মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের কথা জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিয়েগো সালাজার এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। নয়া ওই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রিখটার স্কেলে সেই ভয়াবহ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৯.৫। ওই ভূমিকম্পের কারণে আট হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত সুনামি হয়েছিল। সেই সময়ে পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুদের হাজার বছরের জন্য আশেপাশের সমুদ্র সৈকত ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল।
সম্প্রতি এই গবেষণাটি সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৩,৮০০ বছর আগে এই ভূমিকম্প হয়েছিল। যেখানে এটি হয়েছিল, সেই জায়গাটিকে বর্তমানে উত্তর চিলি বলা হয়। একটি টেকটোনিক প্লেট ভেঙে যাওয়ায় ওই জায়গার উপকূলরেখা উপরে ইঠে গিয়েছিল।
এই ভূমিকম্পের পরে যে সুনামি হয়েছিল তা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তাতে ৬৬ ফুট উঁচু পর্যন্ত ঢেউ উঠেছিল। চিলি থেকে উৎপন্ন সেই ঢেউ দক্ষিণ মেরুর কাছে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছিল।
এখনও অবধি, রেকর্ডেড সবচেয়ে বৃহত্তম ভূমিকম্প ছিল ১৯৬০ সালের ভালদিভিয়া ভূমিকম্প (Valdivia earthquake)। সেটির তীব্রতা ছিল ৯.৪ থেকে ৯.৬। তাতে পুরোপুরি কেঁপে উঠেছিল দক্ষিণ চিলি। তাতে প্রায় ৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সেটির কারণে প্রশান্ত মহাসাগরেও বারংবার সুনামি হয়েছে।
আরও পড়ুন - আজও রাজ্যজুড়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস, কতদিন চলবে?
যে টেকটোনিক প্লেট ভাঙার কারণে ভালদিভিয়া ভূমিকম্প হয়েছিল সেটির দৈর্ঘ্য ছিল ৮০০ কিলোমিটার। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন আবিষ্কৃত এই ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পটি তার চেয়েও অনেক বড় ছিল। সেটির ভাঙা টেকটোনিক প্লেটের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার।
ভালদিভিয়া ভূমিকম্পের মতো, এই প্রাচীন ভূমিকম্পটিও ছিল একটি মেগাথ্রাস্ট ভূমিকম্প, যাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প বলা যেতে পারে। এই ধরনের ভূমিকম্প যখন ঘটে তখন পৃথিবীর একটি টেকটোনিক প্লেট অন্যটির উপরে এবং নিচে চলে যায়। একটির অপরটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এবং ঘর্ষণের ফলে উভয় প্লেট লক হয়ে যায়।
যে শক্তিগুলির কারণে প্লেটগুলির একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, সেগুলির তৈরি হওয়াও জারি থাকে। এই কারণে চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে সেগুলি ভেঙে যায়। ফলে ফাটল সৃষ্টি হয় ও ধ্বংসাত্মক শক্তি বেড়িয়ে আসে।
এই বিশাল ভূমিকম্পের প্রমাণ সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় বস্তু যেমন শিলা, নুড়ি এবং বালি, শেল এবং সামুদ্রিক জীবনে দৃশ্যমান। গবেষকরা চিলির আতাকামা মরুভূমিতেও (Atacama Desert) এর প্রমাণ পেয়েছেন। সেগুলি কীভাবে সমুদ্র থেকে এত দূরে কীভাবে পৌঁছেছে তা জানতে গবেষকরা রেডিওকার্বন ডেটিং ব্যবহার করেছেন।