চলে গেলেন উড়ন্ত শিখ মিলখা সিং। স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বপ্ন দেখানো অ্যাথলিট। নিজের দেশ ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।
তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের একটা যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল। ভারতকে একটুর জন্য রোম অলিম্পিকে পদক এনে দিতে পারেননি। তাতে কি তিনি ভারতীয়দের মণিকোঠায় চিরস্মরণীয় হয়ে থেকে গিয়েছেন একটা মিথ হিসেবে।
চারবার এশিয়াডে সোনাজয় করে তিনি অসাধারণ সাফল্যের অধিকারী। খেলার জগতের বাইরে একটা পিছিয়ে থাকা স্পোর্টস থেকে তাঁর মতো জনপ্রিয়তা খুব কম লোকে পেয়েছে। যখন প্রচারের আলো খেলোয়াড়দের তাড়া করে বেড়াতো না, সেই সময় মিলখা ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তী।
তাঁর মৃত্যুতে গোটা দেশের সব ক্ষেত্রের মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বলিউড থেকে ক্রিকেট, প্রধানমন্ত্রী থেকে বিরোধী দলনেতা, সমস্ত রাজ্যের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি কে ছিলেন না তাঁর গুণমুগ্ধের তালিকায়।
তাই তো তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। কীভাবে তিনি দেশভাগের সময় বাবা-মা, দুই ভাইবোনকে খুন হতে দেখেছেন চোখের সামনে। তা মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে সিলভার স্ক্রিনের পর্দায়। তাঁর চরিত্রে অভিনয় করা ফারহান আখতারও তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর প্রিয়পাত্র ছিলেন। তাঁর দৌড়ে মুগ্ধ হয়ে উড়ন্ত শিখ নাম দেন তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান।
তাঁর স্ত্রী ভলিবলার নির্মলা কাউর মারা গিয়েছেন মাত্র পাঁচদিন আগে। করোনা আক্রান্ত হয়েই। প্রথম দফায় মিলখা করোনা মুক্ত হয়েছিলেন বলে কোভিড রিপোর্ট নিগেটিভ এসেছিল। পরে আবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে চতুর্থ স্থানে শেষ করেন তিনি। সেকেন্ডের ভগ্নাংশ কেড়ে নেয় প্রথম অলিম্পিক পদক জয়ের স্বপ্ন। কিন্তু দেশবাসীর কাছে তিনি হয়ে ওঠেন গ্লোবাল হিরো।
একটা সময় পাড়ায় পাড়ায় মিলখা সিং হওয়ার তালিম নেওয়া শুরু করে। তখনও ক্রিকেটের রমরমা শুরু হয়নি। ছিল বলতে হকি। তার সঙ্গে জুড়ে যায় অ্যাথলেটিক্স। সৌজন্যে মিলখা। তখন মিলখা বলতে ছেলে-বুড়ো-জওয়ান অজ্ঞান। মহিলা অ্যাথলিট হিসেবে পিটি ঊষার আবির্ভাবের আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন ভারতীয় অ্যাথলিটের একচ্ছত্র রোল মডেল।
পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের খেলোয়াড়রা ফিটনেস ও আদর্শ হিসেবে মিলখার নাম স্মরণ করেছেন। ফুটবল, হকি, ক্রিকেট এমনকী ভারোত্তোলন খেলোয়াড়ররাও অনেকেই তাঁকে আদর্শ করে এগোচ্ছেন বলে জানান। সার্বিক খেলায় এমন সর্বাত্মক প্রভাব আর কোনও খেলোয়াড় তৈরি করতে পারেননি। ইতিহাসের একটা অধ্যায়ের শেষ লিখিত হল তাঁর প্রয়াণে।