আয়তনের বিচারে ভিক্টোরিয়া হ্রদ বিশ্বের বৃহত্তম স্বচ্ছ জলের হ্রদগুলির মধ্যে একটি। এটি ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এর তীরবর্তী এলাকা কেনিয়া, তানজানিয়া এবং উগান্ডা, আফ্রিকার এই তিন দেশের সঙ্গে মিলিত। এটি নীল নদের প্রধান জলাধার। এতে প্রায় ৮০টি দ্বীপ রয়েছে। খারাপ আবহাওয়া এবং মানুষের সচেতনতার অভাবে প্রতি বছর এই লেকে ডুবে প্রায় ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
ভিক্টোরিয়া লেকে লেশকিছু বিপজ্জনক প্রাণীর বাস। এগুলি কোন সাধারণ শিকারী প্রাণী নয়। বিশেষ করে এমন এক প্রজাতির শামুক আছে, যার কারণে স্কিস্টোসোমিয়াসিস নামক মারণ রোগ হয়। এই রোগটি বিলহারজিয়া (Bilharzia) নামেও পরিচিত। এটি একটি পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই হ্রদ এই রোগের হটস্পট।
স্কিস্টোসোমিয়াসিস একটি পরজীবী কৃমির কারণে হয়। এই রোগের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়নি। এই পরজীবীর জীবনচক্র খুবই জটিল। যার মধ্যে রয়েছে মানুষ ও শামুক। ১৮৫০ সালে এটি প্রথম থিওডর বিলহার্জ আবিষ্কার করেছিলেন। তাই এর নাম বিলহারজিয়াও রাখা হয়েছে। প্রাচীন মিশরীয় মমিতেও এই সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়।
ভিক্টোরিয়া লেকের প্রধান পরজীবী হল স্কিস্টোসোমা ম্যানসোনি। এই হ্রদের তীরে অবস্থিত তানজানিয়ার মওয়ানজা এলাকায় ২৫ শতাংশ শিশুর মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যখনই পরিষ্কার জলে মল-মূত্র ত্যাগ করেন, তখনই তা থেকে অন্যান্য মানুষও আক্রান্ত হযন। পরজীবী লার্ভা জলের মাধ্যমে শামুকের মধ্যে বিকশিত হয়। আবার জলে ফেরে। পরবর্তী শিকারের জন্য সেগুলি তিন দিন জলে সাঁতার ভাসতে থাকে। মানবদেহ পাওয়া মাত্রই তারমধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। কিছু পরজীবী অন্ত্র এমনকি মূত্রাশয় পর্যন্তও পৌঁছে যায়।
আরও পড়ুন - পেনশন নিয়ে কোনও রকম সমস্যা? কেন্দ্রের নয়া পোর্টালে মুশকিল আসান
স্ত্রী স্কিস্টোসোমা ম্যানসোনির (Schistosoma Mansoni) মানুষের দেহে প্রতিদিন ১০০০টি ডিম পাড়ে। এগুলি প্রস্রাব বা মলের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এই প্রদাহের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির অন্ত্র-মূত্রাশয়ে ব্যথা ও আলসার হয়। শিশুরা অপুষ্টির শিকার হয়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এই সংক্রমণ বহু বছর ধরে থাকলে একটি অঙ্গ বা বহু অঙ্গের ক্ষতিও হতে পারে। ভিক্টোরিয়া লেকে মানুষ সাঁতার কাটতে গেলে এই পরজীবী ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তখন শরীর চুলকায়। লাল দাগ দেখা যায়। একে বলা হয় সুইমারস ইচ (Swimmers Itch)।
সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি কাতায়মা জ্বরে (Katayama Fever) আক্রান্ত হন। যার জেরে ব্যক্তির কাঁপুনি, কাশি ও পেশীতে ব্যথা হয়। যদি চিকিৎসা না হয়, তাহলে ব্যক্তির মূত্রাশয়ে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। লিভার বড় হয়ে যায়, এমনকি পেটে ভয়ানক ব্যাথাও হয়।
আরও পড়ুন - পড়তি বাজারেও এই ৫ সংস্থার শেয়ার কিনলে হতে পারেন কোটিপতি