স্টেশনটি চালু হয়েছিল ১৯৬০ সালে। কিন্তু তার পর হঠাতই, চালু হওয়ার ৭ বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের গা ঘেঁষে তৈরি ছোট্ট স্টেশনটি। তার পর কোনও এক অজানা আতঙ্কে একটানা ৪২ বছর এই স্টেশন বন্ধ পড়েছিল।
হানাবাড়ির মতো শুধু পড়ে ছিল পাকা স্টেশন বিল্ডিংটা। ভারতীয় রেলের নথিতে, রেলের বোর্ডে এই স্টেশনের নাম বেগুনকোদর।
অনেকে তো এই স্টেশন চত্ত্বরে কোনও কিশোরীর কান্নাও শুনেছেন বলে দাবি করেছেন।
শোনা যায়, আজ থেকে ৫৪-৫৫ বছর আগে একদিন মধ্যরাতে এখানে খুন হন তৎকালীন স্টেশন মাস্টার ও তাঁর স্ত্রী। পরে স্টেশনের কাছের একটি কুয়োর মধ্যে থেকে তাঁদের দেহ উদ্ধার করা হয়। তবে এ সবই শোনা কথা।
সেই সময় থেকেই নাকি এই স্টেশনে ‘অশরীরী’ উপদ্রব শুরু হয়। শোনা যায়, ওই ঘটনার পরই এই স্টেশন ছেড়ে চলে যান বাকি রেলকর্মীরা। কর্মীর অভাবে একটা সময় বন্ধ হয়ে যায় এই স্টেশন, এখানে ট্রেনের থামাও বন্ধ হয়ে যায়।
পুরুলিয়ার জেলার কোটশীলায় অবস্থিত অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা এই বেগুনকোদর স্টেশন। যদিও বাংলা ও ভিন রাজ্যের অসংখ্য পর্যটক এটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার চেয়ে ‘ভূতুড়ে স্টেশন’ হিসাবেই এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে যান।
১৯৬৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। ২০১০ সালে শুধু প্যাসেঞ্জার হল্ট হিসেবে ফের চালু হয় বেগুনকোদর স্টেশন। পুরনো স্টেশন বিল্ডিংকেই নতুন করে রং করে চালু করা হয়।
এখন তা হলে বেগুনকোদর স্টেশনের পরিস্থিতি কি স্বাভাবিক হয়েছে? এখনও সন্ধ্যার পর ফাঁকাই পড়ে থাকে স্টেশন বিল্ডিং। স্টেশনের ত্রিসীমানায়ও কেউ আসেন না। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এই স্টেশনে থামে রাঁচি-চন্দ্রপুরা-ধানবাদ প্যাসেঞ্জার। এর পর আর কোনও ট্রেনের স্টপেজই দেওয়া হয়নি এখানে।
বেগুনকোদরে নেই কোনও রেলের স্থায়ী কর্মী। সন্ধের পরে আর কেউ আসেন না এখানে। রহস্যের টানে, গা ছমছমে ভিডিয়ো তৈরির রসদ খুঁজতে বেগুনকোদর স্টেশনে শীতের সন্ধেবেলায় ভিন জেলা বা রাজ্যের মানুষজন আসেন মাঝেমধ্যে।