এটা তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। মোবাইল, ইন্টারনেট ছাড়া এক পা-ও ফেলা যায় ন। তবে তা ব্য়বহার নিয়ে সব ময় সতর্ক থাকা দরকার। তথ্য চুরি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের অভিযোগ উঠে। নিজেদের তথ্য কতটা সুরক্ষিত, সে নিয়ে সচেতনাতা আরও বাড়াতে ২৮ জানুয়ারি পালিত হয় ডেটা প্রাইভেসি ডে (Data Privacy Day) হিসেবে।
তথ্য নিয়ে প্রশ্ন
ক্যালেন্ডারের এই দিনটি কোনও ছুটি না হলেও একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে দিনটির। আজ ডেটা প্রাইভেসি ডে (Data Privacy Day)। অর্থাৎ আমাদের সমস্ত ব্যক্তিগত গোপন তথ্য কতটা সুরক্ষিত সেই নিয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি বিশেষ দিন বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তির বিশেষজ্ঞরা।
বাড়ছে অপরাধ
প্রযুক্তির যুগে বিজ্ঞান উন্নততর। সব কিছুই আজ অনলাইন মাধ্যমে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর সেই সুযোগে অপরাধ দুনিয়াতে অপরাধের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন। আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি সামান্য ভুলচুক হলেই চলে যেতে পারে অন্য কারও কাছে। অন্য কেউ কন্ট্রোল করতে পারে আমাদের ডিভাইস এবং অজান্তেই অপরাধ দুনিয়ায় প্রবেশ করতে পারি আমরাও।
শঙ্কা সব জায়গায়
কিংবা সেই অপরাধীদের পাতা ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হতে পারে আট থেকে আশি প্রত্যেকেই। কিন্তু জানেন কী কারা বেশি মাত্রায় শিকার হন এই সাইবার এবং ডেটা প্রাইভেসি ভায়োলেশনের? এমনই জানাচ্ছিলেন আইইএমল্যাবস-এর টিফ টেকনিক্যাল অফিসার ঋত্ত্বিক লাল।
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য
তিনি জানান, এনসিআরবি (NCRB or National Crime Records Bureau)-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রবীণ মানুষজন এবং মহিলারাই সবথেকে বেশি এই ক্রাইমের শিকার হয়ে থাকেন। গত দু'বছরে যেই সংখ্যা বেড়েছে প্রায় অনেকটা। এনসিআরবি-র পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২০-তে পশ্চিমবঙ্গে সাইবার ক্রাইমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। ২০২০-তে ৭১২টি সাইবার ক্রাইম কেস পাওয়া গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। যার মধ্যে কলকাতায় ১৭২টি কেস পাওয়া যায়।
আক্রান্ত প্রবীণ, মহিলা
রাজ্যের মধ্যে মহিলা এবং প্রবীণদের সঙ্গে হওয়া ক্রাইমের সংখ্যা ৩৪৪। এর মধ্যে গোপন তথ্য ফাঁস, জালিয়াতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় বদনাম করার চেষ্টা, ফিশিং, স্কিমিং সমেত আরও বহু ক্রাইম মিলিত রয়েছে। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায় যে ২০২০ সালে সবক্ষেত্রেই সাইবার ক্রাইমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঋত্ত্বিক লালের মতে, কারণ হিসেবে যা পাওয়া যাচ্ছে তার মূলে রয়েছে লকডাউন এবং তার জন্য পুরো দেশের ওয়ার্ক ফ্রম হোম এবং অনলাইন ফেসিলিটির হঠাৎ বৃদ্ধি। লকডাউনে বেকারত্ব বাড়তে থাকায় অপরাধীরা ভুলপথে উপার্জনের রাস্তাই বেছে নেন বলে মনে করা হচ্ছে এবং যার জন্য শহর এবং রাজ্যজুড়ে বাড়তে থাকা সাইবার ক্রাইমের সংখ্যাও।
২০২০ সালে গোটা দেশে শুধু মাত্র মহিলাদের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইমের সংখ্যা ছিল ৪,০২২। তা ছাড়াও ব্যক্তিগত তথ্য ভায়োলেশনের ক্রাইমের সংখ্যা ছিল ১,৫৫২। এনসিআরবি (NCRB or National Crime Records Bureau)-র থেকে ২০২১-এর তথ্য সম্পূর্ণভাবে পাওয়া যায়নি। কিন্তু ২০২০-এর তুলনায় ২০২১ এ যে সাইবার ক্রাইম এবং ডেটা প্রাইভেসি ভায়োলেশনের ক্রাইম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
সাইবার অপরাধের এই ক্রমবর্ধমান গ্রাফ এটা বুঝতে বাধ্য করছে যে সব রকম ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের আরও তৎপর এবং সতর্ক হতে হবে।
প্রবীণ মানুষরা যাতে বেশি অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করার সময় আরও সতর্ক থাকতে হবে, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবং মহিলাদের মধ্যেও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আজকের বিশেষ দিনে দাঁড়িয়ে এই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।