এবারের চৈত্রের গরমে নাজেহাল ছিল বঙ্গবাসী। ভোটের উত্তাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়েছিল তাপমাত্রার পারদও। তবে বৈশাখের শুরুতেই স্বস্তির বৃষ্টির সম্ভাবনা রাজ্য জুড়ে।
শনিবার রাজ্যে পঞ্চম দফার ভোট। দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ভোট রয়েছে উত্তরবঙ্গেও। তবে এবারে আরা প্রখর রোদ মাথায় নিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়াতে হবে না রাজ্যবাসীকে। অন্তত এমন আশ্বাসবাণী দিচ্ছে হাওয়া অফিস।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, দক্ষিণবঙ্গে আগামী ৭২ ঘণ্টায় অংশত মেঘলা আকাশ থাকবে। তাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নতুন করে আর বাড়বে না। তাপমাত্রা থাকবে ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রির মধ্যে।
তবে দক্ষিণবঙ্গে কিন্তু এই মেঘ থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই কম। শুধুমাত্র পশ্চিমের জেলা গুলো বিশেষ করে কিছুটা পশ্চিম বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর,পুরুলিয়া, বাঁকুড় ও ঝাড়গ্রামে হালকা ঝড় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টি বেশি হবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে। কালিম্পং, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে আগামী ৭২ ঘন্টায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হবে।
এদিকে উত্তরের পাহাড় সংলগ্ন জেলাগুলিতে শুক্রবার আকাশ সকাল থেকেই মেঘলা ছিল। রোদ তেমন ওঠেনি। বিকেল হওয়ার আগেই ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে আছড়ে পড়ে বৃষ্টি। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় টানা শিলাবৃষ্টি মুহূর্তের মধ্যেই বিকেলের আবহাওয়া বদলে দেয় উত্তরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।
আগামী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় চিন্তায় পড়েছেন উত্তরবঙ্গের ভোটকর্মীরা। কারণ রাত পোহালেই শিলিগুড়ি ,জলপাইগুড়ি, পাহাড় এবং উত্তর দিনাজপুরের একটা অংশে ভোট রয়েছে। ফলে বাড়তি সর্তকতা নিতে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে।
দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি , উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক-সহ নির্বাচনী আধিকারিকরা দফায় দফায় বৈঠক করে পরিস্থিতি যাতে খারাপ না হয় তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা আগাম সর্তকতা নিয়ে রাখছেন। আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাসে অবশ্য দিনভর ভাসানোর কোন খবর নেই। তবে কখন কোথায় কিভাবে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হবে তা এখনই জোর দিয়ে বলতে পারছেন না তারা।
শিলিগুড়িতে বেলার দিকে বৃষ্টি নামলেও দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং-এ শুক্রবার সারাদিনই বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্গম অঞ্চল গুলিতে যাতে ভোট গ্রহণে কোনো রকম অসুবিধা না হয় সেজন্য বাড়তি সতর্ক থাকছে প্রশাসন।
এদিন দিনভর বৃষ্টি হয়েছে দার্জিলিং-এর পার্বত্য এলাকায়। কার্শিয়াং, মিরিক, কালিম্পং, গাড়িধুরা, পানিঘাটা, লেবং, ঘুম, তাকদা, সোনাদা, টুং এলাকায় এদিন সারাদিনই ছিল বৃষ্টিভেজা। দুপুর তিনটে নাগাদ শিলাবৃষ্টি সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া লন্ডভন্ড করে দিয়ে সমতলের শহর ও গ্রাম অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা।
হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় আচমকা নিম্নচাপের সৃষ্টি হওয়ায় এই হঠাৎ বৃষ্টিপাত এবং তুমুল শিলাবৃষ্টি শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদ মধুসূদন কর্মকার। আগামী কয়েকদিন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে এমন বৃষ্টিপাত চলতে থাকবে। সব জায়গায় শিলাবৃষ্টি নাও হতে পারে। তবে নিম্নচাপ এখনই সরছে না। মোটামুটি ৭২ ঘন্টা বৃষ্টিপাত চলবে বলে মনে করছেন তিনি।
এমনিতে গরমের শুরুতে উষ্ণ, রুক্ষ আবহাওয়ার বদলে এমন স্নিগ্ধতা সকলেরই কাম্য। তবে ভোট বাজারে সমস্ত কিছু ভালই ভালই মিটবে কিনা তা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তা প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক দলগুলিরও। বিশেষ করে বিরোধীরা চাইছেন যত বেশি সংখ্যক ভোট পড়বে, সেগুলি প্রতিষ্ঠানবিরোধী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে বিদায়ী শাসকদল তৃণমূল চাইছে ভোট পড়ুক ভালোভাবেই। তবেই জয় সুনিশ্চিত করা যাবে । ফলে শাসক বিরোধী সকলেরই এখন করজোড়ে বরুনদেবের কাছে একটাই প্রার্থনা অন্তত শনিবার দিন টা যেন বিপত্তি না ঘটে।