নদিয়ার তাহেরপুরের মণীন্দ্র বিশ্বাস। শুধু পেটের টানে নয় ৪০ বছর ধরে সতীনাথ, মানবেন্দ্র, মান্না দের সৃষ্টি বাঁচিয়ে রাখতে ভিক্ষা করেন ট্রেনে।
কর্মক্ষেত্র হোক বা ভ্রমণ। দূরের পথ হোক বা কাছের পথ, গন পরিবহণের মধ্যে বিশেষত ট্রেন পথে একঘেয়েমি দূরে সরিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য যাত্রীদের মানসিক পরিতৃপ্তি ঘটে গান শুনিয়ে ভিক্ষা করা প্রতিভাবান গুণী শিল্পীদের। যার মধ্যে অনেকেই দৃষ্টিহীন।
বর্তমানে করোনার সংক্রমণের জন্য ট্রেন বন্ধ ছিল। বর্তমানে দু-একটি চললেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। তাই উপার্জনের উদ্দেশ্যেই মূলত ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিয়েছেন অনেকেই। তবে ব্যস্ততার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই, তা গভীর ভাবে শুনে বোধগম্য হয় না, কে গাইছেন।
তবে এমন কিছু কণ্ঠ আছে যা নামিদামী শিল্পীদের মতোই কণ্ঠস্বর। মনে গেঁথে থাকে বহুদিন বাদেও।
করোনার ছোবলে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু করে, এখনও পর্যন্ত এরকম অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে অনাহারে-অর্থাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এই রকম এক প্রতিভা তাহেরপুরের ষাটোর্ধ্ব মণীন্দ্র বিশ্বাস। যিনি ছোটবেলা থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হিসেবে রোজগারের প্রধান উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ট্রেন-পথে গান শুনিয়ে উপার্জন।
তবে প্রতিদানে গান শোনানোর উদ্দেশ্যে তিনি আকাশবাণী বা অন্যান্য এফএম রেডিও স্টেশনের প্রচারিত পুরনো দিনের গান শোনাতেন। সংগীতের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এই প্রতিভাবান শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মান্না দের মতো শিল্পীদের গাওয়া গান অভ্যাস করতেন নিয়মিত। পথে সচরাচর ক্লাসিক্যাল গানের কণ্ঠস্বর শোনা যায় না।
ব্যবসায়িক ভাবে গলার উপর অত্যন্ত জোর দিয়ে এবং দীর্ঘ অনুশীলনের ওপর আস্থা রাখেন না অনেকেই। তাই আধুনিক প্রযুক্তির ওপর ভরসা করে ট্র্যাকে মিউজিক চলার সাথে গলা মেলান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিল্পীরা।
মণীন্দ্রবাবু কিন্তু হারমোনিয়ামের স্বরলিপি মিলিয়ে, সুর তাল ছন্দের সঠিক ব্যবহার করে, অত্যান্ত আন্তরিকতার সঙ্গে পুরনো দিনের গান এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখার অদম্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চাকদার বিপাশা বসু হোক বা রানাঘাটের রানু মন্ডল সহজেই বাজিমাত করেছেন আধুনিক জনপ্রিয় সিনেমার গান করে। কিন্তু কিন্তু সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজও আঁকড়ে রয়েছেন পুরনো গানেই।