আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC 2023) এর ফাইনাল ম্যাচ রবিবার শেষ হয়েছে। দুই বছর ধরে চলা ডব্লিউটিসি-র এই দ্বিতীয় মরশুমের ফাইনাল ম্যাচে ভারতীয় দল লজ্জার হার হারতে হয়েছে ভারতীয় দলকে। লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত এই ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া দল ২০৯ রানে জিতেছে। ভারতীয় দল ২০১৩ সালে শেষবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল। এক দশক পর প্রথমবার আইসিসি ট্রফি জেতার সুযোগ ছিল, কিন্তু অনেক ভুল সিদ্ধান্ত এবং কিছু ত্রুটির কারণে তা হয়নি। আসুন জেনে নিই WTC ফাইনালে ভারতীয় দলের ৫টি বড় কারণ...
আইপিএলের পর বিশ্রাম পাচ্ছেন না
এই WTC ফাইনালের ঠিক আগে, ভারতীয় খেলোয়াড়রাও প্রায় দুই মাস ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (IPL) খেলেছে। এই মরশুমে আইপিএল চলছিল ৩১ মার্চ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত। এবার আইপিএল ফাইনালে গুজরাত টাইটান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় চেন্নাই সুপার কিংস। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ২৯ মে আইপিএলের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
এই টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পরপরই ভারতীয় ক্রিকেটাররা লন্ডনে চলে যান। আইপিএলের ঠিক এক সপ্তাহ পরে অর্থাৎ ৭ জুন থেকে শুরু হয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। ফলে টানা দুই মাস আইপিএল খেলার পর খেলোয়াড়রা বিশ্রাম পাননি। তার ঠিক এক সপ্তাহ পর তাদের ৫ দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলতে হয়েছে। এটা অবশ্যই খেলোয়াড়দের জন্য খুব কঠিন।
পিচ বুঝতেই পারেননি রোহিত, টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত
ম্যাচে টসে জেতে ভারতীয় দল। টসে জিতে শুরুতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। টসের সময় রোহিত বলেছিলেন, ‘পিচে প্রচুর ঘাস রয়েছে, তাই ফাস্ট বোলাররা সাহায্য পাবেন।‘ রোহিতের বক্তব্য থেকে মনে হয়েছিল যে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিন্তু ম্যাচ যত এগোতে থাকে, ততই পিছিয়ে পড়তে থাকে ভারত। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ৩ উইকেট হারায় ৭৬ রানে। কিন্তু এর পর স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেড চতুর্থ উইকেটে ২৮৫ রানের জুটি গড়ে দলের স্কোর ৪৬৯ রানে নিয়ে যান। ফলে এটা বলা যায় যে কোচ রাহুল দ্রাবিড় ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা পিচ বুঝতেই পারেননি। টসে জিতে ভারতীয় দল যদি আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে হয়তো ব্যাপারটা অন্যরকম হতে পারত। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে বড় স্কোর করা কঠিন হতে পারত।
আরও পড়ুন: ১০ বছরে কতবার ICC ট্রফির ফাইনালে হারল ভারত? অস্ট্রেলিয়া জিতল ৩ বার
টপ অর্ডার ফ্লপ
ভারতীয় দলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হল টপ অর্ডারের ব্যাটিং। দুই ইনিংসেই খেলতে পারেননি ওপেনার শুভমান গিল (১৩, ১৮)। অধিনায়ক রোহিত (১৫, ৪৩) নিজে উভয় ইনিংসে একটি হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারেননি। বিরাট কোহলিও (১৪, ৪৯) ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারেননি। চেতেশ্বর পূজারা, যিনি কিছুদিন ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলছিলেন, তিনিও ব্যর্থ হন দুই ইনিংসেই। প্রথম ইনিংসে তিনি করেন ১৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ রান করে আউট হন। দুই ইনিংসেই একাই লড়তে দেখা গেছে অজিঙ্কা রাহানেকে (৮৯, ৪৬)।
আরও পড়ুন: WTC চ্যাম্পিয়ন হলে মালামাল হতে পারেন রোহিতরা, কত টাকা পাবে চ্যাম্পিয়নরা?
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে বেরোতে পারেননি খেলোয়াড়রা
আইপিএল-এর পর ভারতীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে এই ডব্লিউটিসি ফাইনালে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল তারা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে মান্সিকভাবে বেরিয়ে আসতে পারেনি। বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা উভয় ইনিংসেই ভুল শট নির্বাচন করেছেন এবং উইকেট ছুড়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সুইপ শট খেলতে গিয়ে আউট হন ক্যাপ্টেন রোহিত, কোহলি বাইরের বল খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন। পূজারাও বাউন্স করা বলটিকে আপার কাট মারতে গিয়ে উইকেট হারান। ভারতীয় খেলোয়াড়দের এমন অনেক শট ভুল হয়েছে।
অশ্বিন বাইরে বসা
টেস্ট ক্রিকেটে এক নম্বর বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিন এই ফাইনাল ম্যাচে দলের বাইরেই ছিলেন। অশ্বিনকে প্লেয়িং-১১-এ সুযোগ দেননি অধিনায়ক ও কোচ। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু থেকেই অনেক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। সুনীল গাভাস্কার সহ অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তি এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন। অশ্বিনকে সুযোগ দিলে এই ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারত। ওভালের পিচ গত ৩ দিনে স্পিনারের জন্য সহায়ক ছিল। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট নেওয়া স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৩ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার নাথান লায়নও প্রথম ইনিংসে মাত্র ১ উইকেট পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসেও অসাধারণ বল করে ৪ উইকেট নেন।