দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম গুজরাতে সোমনাথ মহাদেবের মন্দির। সেই মন্দিরেই ঘটল এক অবাক করা কাণ্ড। মন্দিরের নীচে পাওয়া এল এক তিলতলা ভবনের অস্তিত্ব। আইআইটি গান্ধীনগর ও প্রত্নতত্ত্ব দফতরের গবেষণায় এই রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। (আহমেদাবাদ থেকে গোপী ঝাঁঝরের প্রতিবেদন। )
আইআইটি গান্ধীনগর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ২০১৭ সালে গবেষণা করে জানতে পারে দেশের কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাসের প্রতীক জ্যোতির্লিঙ্গ সোমনাথ মহাদেবের মন্দির চত্বরে একটি তিন তলা এল-আকারের ভবন মাটির নীচে চাপা পড়েছে।
২০১৭ সালে সোমনাথ মন্দির ট্রাস্টের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রভাস পাটন এবং সোমনাথে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে গবেষণা করার অনুরোধ করেছিলেন। সেই পরামর্শের পরেই আইআইটি গান্ধীনগর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ইতিহাসের পাতাগুলি উল্টে সোমনাথ ট্রাস্টকে অনেক রহস্যজনক তথ্য দিয়েছে। আইআইটি গান্ধীনগর পক্ষ থেকে সোমনাথ ট্রাস্টকে এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল।
সোমনাথ মন্দিরের ম্যানেজার বিজয় চাভদা বলেন যে এই রিপোর্টের উদ্দেশ্যই ছিল সোমনাথের ইতিহাস অনুসন্ধান করা। এই প্রতিবেদনে সোমনাথ ও প্রভাস পাটনের মোট ৪ টি অঞ্চলে জিপিআর অনুসন্ধান পরিচালিত হয়। যার মধ্যে সোমনাথ মন্দিরের দিগ্বিজয় ফটক থেকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের স্ট্যাচু ও বৌদ্ধ গুহার আশেপাশ অঞ্চলও অর্ন্তভুক্ত ছিল।
এ সংক্রান্ত একটি ৩২ পাতার প্রতিবেদন সোমনাথ ট্রাস্টকে মানচিত্র সহ দেওয়া হয়েছিল। এই প্রতিবেদন অনুসারে, সোমনাথের প্রভাস পাটন, গোলক ধামের সামনের দিকে গীত মন্দির থেকে হিরণ নদীর তীর পর্যন্ত মাটির অভ্যন্তরে একটি পাকা ভবন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও দিগ্বিজয় গেট থেকে সর্দার প্যাটেলের মূর্তির কাছে একটি কংক্রিট নির্মাণের সন্ধান পাওয়া যায়, যা আগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
এখানে মাটির নীচে একটি তিনতলা ভবনের উল্লেখ রয়েছে, যার মধ্যে প্রথম তলটি আড়াই মিটার, দ্বিতীয় তলটি ৫ মিটার এবং তৃতীয় তলটি .৩০ মিটার গভীরতার। এই মুহুর্তে, যেখানে সোমনাথে আসা তীর্থযাত্রীদের সিকিউরিটি চেক করা হয়, সেখানেও এমনি একটি ভবন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আইআইটি গান্ধীনগরের বিশেষজ্ঞরা এখানে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়বহুল একটি বড় মেশিন বসিয়েছিলেন। সেই মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল। মেটাল ডিটেক্টরও ব্যবহার করা হয় এবং এই জায়গাগুলিতে জিপিআর অনুসন্ধান ২ মিটার থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত করা হয়েছিল। নীচে থেকে যে কম্পনগুলি আসছিল সেগুলি গবেষণা করেই এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
বলা হয় গুজরাতের ভেরাওয়ালে অবস্থিত সোমনাথ মন্দির স্বয়ং চন্দ্রদেব তৈরি করেছিলেন ঋকবেদ, স্কন্দপুরাণ এবং মহাভারতেও এই মন্দিরের মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। ইতিহাসের একাধিকবার বৈভবশাী সোমনাথ মন্দিরের ওপর আক্রমণ হানার উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই সোমনাথের অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, পুনর্নির্মাণের মাধ্যে দিয়ে থেকে গিয়েছে সোমনাথ।
আরব সাগরের তীরে অবস্থিত আদি জ্যোতির্লিঙ্গ সোমনাথ মহাদেব মন্দিরটি অনন্য। এই তীর্থস্থানটি দেশের প্রাচীনতম তীর্থস্থানগুলির মধ্যে একটি। ইতিহাসবিদদের মতে, সমৃদ্ধ ও বৈভবশআলী হাওয়ার কারণে সোমনাথ মন্দিরের ওপর বারবার মুসলিম হানাদার এবং পর্তুগিজদের নজর পড়েছে। এছাড়াও, এটি অনেকবার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। মাহমুদ গজনভির এই মন্দিরে আক্রমণের ইতিহাস রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, মন্দিরের মাটির নীচে পাওয়া প্রাচীন নির্মাণ সোমনাথের মহিমা এবং মাহাত্ম্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। যদি এই জমিতে খনির কাজ করা হয় তবে মানব সভ্যতার আরও অনেক অজানা ইতিহাস পাওয়া যেতে পারে, যেমন লোথাল, ধৌলভীরা এবং ভল্লিপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলি বিশ্বের সামনে এসেছে।