সব ঠিক থাকলে শুক্রবার দিল্লিতে বিজেপিতে প্রত্যাবর্তন ঘটছে অর্জুন সিংয়ের। ২০১৯ সালের মতো লোকসভা নির্বাচনের আগে এদিন ফের বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ। বৃহস্পতিবারই দিল্লি গিয়েছেন অর্জুন। গতকাল দুপুরেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপিতে যোগদানের কথা ঘোষণা করেন তৃণমূলত্যাগী সাংসদ। বিজেপিতে আনুষ্ঠানিক যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বিশেষ বার্তা দিলেন অর্জুন। এক্স হ্যান্ডলে লিখলেন, 'মনে সবার মোদী আবার'। পোস্টটিতে হ্যাশট্যাগ দিয়েছেন 'ব্যারাকপুর'। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ফের ব্যারাকপুর থেকেই লড়তে চান অর্জুন এবং ব্যারাকপুরে যাতে ফের পদ্মফুল ফোটে সেকারণেই মোদীকে নিয়ে এমন পোস্ট করলেন দাপুটে নেতা।
বিজেপিতে কি ভোটের টিকিট পাবেন? এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অর্জুনের কৌশলী উত্তর, 'বিজেপির নির্বাচন কমিটি রয়েছে, তারা ঠিক করবে।' ব্যারাকপুর থেকেই কি প্রার্থী হবেন? সাংসদের জবাব, 'দল ঠিক করবে কে প্রার্থী হবেন। প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করেন। এতে আমার হাত নেই।'
গতকাল অর্জুন বলেছেন, 'তৃণমূল ছেড়ে দিয়েছি। বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি। দিল্লিতে শুক্রবার যোগ দেব।' এতেই শেষ নয়, নয়া চমকও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, 'আমার সঙ্গে আরও এক বড় নেতা বিজেপিতে যোগ দেবেন।' তবে কে সেই 'বড় নেতা', তা অবশ্য খোলসা করেননি অর্জুন। তাঁর সঙ্গে ব্যারাকপুরের হাজার হাজার কর্মী বিজেপিতে যোগ দেবেন বলেও জানিয়েছেন এই দাপুটে নেতা। সাংসদ এ-ও বলেছেন, 'আনুষ্ঠানিক ঘোষণা (বিজেপিতে যোগদানের) হয়ে গেলেই প্রথমে নৈহাটির বড়মার আশীর্বাদ নিতে যাব। হনুমান মন্দিরে পুজো দেব। তারপরে প্রচার শুরু করব।' কেন নৈহাটিতে যাবেন, সেই কারণেরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন অর্জুন। এই প্রসঙ্গে ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে আক্রমণ করে বলেছেন, 'ওখানকার যিনি বিধায়ক, তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। কত মানুষের ক্ষতি করেছেন। মানুষের যাতে ভাল হয়, তাই নৈহাটির বড়মার মন্দিরে পুজো দেব।'
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীতালিকায় ঠাঁই না পাওয়ার পর থেকেই অর্জুনের গলায় অসন্তোষের সুর শোনা গিয়েছিল। তার পর থেকেই তাঁর বিজেপিতে প্রত্যাবর্তনের জল্পনা জোরালো হচ্ছিল। অবশেষে সেই জল্পনাই সত্যি হতে চলেছে।
অর্জুন তৃণমূলে নেতা ছিলেন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে টিকিট বণ্টন নিয়ে সেবারও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের 'বাহুবলী' নেতা অর্জুন। সেবার দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে অর্জুনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। তারপরেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন অর্জুন। সেবার দীনেশকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। বিজেপিতে গিয়ে ব্যারাকপুরে প্রার্থী হন অর্জুন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর থেকে পদ্ম প্রতীকে লড়ে জয়ী হন এই দাপুটে নেতা। কিন্তু তার পরে ২০২২ সালে বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন ঘটে অর্জুনের। গত রবিবার ব্রিগেডে জনগর্জন সভা থেকে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে তৃণমূল। ঠাঁই পাননি অর্জুন। ব্যারাকপুর থেকে ভোটে লড়ছেন পার্থ ভৌমিক। এরপরেই অর্জুনের গলায় ক্ষোভের সুর শোনা যায়। যার জেরে ফের তাঁর দলবদলের জল্পনা জোরালো হয়। অর্জুন জানান, লোকসভার টিকিট না দেওয়ায় তাঁকে বিধানসভা ভোটে বরানগর থেকে দাঁড় করানোর প্রস্তাব দিয়েছে তৃণমূল। সম্প্রতি ওই কেন্দ্রের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাপস রায়। তাপসের কেন্দ্র তাঁকে দেওয়ার প্রস্তাব তৃণমূল দিয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্জুন। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে অর্জুন জানিয়েছেন, তিনি ব্যারাকপুর ছাড়তে চান না। ব্যারাকপুরকে যে তিনি মনে-প্রাণে ভালবাসেন, সেই বার্তা ফেসবুকে তুলে ধরেছেন স্থানীয় সাংসদ। ফেসবুকে লিখেছেন, 'আমি সর্বদা ব্যারাকপুরের মানুষের সেবা করেছি এবং শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত করব।'