এই প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেমেছিল ভারতীয় দল। আর সেখানে ফের একবার হারের সম্মুখীন হল ভারতীয় ক্রিকেট দল। বিরাটের নেতৃত্বে ট্রফিহীন ভারত! টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হার হল ভারতীয় দলের।
কিছু বছর আগে থেকে ভারতীয় ক্রিকেটকে ফিরে দেখতে গেলে সাফল্য এলেও সেভাবে কোনও আইসিসির শিরোপা জোটেনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের। ২০১৪ সাল থেকেই শেষটা ভালো হচ্ছে না ভারতীয় ক্রিকেট দলের। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে যাত্রা শেষ হয়েছিল ভারতীয় দলের। ২০১৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে শেষ করেছিল ভারত। তবে এই পর্যন্ত ভারতীয় দলের ব্যাটন ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির কাছে। তবে এই বড় টুর্নামেন্টে ভালো ফল না করতে পারলেও, মহেন্দ্র সিং ধোনির ঝুলিতে রয়েছে তিনটি আইসিসি ট্রফি।
২০১৭ সাল থেকে ভারতীয় দলের ব্যাটন সামলেছেন বিরাট কোহলি। আর সেখান থেকেই আর চ্যাম্পিয়নশিপের মুখ দেখেনি ভারতীয় ক্রিকেট দল। চ্যাম্পিয়নশিপ অর্থাত আইসিসির ট্রফি। ২০১৭ সালে আইসিসির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির রানার আপ হিসাবে শেষ করেছিল ভারত। কোহলির ভারত হারে পাকিস্তানের কাছে। ২০১৯সালের বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপে অন্যতম সুযোগ ইংল্যান্ডের মাটিতে তৈরি হয়েছিল ভারতের জন্য। তবে সেখানেও সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ভারতীয় দল।
আর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও এমনটা হল বিরাট কোহলির নেতৃত্বে। হেরেই ফাইনালে মাঠ ছাড়তে হলো ভারতীয় ক্রিকেট দলকে। বল ও ব্যাট হাতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে খারাপ ভাবে পরাজিত করেছিল ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা। তবে কী বিরাট কোহলির নেতৃত্বে রয়ে যাচ্ছে কোনও ফাঁক! শুধু তাই নয় এই নিয়ে আইসিসির বড় টুর্নামেন্টের কাছাকাছি গিয়েও তিনটি টুর্নামেন্টে হারতে হলো বিরাটদের।
মঙ্গলবার টেস্ট ম্যাচ ড্র হবে এমনটা ধরে নিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অনুরাগীরা। তবে ষষ্ঠ দিন ও রিজার্ভ ডে-তে বিরাট সহ ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটে ভারতীয় দলের। কেন এই ব্যাটিংয়ে ধ্বস সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব। অবশেষে ৮ উইকেটে হারতে হলো ভারতকে। এই উইকেটেই ব্যাট করে গেলেন ডেভন কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসনরা। তবে কেন পারলেন না বিরাট কোহলি ও পূজারারা। এই পিচেই বল হাতে দুরন্ত পারফর্ম করলেন কাইল জেমিসন, টিম সাউদিরা। তবে কেন পারলেন না বুমরা-ঈশান্তরা। প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দুই দলের জন্যই এটি অ্যাওয়ে গ্রাউন্ডে খেলা।
মঙ্গলবার খেলার পঞ্চম দিনে ভারতের হয়ে ক্রিজে ছিলেন বিরাট কোহলি ও চেতেশ্বর পূজারা। ভারতীয় দল এগিয়ে ছিল ৩২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে এখনও বাকি ভারতের। তারপর রান তাড়া করবে উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড। ভারতের স্কোর ছিল পঞ্চম দিনের শেষে ৬৪ রানে ২ উইকেট। আর সেখান থেকে শুরু করে প্রথমেই বিপাকে পড়ে গেল ভারতীয় ক্রিকেট দল। প্রথমেই বিরাট কোহলি ও চেতেশ্বর পূজারার উইকেট হারাল ভারত। তারপর ফিরে গেলেন রাহানেও। মধ্যাহ্নভোজ বিরতি পর্যন্ত ভারতের স্কোর ১৩০ রানে ৫ উইকেট। ভারতের হয়ে ব্যাট করছিলেন জাদেজা ও পন্থ। ৯৮ রানে এগিয়েছিল ভারত। তবে তাঁরাও পারলেন না এই ব্যাটিং বিপর্যয় আটকাতে। ব্যাট হাতে পন্থ কিছুটা ভালো খেললেও বাকিরা পারলেন না।
পঞ্চম দিনে ৩০ ওভার ব্যাট করেছিল ভারত। আর ষষ্ঠ রিজার্ভ ডে-তে ৩৫.৫ ওভারে আউট হন বিরাট। দিনের শুরুতে মাত্র ৬ ওভারের মাথায় ১৩ রান করে ফেল কাইল জেমিসনের বলে সাজঘরে ফেরেন বিরাট। একই সঙ্গে জেমিসনকে উইকেট দেন চেতেশ্বর পূজারাও। একজন উইকেটকিপারের হাতে ও আরও একজন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন বুধবার খেলার শুরুতেই। তারপর মাঠে খেলছিলেন অজিঙ্কা রাহানে ও ঋষভ পন্থ। আর ৪০ ওভারের মাথায় পন্থও সুযোগ দেন কাইল জেমিসনকে। নিউজিল্যান্ড এই পেসারের বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ঋষভ। তবে সেই ক্যাচ মিস করেন নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডার।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭০ করে অলআউট হওয়ায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের টার্গেট ১৩৯ রান। বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট পেলেন টিম সাউদি। ৩ উইকেট পেলেন ট্রেন্ট বোল্ট। ২ উইকেট পেয়েছেন কাইল জেমিসন ও একটি উইকেট পান নেল ওয়াগনার।
তারপর ১৩৯ রান তাড়া করতে নামে নিউজিল্যান্ড আর সেখানে সব কিছুই নির্ভর করছিল ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও বোলারদের ওপর। তবে এতটা কম রান নিয়ে এত ওভার কীভাবে লড়বে ভারতীয় দল সেই নিয়েই ছিল চিন্তা। আর জয় দিয়েই শেষ করল নিউজিল্যান্ড দল। ৯ রানে লাথামকে ফিরিয়েছিলেন অশ্বিন। তারপর দ্বিতীয় উইকেটটিও পান অশ্বিন। ১৯ রানে ফেরেন কনওয়ে। তবে তারপর আর নিউজিল্যান্ডের দুই অভিজ্ঞকে নারাতে পারেনি ভারতীয় বোলাররা। ৫২ রানের অপূর্ব অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জেতান ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসন। ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন রস টেলর। ১৪০ রানে ২ উইকেটে শেষ করে নিউজিল্যান্ড। ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় কিউয়িরা। আর এই ম্যাচ জিতে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম একটি রেকর্ড করে রাখলো উইলিয়ামসনের দল। প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে বিশ্বসেরা হল নিউজিল্যান্ড।