ধসে বিধ্বস্ত পাহাড়। লাগাতার ধসে যাচ্ছে কখনও দার্জিলিং, কখনও কালিম্পং কিংবা মিরিক-কার্শিয়াং। ফলে যাঁরা ঘুরতে আসার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জানা উচিত দার্জিলিং ও সিকিমের কোন কোন এলাকা আসলেই ধসপ্রবণ।
কারণ ঘুরতে আসার চেয়ে প্রাণের সুরক্ষা বেশি জরুরি। যেখানে এবার বেশ কয়েকজন পর্যটককে প্রাণ হারাতে হয়েছে। তাই আগে থেকে জেনে রাখলে সুরক্ষিতভাবে ঘোরাও যাবে, আবার ঝুঁকিও নিতে হবে না।
পাহাড়ের কোন এলাকা এড়িয়ে চলবেন?
কালিম্পং, কার্শিয়াং, দার্জিলিং এর দক্ষিণ-পশ্চিম দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল অত্যন্ত ধসপ্রবণ বলে মনে করছে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জিএসআই) ৷ কয়েক বছর আগেই তারা এই পর্যবেক্ষণ জারি করেছিল। একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত দার্জিলিংয়ের পাশাপাশি, প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলেও এমন ধসপ্রবণতা রয়েছে বলে তারা জানান।
দার্জিলিংয়ের কোন কোন এলাকা ধসপ্রবণ?
তাঁরা একটা মানচিত্র জারি করেছিলেন। তাতে দার্জিলিং পার্বত্য এলাকার মোট ভূখণ্ডের ১৭ শতাংশই অতি ধসপ্রবণ বলে চিহ্নিত করেন তাঁরা ৷ এর মধ্যে রয়েছে মিরিকের তিনধারিয়া, লিম্বুধার, কার্শিয়াংয়ের গিদ্দাপাহাড়, গয়াবাড়ি, পাগলাঝোরা, দ্বারগাঁও ৷ মাঝারি ধসপ্রবণ এলাকা ৪০ শতাংশ ৷ বাকি ৪৩ শতাংশ তুলনায় অনেক কম ধসপ্রবণ৷
কয়েক বছর আগেই তাঁরা এই ম্যাপ জারি করেছিলেন। যা এখন অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে। আগামী দিনে এই এলাকাগুলি আরও ধসের শিকার হতে পারে। দার্জিলিংয়ের মোট এলাকার পরিমাণ ২,৯২৩ বর্গ কিলোমিটার৷
সিকিমের কোন এলাকা বর্ষায় এড়িয়ে যাওয়া ভাল?
প্রতিবেশী সিকিমেও মানচিত্র তৈরির কাজ করেছে জিএসআই ৷ মানচিত্র বলছে উত্তর-পশ্চিম সিকিমই বেশি মাত্রায় ধসপ্রবণ৷ লাচুং, লাচেন, গুরুডোংমার, জুলুক এলাকায় বর্ষায় এড়িয়ে যাওয়া ভাল।
কেন ধস নামছে?
অতিবৃষ্টির কারণ ছাড়াও এই এলাকার টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়ার ফলে গোটা হিমালয়ের পাথর ক্রমশ ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে ৷ তাছাড়া এই এলাকা নবীন পাললিক শিলায় গঠিত। যার কারণে মাটি-পাথরের বুনন জমাট নয় ততটা। যার জেরেই দার্জিলিং-সিকিম এলাকায় অতি বৃষ্টিতে ধস নামছে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত ৷
ধস সামলাতে বিভিন্ন সময়ে গত এক বছর ধরে বিজনবাড়ি-পালবাজার, সিটং-সেলফু, গোরুবাথান, লিম্বুধারা এলাকায় কর্মশালা হয়েছে ৷ যার লক্ষ্য, ধসপ্রবণ এলাকায় বিকল্প পথ তৈরি করা৷
গোটা দেশের ১৭ টি রাজ্য ধসপ্রবণ
জিএসআইয়ের মত অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশের আরও ১৭টি রাজ্য ধসপ্রবণ রয়েছে। তার মধ্য নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, অসম, ত্রিপুরা, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, লাদাখ, জম্মু-কাশ্মীরের মতো এলাকার বহু জায়গা ধসপ্রবণ।
এই ধসের জেরে প্রতি বছর লক্ষাধিক জীবনহানি ঘটে। জিএসআইয়ের মানচিত্র জুড়ে তিনটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ অতি ধসপ্রবণ, ধসপ্রবণ এবং ধস সম্ভাবনাময়৷