অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদঘাটন। তার আগে সোমবার জগন্নাথ মন্দিরে শুরু হল বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণ।
এদিন দিঘার মন্দিরে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ঘুরে দেখেন মন্দিরচত্বর। কথা বললেন মন্দিরের পুরোহিতদের সঙ্গেও।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। কপ্টার থেকে দিঘায় নেমে তিনি জানান, এই মন্দিরে ‘অধ্যাত্মবাদ এবং সম্প্রীতি’-র মিলন হয়েছে। মন্দিরের স্থাপত্যকাজেরও প্রশংসা করেন তিনি।
বুধবার, ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা । মঙ্গলবার রয়েছে বিশেষ হোমযজ্ঞ। নবান্ন সূত্রে খবর, সেই যজ্ঞে যোগ দেওয়ার জন্য সোমবার দিঘায় পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী দিঘায় যাওয়ার আগে বলেন, জগন্নাথধামে যাচ্ছি। সকলেই ঐক্য-সম্প্রীতি-শান্তি বজায় রেখো। দিঘায় পৌঁছে তিনি বলেন, এই মন্দিরের কারণে দিঘায় পর্যটকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। তাঁর কথায়, ‘‘দিঘায় সমুদ্র রয়েছে। সমুদ্রে লোকজন বেড়াতে আসেন। এখানে একটা তীর্থস্থান হলে লোকজনকে আরও আকৃষ্ট করবে।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, দিঘার এই জগন্নাথধাম ‘বাংলার হাজার হাজার বছরের পুরনো স্থাপত্যকলা’ তুলে ধরে। এটি একটি কৃষ্টি।
দিঘাজুড়ে রীতিমতো সাজো সাজো রব। বাহারি আলো, ব্যানারে সাজিয়ে তোলা হয়েছে সৈকত শহর। সূত্রের খবর, বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। তার আগে বিভিন্ন উপচার শুরু হয়েছে।
পুরীর মন্দিরের রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বে শুরু হয়েছে শান্তিযজ্ঞ। অস্থায়ী আটচালা ঘরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শনকে ১২ লিটার দুধ দিয়ে স্নান করানো হয়েছে। মন্দিরের বিমলা, লক্ষ্মী, সত্যভামা সহ অন্যান্য দেবতাদেরও একইভাবে স্নান সম্পন্ন হয়েছে। পুরীর মন্দিরের রাজেশ দয়িতাপতি ছাড়াও রয়েছেন ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাসও। ইসকনের বিভিন্ন শাখার অন্তত ৬০ জন ভক্তও মাঙ্গলিক কাজে যোগ দিয়েছেন।
নবান্ন সূত্রে খবর, এই আচারে যোগ দিতেই সোমবার দিঘায় পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ‘আগামিকালও যজ্ঞ চলবে। এরপর ঠাকুরের প্রতিষ্ঠা-সহ নানা ধর্মীয় আচার-বিধি রয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার থেকে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে চারটি কুণ্ডের মাঝে মহাকুণ্ড জ্বালিয়ে চলছে যজ্ঞ। চলছে মন্ত্রোচ্চারণ। গর্ভগৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবতাকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে জগন্নাথদেবের বসার পিঁড়ির পুজো। দুগ্ধস্নান সম্পন্ন হয়েছে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শনের। লক্ষ্মী, বিমলা, সত্যভামা-সহ সমস্ত দেবদেবীর মূর্তিকেও দুগ্ধস্নান করানো হয়েছে। দিঘা জুড়ে মাইকে বাজছে মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর। মঙ্গলবার হবে মহাযজ্ঞ। ওই দিন পর্যন্ত রোজই হোমযজ্ঞ চলবে বলে মন্দির সূত্রে খবর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছে মন্দিরচত্বরে। পুলিশ সূত্রে খবর, ৮০০ পুলিশরক্ষী মোতায়েন করা হচ্ছে মন্দিরচত্বরে। পাশের জেলাগুলি থেকেও আনা হচ্ছে পুলিশবাহিনী। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘার জগন্নাথ ধাম পর্যন্ত ১১৬বি জাতীয় সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
পুরীর মতো দিঘার মন্দিরেও ৪টি দুয়ার। মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পর, প্রথমেই পড়বে অরুণ স্তম্ভ। অরুণ স্তম্ভের ঠিক পরেই রয়েছে সিংহদুয়ার। সিংহ দুয়ারের ঠিক উল্টোদিকে ব্য়াঘ্র-দুয়ার। আছে হস্তিদুয়ার-অশ্বদুয়ার। পুরীর মন্দিরের মতোই, এখানেও মূল মন্দিরের ৪টি ভাগ। গর্ভগৃহ। তার সামনে জগমোহন। তারপর নাটমণ্ডপ। তারপর ভোগমণ্ডপ। গর্ভগৃহে বেদির ওপর থাকবে, জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার মূর্তি।