রাজনীতির কঠিন বাস্তবতার মাঝে হঠাৎ যেন এক টুকরো খুশির আলো। লালুপ্রসাদ যাদবের পরিবারে এসেছে নতুন অতিথি। বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বাবা হয়েছেন।
কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী র্যাচেল (বর্তমানে রাজশ্রী)। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ আছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতার সেই হাসপাতালে পৌঁছন লালুপ্রসাদ যাদব নিজে। বয়সের ভারে শরীর ক্লান্ত হলেও চোখেমুখে ছিল অফুরন্ত উচ্ছ্বাস। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রাবড়ি দেবী, কন্যা মিসা ভারতী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। সবাই মিলেই দেখলেন ছোট্ট সেই নতুন অতিথির মুখ। প্রথমবার নাতিকে কোলে নেওয়ার মুহূর্তে আবেগ চেপে রাখতে পারেননি লালু। হেসে বললেন, 'জীবনের অনেক কিছু দেখেছি, কিন্তু নাতির মুখ দেখার আনন্দই আলাদা!'
এদিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে পৌঁছন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। লালুপ্রসাদের সঙ্গে দেখা করে নবজাতকের জন্য আশীর্বাদ ও উপহার দেন তিনি। মমতা বলেন, 'রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু মানুষ হিসেবে লালুজি আমাদের শ্রদ্ধার জায়গায়। নতুন প্রাণের আগমন সব সময়ই আশীর্বাদ। আমি তেজস্বী ও রাজশ্রীকে অভিনন্দন জানাই।'
২০২১ সালে বিয়ের পর থেকেই তেজস্বী যাদব ও রাজশ্রীর সম্পর্ক সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রে। প্রেমের সম্পর্ক থেকেই পরিণয়ে যাওয়া তাঁদের জার্নি ছিল বেশ চলচ্চিত্রীয়। রাজশ্রী পড়াশোনা করেছিলেন বিদেশে, লন্ডনে। বিয়ের পর ধীরে ধীরে তিনি বিহারের রাজনৈতিক পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন। এবারে মা হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে সেই যাত্রাপথে যুক্ত হল আরও এক নতুন অধ্যায়।
লালুপ্রসাদ যাদবের পরিবার রাজনৈতিকভাবে যতই চাপে থাকুক না কেন, এই খবরে যেন সবার মুখে একরাশ হাসি। আরজেডির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও খুশির হাওয়া। বিহারের বিভিন্ন প্রান্তে মিষ্টি বিলি করা হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই খুশির খবর হয়তো রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও একটা ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে।
একান্ত পারিবারিক এই মুহূর্তে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাও একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত থাকা মানুষজনের চোখেও আনন্দের ঝিলিক। কেউ বললেন, 'এমন সময়ের খবর খুব দরকার ছিল। রাজনীতির বাইরে মানুষটাকেও তো দেখা উচিত।'
ছোট্ট নতুন সদস্য এখন সুস্থভাবে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠবে মা-বাবার কোলে। আর রাজনৈতিক ব্যস্ততা ভুলে বাবা তেজস্বী হয়তো নতুন করে বুঝবেন, জীবনের আসল দায়িত্ব কীভাবে আরও বৃহৎ হয়ে ওঠে সন্তানের মুখ দেখার পর।
একটা পরিবারে নতুন প্রাণের আগমন সব সময়ই আশার, আনন্দের প্রতীক। বিশেষ করে যখন সেই পরিবারে এত রাজনৈতিক চর্চা, চাপে, বিভাজনের বাস্তবতা থাকে, তখন একরাশ নিঃশর্ত ভালবাসা যেন নতুন আলো হয়ে জ্বলে ওঠে।
লালুর পরিবারের সেই আলো আজ কলকাতার মাটিতে ছড়াল… নিঃশব্দে, নির্মল ভালবাসায় ভরা এক টুকরো নবজন্মের গল্প হয়ে।