১৯১৫ সালে, মেরু অভিযাত্রী আর্নেস্ট শ্যাকলটন (Ernest Shackleton) অ্যান্টার্কটিকা অভিযানে যান। তাঁর বাষ্পচালিত জাহাজ এন্ডুরেন্স (Endurance Ship) বরফের পুরু স্তরের মধ্যে আটকে যায় ও ভেঙ্গেচুড়ে ডুবে যায়। এবার সেটি একটি রোবোটিক আন্ডারওয়াটার ভেহিকেল দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছে। ফকল্যান্ডস মেরিটাইম হেরিটেজ ট্রাস্টের তথ্য (এফএমএইচটি) অনুসারে, আর্নেস্ট শ্যাকলটনের জাহাজটি অ্যান্টার্কটিকার ওয়েডেল সাগরে ৯৮৬৯ ফুট গভীরে পাওয়া গেছে। যেখানে সেটি ডুবে গিয়েছিল বলে বলা হয়, তার থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে পাওয়া গিয়েছে।
১৯১৫ সালে আর্নেস্ট শ্যাকলটনের এন্ডুরেন্স জাহাজটি ডুবেছিল। সেই সময়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন ফ্রাঙ্ক ওয়ারসলির রেকর্ড করা যে অবস্থান ছিল তা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। কারণ কয়েক মাস পর তিনি আবার সেই জায়গায় ফিরে গিয়েছিলেন, তখন সেই জাহাজটি বরফের নিচে ভেঙে পড়েছিল। এবার, আর্নেস্ট শ্যাকলটনের এন্ডুরেন্স জাহাজের সন্ধানকারী দলের প্রধান ম্যানসন বাউন্ড একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন যে এটি মেরু অন্বেষণের নায় ইতিহাস। এই জাহাজের সঠিক অবস্থান জানার বিষয়ে তাঁরা ভাগ্যবান। তাঁদের আন্ডারওয়াটার রোবটিক যান সেটির অনেক ছবি তুলেছে।
শোনা যায় যে জাহাজটি ওয়েডেল সাগরে বরফের বড় ব্লকের কারণে ভেঙে য়ায়। কিন্তু সমুদ্রের অভ্যন্তরে যে অংশটি পাওয়া গিয়েছে সেটি অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে। ম্যানসন বাউন্ড জানাচ্ছেন, এত সুন্দর সংরক্ষিত কাঠের জাহাজ তিনি আর দেখিনি। বহু বছর ধরে এই জাহাজটি সন্ধানের চেষ্টা চলছিল। কারণ এর ভাঙা, ডুবে যাওয়া ও ফিরে পাওয়ার ছবিগুলো মানুষকে অবাক করে দেবে।
আরও পড়ুন - পুঁজি ছাড়াই ৩০ কোটি টাকা রোজগার ১২ বছরের কিশোরের, কীভাবে?
আর্নেস্ট শ্যাকলটনের এন্ডুরেন্স জাহাজটি খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল কারণ এটি অ্যান্টার্কটিকার উপকূল থেকে প্রায় কয়েকশ কিলোমিটারের দূরে বরফের সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল। সমুদ্রের উপরে বরফের ঘন চাদরের কারণে সেটি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছিল। কিন্তু ৫ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার পোলার রিসার্চ ভেসেল আগুলহাস-২ এর সঠিক অবস্থান সনাক্ত করে। ঘটনাচক্রে, সেইদিনেই আর্নেস্ট শ্যাকলটনের ১০০তম মৃত্যুবার্ষিকীও ছিল।
এটি আবিষ্কারী দলের প্রধান জন শিয়ার্স বলেন, ওয়েডেল সাগরে আর্নেস্ট শ্যাকলটনের এন্ডুরেন্স জাহাজটি যেখানে রয়েছে, সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জন শিয়ার্স আরও বলেছেন যে, হাজার হাজার মানুষ যেটিকে অসম্ভব বলেছেন, তাঁরা সেটা করে দেখিয়েছেন। তাঁরা সেটি খুঁজে পেয়েছেন।
আর্নেস্ট শ্যাকলটন অ্যান্টার্কটিকায় তাঁর তৃতীয় এবং চতুর্থ যাত্রার জন্য এন্ডুরেন্স জাহাজ ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ১৯০১ থেকে ১৯০৩-এর মধ্যে দুবার অ্যান্টার্কটিকা সফর করেছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রার সময় মেরু অভিযাত্রী রবার্ট ফ্যালকন স্কটের সহকারী ছিলেন তিনি। একই সময়ে, তিনি প্রথমবারের মতো হট এয়ার বেলুনে অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণকারী দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
১৯০৭ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ চৌম্বক মেরুতে ভ্রমণ করেন। ১৪ ডিসেম্বর ১৯১১ সালে, নরওয়েজিয়ান অভিযাত্রী রোয়ালড আমুন্ডসেনের দল প্রথমবার ভৌগলিক দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছায়। আর্নেস্ট শ্যাকলটন ১৯১৫ সালে কুকুরের স্লেজ নিয়ে পুরো অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ অতিক্রম করতে চেয়েছিলেন। সে কারণেই তিনি মহাদেশে পৌঁছানোর জন্য এন্ডুরেন্স জাহাজ ব্যবহার করেন।
আর্নেস্ট শ্যাকলটনের দক্ষিণ মেরু থেকে রস সাগর পাড়ি দিয়ে ওয়েডেল সাগর হয়ে রস দ্বীপে যাওয়ার কথা ছিল। এই যাত্রা ছিল ২,৯০০ কিলোমিটারের। এন্ডুরেন্স জাহাজটির শ্যাকলটন এবং তার দলকে ওয়েডেল সাগরের দক্ষিণ প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৯১৫ সালের অক্টোবরে তিনি বরফের সাগরে আটকে যান। শ্যাকলটন এবং তাঁর দল যতটা সম্ভব জিনিসপত্র নিয়ে জাহাজ থেকে নেমে যান।
আর্নেস্ট শ্যাকলটন এবং তাঁর ২৭টি কুকুর স্লেজ এবং লাইফবোটের মাধ্যমে কোনওভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন। পরে একটি জাহাজে করে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। ১৯১৬ সালের এপ্রিলে, তিনি কোনওভাবে অ্যান্টার্কটিকার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত এলিফ্যান্ট দ্বীপে পৌঁছেছিলেন। অনেক কষ্টে, তিনি এবং তাঁর দল বরফের ঝড় থেকে বাঁচতে সক্ষম হন।