ভারতে এবছরের টোকিও অলিম্পিকে যাচ্ছেন প্রায় ১০০-রও বেশি অ্যাথলিট। দেশের বিভিন্ন কোন থেকে যাচ্ছেন বিভিন্ন অ্যাথলিটরা। বিভিন্ন ইভেন্টে রয়েছেন তাঁরা। আর সেই মতো বাংলা থেকে রয়েছেন তিন প্রতিনিধি। তিন অ্যাথলিট এবারের টোকিও অলিম্পিকে দেশের হয়ে যাচ্ছেন অংশগ্রহণ করতে। বাংলার প্রতিভাশীল এই তিন অলিম্পিয়ান নিজেদের যোগ্যতায় অবশেষে এই ঐতিহ্যশীল ইভেন্টে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন। দুজন একবারেই প্রথমবার অলিম্পিকে যাবেন, আর অন্য জন এই নিয়ে দ্বিতীয় বার যাচ্ছেন অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করতে।
অলিম্পিকে বাংলা থেকে তিন প্রতিনিধি হলো সুতীর্থা মুখোপাধ্যায় তিনি ভারতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করবেন টেবিল টেনিস দলে। অতনু দাস আর্চারিতে প্রতিনিধিত্ব করবেন ভারতের হয়ে ও প্রণতি নায়েক যাচ্ছেন জিমন্যাস্টিকে।
সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়
২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসের গোল্ড কোস্টে মহিলা টেবিল টেনিস দলের হয়ে স্বর্ণ পদক জিতেছিলেন বাংলার মেয়ে সুতীর্থা। ছোট থেকেই টেবিল টেনিস জগতে বেশ নাম করতে শুরু করেছিলেন বর্তমানে ২৫ বছরের এই বাঙালি অ্যাথলিট। বাংলার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটিতে জন্মেছিলেন সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়। নিজের কেরিয়ারে ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন বাংলার এই তারকা প্যাডলার।
সম্প্রতি বাংলার হয় খুব একটা খেলেননি এই বাঙালি, হরিয়ানার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতেন সুতীর্থা তবে সৌম্যদীপ রায় ভারতীয় টেবিল টেনিস দলের কোচের এই বাঙালি ছাত্রী ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে টেবিল টেনিস জগতে। মাঝে একটি বিতর্কিত অধ্যায় জড়ালেও নিজেকে সেখান থেকে তুলে এনেছেন বাংলার এই প্রতিভাবান। এখন সুতীর্থা একটাই লক্ষ্য অলিম্পিক গেমস।
টোকিও অলিম্পিকে পদক দেশকে দেওয়া এখন টার্গেট সৌম্যদীপের ছাত্রীর। ইউৎ অলিম্পিকে খেলেছেন এই টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। তবে মার্চ মাসে দোহায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ভালো পারফর্ম করে অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করেছেন তিনি। এখন আর নৈহাটিতে থাকা হয়না সুতীর্থার। প্র্যাকটিসের জন্য কলকাতাই তার হোম টাউন হয়ে উঠেছে। প্রথমে টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে সুতীর্থার হাতেখড়ি হয়েছিল মিহীর ঘোষের হাত ধরে। তারপরই সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। বাংলা থেকে সুতীর্থার নাম ইতিমধ্যেই অর্জুন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। তবে এখন সবকিছু বাদ দিয়ে টোকিও অলিম্পিকে পাখির চোখ করে রেখেছেন এই টেবিল টেনিস খেলোয়াড়।
অতনু দাস
আর্চারিতে নিজের কেরিয়ারের প্রথম থেকেই ছাপ ফেলে এসেছেন বাংলার প্রতিভাবান তীরন্দাজ অতনু দাস। অতনু এখন ভারত পেট্রোলিয়ামে কর্মরত। তবে নিজের কেরিয়ারকে প্রকাশ করে এগিয়ে চলেছেন এই তীরন্দাজ। আর কিছুদিনের মধ্যেই অলিম্পিকের লনে তীর মারবেন বাংলার ঘরের ছেলে অতনু। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২০০৮ সালে অভিষেক ঘটেছিল অতনুর।
২০১৬ রিও অলিম্পিকে টপ ১৬ এর মধ্যে ছিলেন বাংলা ও ভারতের এই আর্চার। ইতিমধ্যেই ২০২১ গুয়াতেমালা তে হওয়া আর্চেরি বিশ্বকাপে ছেলেদের বিভাগে স্বর্ণ পদক জিতেছেন অতনু একইসঙ্গে ২০২১ প্যারিস ওপেনের ফাইনালে স্বর্ণ পদক জেতেন তিনি একই সঙ্গে একাধিক খেতাব জিতেছেন বাংলার তীরন্দাজ।
বিশ্ব আর্চারিতে ইতিমধ্যেই তিনি নিজের ছাপ ফেলেছেন বিশ্বকাপে রয়েছে দশটি পদক একইসঙ্গে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি পদক রয়েছে তার। রিকারভ মেন বিভাগে বিশ্ব ব়্যাঙ্কিংয়ের ৮ নম্বরে তিনি। তার স্ত্রী বিশ্বকাপে স্বর্ণ পদক পাওয়া দীপিকা কুমারি। এবার অলিম্পিকে স্বর্ণপদক লক্ষ্য অতনুর। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই টোকিওর উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন বাংলার প্রতিভাশালী অ্যাথলিট।
প্রণতি নায়েক
এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমনাস্টিক চ্যাম্পিয়নশীপে নিজের দুরন্ত পারফরম্যান্স দিয়ে টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করছেন বাংলার মেয়ে প্রণতি নায়েক। ২৬ বছর বয়সী প্রণতি জিমনাস্টিকে যেতে চলেছেন টোকিওতে। ২০১৯ সালে এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমনাস্টিকে চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের পিংলার মেয়ে প্রণতি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রণতি ইতিমধ্যেই নিজের প্রতিভা জাহির করেছেন বিশ্ব দরবারে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তার বাবা ছিলেন বাস ড্রাইভার। অভাব ও বেশ কষ্টের মধ্যেই দিন কাটছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জিমন্যাস্টের। এক সময় মুরি খেয়ে দিন কাটতো তাঁর। মুরি খেয়েই প্র্যাকটিস চালিয়ে যেতেন তিনি।
তবে সেখান থেকেও নিজেকে তৈরি করে এনেছেন এই মহিলা প্রতিভা। মিনারা বেগমের তত্ত্বাবধানে নিজের ট্রেনিং করতেন ঝাড়গ্রামের পিংলার প্রণতি নায়েক। অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করা ছিল তার কাছে স্বপ্নের মতো এবার স্বপ্নপূরণ করতে যাবেন বাঙালি জিমন্যাস্ট। ২৬ বছর বয়সী ভারতের দ্বিতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট হিসাবে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে যাচ্ছেন প্রণতি।
মহিলাদের অল রাউন্ড ইভেন্টে ভালো ফল করার পরে নিজের যোগ্যতা অর্জন করেন প্রণতি নায়েক। গত ১৮ বছর ধরে মিনারা বেগমের কাছে অ্যাথলিটিক্স প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন প্রণতি। সাইতে প্রশিক্ষণ করতেন প্রণতি নায়েক। এবারে সেই সব পরিশ্রমের ফলের পালা। ২০২১ টোকিও অলিম্পিকে এবার দেখতে হবে জিমনাস্টিকে এ ভারতকে পদক দিতে পারেন কিনা এই বাঙালি মেয়ে।