চায়ের দোকানে গোটা ভারত। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া স্টেশনে গিরিধর বিশ্বাসের ব্যতিক্রমী চায়ের দোকান।
এই চায়ের দোকানে চা খেতে এলে অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে। যেমন দেশ স্বাধীন হওয়া থেকে এখনও পর্যন্ত কে কে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী হয়েছেন, তাঁদের নামধাম। কার্যকালের সময়ও জানা যাবে। চায়ের দোকানটা যেন রাজনৈতিক ডিকশনারি!
সাধারণত আমরা চায়ের দোকানে সিনেমার পোস্টের ছবি দেখে অভ্যস্ত সেখানে গিরিবাবু ব্যতিক্রমী। সত্যিই এক অন্য মানসিকতার মানুষ।
তিনি বলেন, অনেক ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবী, শিক্ষক আসেন দোকানে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসেন আমার চায়ের দোকানে।
তিনি বলেন, যাঁরা আসেন, তাঁরা ছোট্ট দোকান থেকে কিছু না কিছু শিক্ষা নিয়ে যান। সবাই এই কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এখন প্রশ্ন কে এই গিরিবাবু? গ্রামের বাড়িতে বাস করতেন, মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারে বাস। হঠাৎ একদিন ডাকাতি হয়ে গেল বাড়িতে। প্রচন্ড মারধর করে ডাকাতদল।
সর্বস্ব নিয়ে যায় ডাকাতরা। মারাত্মক জখম অবস্থায় ভর্তি হন কলকাতার নীলরতন মেডিকেল হসপিটালে। ফলে পরিবার হয়ে যায় নিঃস্ব।
আর ছোটবেলা থেকেই গিরিবাবুর চায়ের নেশা ছিল। এই অসুস্থ অবস্থায় কলকাতায় পয়সার অভাবে এক দিন কোনও দোকানদার চা দেয়নি।
তিনি বলেন, সেই দিনের সেই ঘটনার পর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি আমি সুস্থ হয়ে একটা আদর্শ চায়ের দোকান করব। আজ আমার চায়ের দোকান ২৩ বছরে পড়ল।
যে সব ভিক্ষাজীবী, গরিব ও অসহায় মানুষ পয়সার অভাবে চা কিনতে পারেন না, তাদের আমি বিনা পয়সায় চা খাওয়াই।
আজ মাজদিয়া স্টেশন আলোকিত করে রয়েছে গিরিবাবুর চায়ের দোকান। এমনকী করোনা আবহে যখন চায়ের দোকান বন্ধ ছিল, তখনও গিরিবাবু বাড়ি থেকে চা নিয়ে এসে অসহায় মানুষদের খাইয়েছেন নিজের জীবনের সেই কথা ভেবে।
আর কথা বলতে গিয়ে চোখ বেয়ে পড়ে জল। আজ সেদিনের চা খেতে না-পাওয়া গিরিবাবু তাঁর দোকানে সারা ভারতকে হাজির করেছেন।
তাই তো ছাত্রছাত্রীরা চায়ের দোকান দেখতে উৎসুক হয়ে খাতায় নোট করে নিয়ে যায়। যা ওদের কাজে লাগে।
গিরিবাবু বলেন, অনেক কষ্ট করে মণীষী ও মন্ত্রীদের ছবি আমার চায়ের দোকানে লাগাতে পেরে আমি মানসিক ভাবে খুশি।