টেস্টে অভিষেক হয় মহম্মদ সিরাজের। কেরিয়ারের প্রথম টেস্ট ম্যাচেই তিনি ধামাকাদার পারফরম্যান্স করেন। প্রথম ইনিংসে জোড়া উইকেট শিকার করার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনটে উইকেট তুলে নেন। এভাবে মহম্মদ সিরাজ মেলবোর্ন টেস্টে মোট পাঁচটি উইকেট শিকার করেছেন। সিরাজের গতি এবং লেংথের কাছে অজ়ি ব্যাটসম্যানরা পরাস্ত হয়েছেন।
৬. শুভমান গিল - মহম্মদ সিরাজের সঙ্গেই মেলবোর্ন টেস্টে অভিষেক হয়েছে দেশের তরুণ ক্রিকেটার শুভমান গিলের। তিনি ব্যাটিং পারফরম্যান্সে গোটা দেশের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। এই ম্যাচে পৃথ্বী শ'য়ের জায়গায় শুভমানকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি ওপেনার হিসেবে টেস্ট কেরিয়ার শুরু করেন। মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি ৪৫ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ইতিমধ্যেই তিনি নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটাই যে মিশেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স এবং জস হ্যাজ়েলউডের মারাত্মক বোলিংয়ের সামনে তিনি যথেষ্ট ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে গেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গিল নির্ভয়ে ব্যাট করে যান। বেশ কয়েকটা বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিনি রাতারাতি তারকা হয়ে উঠেছেন।