কংগ্রেস থাকাকালীন, এবং পরবর্তী সময় তৃণমূল গঠনের পর, বারেবরেই রাজ্যের পূর্বতন বাম সরকারের বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)। তাঁর নেতৃত্বে দলের প্রার্থীর জয়ী হয়ে পুরসভা ও বিধানসভার সদস্য হয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজে বারেবারেই লড়াই করেছেন কেন্দ্রের ভোটে। অর্থাৎ নির্বাচনী রাজনীতিতে আসার পর থেকে বেশকয়েকবার সাংসদ হয়েছেন তিনি। হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। যাকে বলে একেবারে স্বকীয় মেজাজে সামলেছেন দিল্লির রাজনীতি। ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত বিভিন্ন সময় সংসদেরই প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। তারপর ২০১১-তে রাজ্যে পালাবদলের পর উপনির্বাচনে জিতে বিধানসভার সদস্য হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তখন থেকে বেশিরভাগ সময়টাই বাংলায় দিতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই বলে দিল্লির রাজনীতি থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন এমনটা নয়। এর মাঝেও বিভিন্ন সময় দিল্লিতে (Delhi) গিয়েছেন মমতা। দেখা করেছেন বিজেপি বিরোধী নেতানেত্রীদের সঙ্গে। এমনকী ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সারা দেশের প্রায় সমস্ত বিজেপি বিরোধী নেতৃত্বকে তিনি ব্রিগেড ময়দানেও এনেছিলেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও ২০১১ থেকে ২০২১, অর্থাৎ মাঝের এই ১০ বছরে, তাঁর রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু কার্যত হয়ে উঠেছিল বাংলা। তবে এবার হয়ত ফের একবার দিল্লি তথা জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচেছন মমতা।
এর ইঙ্গিতটা অবশ্য গত বিধানসভা নির্বাচনের (Assembly Election) সময় থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। পায়ে চোটের কারণে গোটা নির্বাচন পর্বেই হুইল চেয়ারে প্রচার করেন মমতা। সেই সময় প্রায়শই তাঁকে বলতে শোনা যেত, এক পায়ে বাংলা দখল করব, আর দুপায়ে দিল্লি। আর বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর কার্যত তেমনটাই পদক্ষেপও নিতে দেখা গেল মমতাকে। কোভিড পরিস্থিতিতে এবছরও ভার্চুয়াল ২১শে জুলাই আয়োজন করে তৃণমূল। আর এবারের বিশেষ চমক ছিল, অন্যান্য বেশকিছু রাজ্যে মমতার ভাষণ শোনানর ব্যবস্থা করা। শুধু তাই নয়, পি চিদম্বরম, শরদ পাওয়ার, জয়া বচ্চন সহ বিজেপি বিরোধী বেশকিছু নেতানেত্রীও এদিন মমতার ভাষণ শোনেন। সেখানে বিজেপি বিরোধী ওই সমস্ত নেতৃত্বের সামনে সরাসরি ফ্রন্ট গঠনের ডাক দেন মমতা। এমনকী আগামী সপ্তাহে দিল্লি গিয়ে তাঁদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েদেন মমতা। আর এখানে আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, মমতার এই কথা ঘোষণার কয়েকঘণ্টা পরেই দিল্লি উড়ে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ও প্রশান্ত কিশোর। সেক্ষেত্রে একদশক পরে মমতার কাছে আবারও পাখির চোখ দিল্লি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।