কয়েকদিন আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর ঘিরে উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার ওপার বাংলায় বিপ্লবী বাঘাযতীনের ভাস্কর্য ভাঙল দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থল সেই কুষ্টিয়া। শুক্রবার ভোররাতে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যটি দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর করে।
স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী বাঘাযতীনের ভাস্কর্যটি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামের হাইস্কুলের প্রধান ফটকের সামনে স্থাপিত ছিল। এদিন ভাঙচুরের ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীবুল ইসলাম খান ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবুর রহমান। তারা জানান, কে বা কারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। দোষীদের খুব শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে ঘটানস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বাঘাযতীনের ভাস্কর্যের ডান গালে ও নাকের ওপর আঘাতের চিহ্ন দেখা গিয়েছে। এ বিষয়ে কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ বলেন, স্কুল বন্ধ রয়েছে। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কে বা কারা ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে। মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ উগরে ট্যুইট করেন লেখিকা তসলিমা নাসরিনও।
Last night Bangladeshi Jihadi fundamentalists have destroyed the statue of Bagha Jatin, the Indian freedom fighter and the 'Bengal Tiger' whom the British feared. Hasina must take action against homegrown jihadists. pic.twitter.com/JiBCkoLkcd
— taslima nasreen (@taslimanasreen) December 18, 2020
বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন বাঘাযতীন। বাংলাদেশের এই কয়া গ্রামেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৭৯ সালের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির কয়াগ্রামে (বর্তমানে কুষ্টিয়া) তিনি জন্ম নেন। বাঘাযতীনের আসল নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। কাই বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বাঘ মেরেছিলেন বলে তিনি বাঘাযতীন নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তিনি ভারতে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেসময় বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের নেতা ছিলেন বাঘা যতীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন আগে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রশিক্ষণ নেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা ‘জার্মান প্লট’ ছিল তারই মস্তিষ্কপ্রসূত। সশস্ত্র সংগ্রামের এক পর্যায়ে সম্মুখযুদ্ধে ওড়িশার বালেশ্বরে তিনি গুরুতর আহত হন। বালাসোর হাসপাতালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতেই গ্রামের মহাবিদ্যালয়ে বাঘাযতীনের ভাস্কর্য স্থাপন কার হয়েছিল । কুমারখালী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই ২০১৬ সালের ৬ই ডিসেম্বর তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেছিলেন।