২ বছর আগেই স্থির হয়েই গিয়েছিল এক প্রকার। অবশেষে তাতে পাকাপাকি সিলমোহর পড়ল। ৯১ বছরের যাত্রা শেষে অস্তিত্ব মিলিয়ে যেতে চলেছে মিত্রার। সেখানে অন্য কোনও মাল্টিপ্লেক্স নয়, তৈরি হবে একটি পোশাকের বিপণি। উত্তর কলকাতার অন্যতম ল্যান্ডমার্ক এ বার সত্যিই অতীত হতে চলেছে।
১৯৩০ সালে যাত্রা শুরু হয় মিত্রা-র। কত শত সিলভার জুবিলি, গোল্ডেন জুবিলির সাক্ষী থেকে সিনেমা হলটি তার ইয়ত্তা নেই। বাংলা সিনেমার স্বর্ণ যুগের সমস্ত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সিনেমা একের পর এক মুক্তি পেয়েছে এখানে। তালিকায় উত্তম কুমার থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেন থেকে সাবিত্রি চট্টোপাধ্যায় সকলেই রয়েছে। হালফিলের বাংলা ছবিও নিয়মিত মুক্তি পেত এখানে। কিন্তু শহরে বাণিজ্যিক বাংলা সিনেমার দর্শক ধীরে ধীরে কমে গিয়েছে। এ কথা এখ সময় জানিয়েছিলেন হলের কর্ণধার দীপেন মিত্র। তাতে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার পর করোনা পরিস্থিতিতে সমস্যা আরও বাড়ে। হলে মানুষ আসতে চাইছেন না। ফলে ফাঁকা হলে সিনেমা দেখানোর মতো খরচ বেশি দিন কোনও সিঙ্গল স্ক্রিনের পক্ষেই টানা সম্ভব নয়। এই একই অবস্থা আর কতগুলি সিঙ্গল স্ক্রিনের কপালে রয়েছে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।
সূত্রের খবর, সিনেমা হল ভাঙার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। এখন ভোটের জন্য কাজ থমকে রয়েছে। ভোট পর্ব মিটলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মিত্রা। এক এক করে কলকাতার বহু সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। না হয়বন্ধ হওয়ার মুখে। ব্যতিক্রম অবশ্যই রয়েছে। তবে তা হাতে গোনা কয়েকটি। আরও জানা গিয়েছে দীপেন বাবুর অসুস্থতার কারণেই মূলত হল বিক্রি করে দেওয়া হয়। প্রবীণ অসুস্থ অশক্ত শরীরে তিনি আর ব্যবসা চালাতে পারছিলেন না। দিন কতক আগে করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। আপাতত সুস্থ রয়েছেন।
দীর্ঘ দিন ধরে অকৃতদার দীপেন মিত্র অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গেই ব্যবসা চালিয়ে এসেছেন। বলা যায় মিত্রা তাঁর ধ্যান জ্ঞান ছিল। কিন্তু অবশেষে মায়া কাটিয়ে তা হস্তান্তর করতে বাধ্য হলেন তিনি। হল রাখতে না পারলেও উত্তর কলকাতার অন্যতম ল্যান্ডমার্কের সামনেটা একই রকম রাখার চেষ্টা করবেন তিনি। বাকি তো আর কিছুই থাকবে না। অন্তত সামনের স্মৃতিটুকু থাক।