Advertisement

'হয়তো অনেককে বাঁচানো যেত,' আক্ষেপ প্রত্যক্ষদর্শীদের

তেমন কোনও বিশেষ নিরাপত্তা ছিল না। বিসর্জনের ঘাটে কয়েক হাজার মানুষ থাকলেও মাত্র কয়েকজন সিভিল ডিফেন্স কর্মী ছিলেন। ছিল না কোনও নৌকা, লাইফবোট। এমনকী পর্যাপ্ত দড়িও নিয়ে আসেননি কর্মীরা। আলোর অভাব ছিল। মালবাজারের মাল নদীতে হড়পা বানের পরও ঘোর কাটেনি এলাকাবাসীর। উঠছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।

মালবাজার হড়পা বানের ঘটনায় আক্ষেপ প্রত্য়ক্ষদর্শীদের
Aajtak Bangla
  • মালবাজার,
  • 06 Oct 2022,
  • अपडेटेड 6:21 PM IST
  • "সতর্ক থাকলে হয়তো অনেককে বাঁচানো যেত"
  • মালবাজার হড়পা বানের ঘটনায় আক্ষেপ প্রত্য়ক্ষদর্শীদের
  • প্রশাসনের দিকেই আঙুল, চুপ প্রশাসন

দশমীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে হড়পা বানে ভেসে গিয়েছেন বহু। জলপাইগুড়ির মালবাজারের এই ঘটনা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ভক্তদেরই কারও কারও হাতে রেকর্ড করা ভিডিও এখন ভাইরাল। এমনকী গোটা ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে সাহায্যের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন রাজ্য় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। কিন্তু ঘটনার পিছনে দায়ী কে? এই ঘটনা কী নিছকই একটা দুর্ঘটনা, না কি প্রশাসনের তৎপরতা থাকলে অবাঞ্ছিত এই ঘটনা এড়ানো যেত? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে মালবাজার থেকে কলকাতা সর্বত্রই। আসুন দেখে নিই কালকের পরিস্থিতি কী ছিল? বিসর্জনের সময় কেমন ছিল নদীঘাটের পরিস্থিতি? কী বলছেন স্থানীয়রা?

নিরাপত্তা ছিল না বলে দাবি এলাকাবাসীর

নদীতে ভেসে গিয়ে একের পর এক মৃত্যুর পর উঠছে বেশ কিছু প্রশ্ন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন তেমন কোনও বিশেষ নিরাপত্তা ছিল না। বিসর্জনের ঘাটে কয়েক হাজার মানুষ থাকলেও মাত্র কয়েকজন সিভিল ডিফেন্স কর্মী ছিলেন। কেউ বলছেন মাত্র ৮-১০ জন, কেউ বলছেন আরও একটু বেশি। ছিল না কোনও নৌকা, লাইফবোট। এমনকী পর্যাপ্ত দড়িও নিয়ে আসেননি কর্মীরা। আশপাশ থেকে তার ছিঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ, কিন্তু তা ভেসে যাওয়া মানুষের কাছে পৌঁছলে তো! স্থানীয়দের অভিযোগ শুধু বালির বস্তা দিয়ে জলের ধারা পর্যন্ত পৌঁছনোর বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। যা জলের তোড় আসতেই মুহূর্তের মধ্যে ভেসে যায়।

ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসের পরও বাড়তি সতর্কতা ছিল না

আগেও এলাকায় দেখা দিয়েছে হড়পা বান, তবু কেন সতর্ক হয়নি প্রশাসন? এই প্রশ্ন বারবার উঠছে। উত্তরবঙ্গে পুজোর কদিন এমনিতেই ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। তবু কেন এত ঢিলেঢালা মনোভাব তা নিয়ে ফুঁসছে জনতা। যদিও সরকারি থরফে ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া আলাদা করে কোনও মন্তব্য করেননি কেউ। কেউ কেউ বলছেন, মাল নদীতে সারা বছর বিশেষ করে এ সময় জল থাকেই না। নদীখাতে বোল্ডার ফেলে বিসর্জনের সময় যাতে একদিকে জল কিছুটা বেশি থাকে যাতে প্রতিমা ডোবাতে সুবিধা হয়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হড়পা বান চলে আসায় তাতে অতিরক্তি জলে সমস্যা বেড়ে গিয়েছে আরও। আচমকা প্রবল স্রোতে অনেকেই তলিয়ে যান বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি।

Advertisement

কিছুদিন আগেই হড়পা বানে ট্রাক ভেসে যায়

এর আগেই মাসখানেক আগে এই নদীতেই হড়পা বান আসে। একটি ট্রাক ভেসে যাওয়ার ভিডিও সেই সময় ভাইরাল হয়েছিল। পাহাড়ি নদীতে যে কোনও সময় পাহপাড়ে বৃষ্টি হলেই এমন বান আসতে পারে। তারপরও কেন এত জমায়েতের সময় কোনও কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী রাখা হল না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে বিরোধীরাও।

বিক্ষোভ-অবরোধ-ভাঙচুর

জখম ও আহতদের মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মৃতদের দেহও নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। হাসপাতালে প্রশাসনিক সাহায্য না মেলার অভিযোগে উত্তেজনা ছড়ায়। হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় অনেক বিক্ষুব্ধ পরিজনরা। মালবাজারের ক্যালটেক্স মোড়ে মৃতদের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা পথ অবরোধও করেন। তাঁদের অভিযোগ, আগেও মাল নদীতে হড়পা বান হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন কোনও সতর্কতা নেয়নি। উদ্ধারের সময় প্রশাসনের সহায়তা মেলেনি বলেও তাঁদের অভিযোগ। পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। প্রায় ১ ঘণ্টা পর পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। 

প্রত্যক্ষদর্শী-১ স্থানীয় বাসিন্দা সমীর সিংহের দাবি, নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। ঘাটে সিভিল ডিফেন্সের কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। আমরা প্রতিমা ঘাটে পৌঁছে দিয়ে ফিরছিলাম, ঘটনা শুনে ফের নদীঘাটে পৌঁছই। ততক্ষণে অনেকে ভেসে গিয়েছিলেন। রাতে পরিষ্কার বোঝা যায়নি। বড়রা অনেকে এদিক-ওদিক আটকে যায়, কেউ কেউ ঘাট থেকে ছুড়ে ফেলা দড়ি ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। একটি শিশু ভেসে যায়। অন্য়দিকে অনেককে উদ্ধার করতে হাত লাগায় স্থানীয়রাই। আমাদের চোখের সামনেই সাহায্য না পেয়ে অনেকে পরিবারের লোকজনকে বাঁচাতে প্রবল জলস্রোতের সামনে লাফিয়ে পড়েন। নিরাপত্তা থাকলে হয়তো আরও অনেককে বাঁচানো যেত।

প্রত্যক্ষদর্শী-২ এক ব্যক্তি যিনি নিজেও ভেসে গিয়েছিলেন, হাসপাতালের বেডে শুয়ে জানালেন, আমি সাঁতার জানি, তবু আচমকা জল এভাবে বেড়ে যায়, আটকাতে পারিনি। কিছুদূর ভেসে যাওয়ার পর হাতে হ্যাঁচকা টান অনুভব করি। দেখি এক বন্ধু দড়ি ধরে আমাকে আটকেছে। হাতে-পায়ে চোট লেগেছে। কপালজোরে বেঁচে গিয়েছি। তবে প্রশাসনের কেউ ছিল না সাহায্য় করার মতো। আমাকে যখন ওখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখনও চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেয়েছি। অনেকেই পরিবারের লোকজনকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। জানি না কে কেমন অবস্থায় আছে। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement