সন্দেশখালির আন্দোলনকারী তথা বসিরহাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার বিজেপি সূত্রে এই খবর পাওয়া গিয়েছে। পরে সাংবাদিক বৈঠকে রেখা বলেন, 'আমার মাথার উপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে প্রার্থী হয়েছি। প্রথম থেকেই বিজেপি করি।'
রেখাকে ফোন মোদীর, কী কথা হল?
বিজেপি সূত্রে খবর, ভোটপ্রচার, প্রচারের প্রস্তুতি নিয়ে রেখার সঙ্গে কথা হয়েছে মোদীর। সূত্রের দাবি, রেখাকে 'শক্তি স্বরূপা' বলে অভিহিত করেছেন মোদী। সন্দেশখালিতে অত্যাচারের ঘটনা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন রেখা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রেখার ফোনে ৯ মিনিট ৮ সেকেন্ড কথা হয়। সেই কথোপকথন রইল...
প্রধানমন্ত্রী: রেখাজি নমস্কার।
রেখা:নমস্কার প্রধানমন্ত্রীজি। আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী: সবার প্রথমে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই (বাংলায় বলেন)। বড় দায়িত্ব পালন করতে চলেছেন। কেমন লাগছে?
রেখা:খুব ভাল লাগছে। আপনার হাত আমার মাথার উপর রয়েছে। আমার সন্দেশখালির মা-বোনেদের মাথার উপর আপনার হাত রয়েছে। মনে হচ্ছে যেন, রামজির হাত রয়েছে আমাদের মাথার উপর।
প্রধানমন্ত্রী:মা-বোনেদের হাত আমার মাথার উপর রয়েছে। রেখাজি, আপনার মেসেজ পেয়েছি। বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলব। আপনার নাম ঘোষণা হল যখন, কী পরিস্থিতি হল?
রেখা: আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে, বসিরহাটের মা-বোনেরা অত্যাচারিত হয়েছেন। আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে (যারা অত্যাচার করেছে), তাদের জেল হয়েছে, ইডির হাতে চলে গিয়েছে। শাস্তি চাই। ২০১১ সাল থেকে ভোট দিতে পারছি না। আমরা চাই ভোট দিতে। ভোট দিতে পারলে সন্দেশখালির মা-বোনেরা খুশি হবেন।
প্রধানমন্ত্রী: আমার বিশ্বাস রয়েছে, আপনার কথা নির্বাচন কমিশনের কাছে পৌঁছবে। নির্বাচন কমিশন সুনিশ্চিত করবে যাতে সকলে ভোট দিতে পারেন। আশা করব, নির্বাচন কমিশন আপনার কষ্ট বুঝবেন। দু:খের কথা, আপনি ভোট দিতে পারেননি। বাংলায় কীভাবে সরকার চলছে। নির্বাচনে আপনাকে প্রার্থী করা হল। প্রতিবেশীরা কী বলছেন?
রেখা: সকলে খুশি হয়েছেন। তৃণমূলের ২-৪ জন মা-বোনেরা প্রথমে বিরোধিতা করেছিলেন। এখন মেনে নিয়েছেন...ওঁদের সঙ্গে কোনও শত্রুতা নেই। আমি তো সকলের হয়ে লড়ব।
প্রধানমন্ত্রী: রেখাজি, যা শুনছি, বিজেপি আপনাকে প্রার্থী করে বড় কাজ করেছে। রাজনীতিতে এটা বিরল যে, যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁদেরও ভাল চাইছেন। আপনি যা বলছেন, তৃণমূলের যাঁরা বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের উপর অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বেন। খুব ভাল লাগল শুনে। সারা দেশ আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করবেন। বসিরহাটের মানুষ বিশেষ করে মহিলারা আপনাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। কেমন লাগছে?
রেখা:ভাল লাগছে। আশা করব, ভোটে সকলের সমর্থন পাব। আমার স্বামী চেন্নাইয়ে কাজ করেন। অনেক পরিশ্রম করে সংসার চালাই। এমন কিছু করব যাতে কাউকে বাংলার বাইরে যেতে না হয়।
প্রধানমন্ত্রী:আপনার যা আত্মবিশ্বাস রয়েছে, তাতে নিশ্চয়ই আপনি দিল্লি পৌঁছবেন ভোটে জিতে। সন্দেশখালিতে এত বড় লড়াই লড়লেন। আপনি শক্তি স্বরূপা। এতগুলো লোককে জেলে পাঠালেন। কোনও ধারণা রয়েছে, কত বড় সাহসের কাজ করেছেন?
রেখা: মা-বোনেদের সমর্থন ছিল বলেই করতে পেরেছি। ওঁদের সঙ্গে নিয়েই চলব আগামীর পথ। আমি আপনার ছোট বোনের মতো।
প্রধানমন্ত্রী: শুধু বসিরহাট নয়, পুরো বাংলার মা-বোনেদের সম্মানের জন্য লড়ব। আপনি পরিশ্রম করে সংসার চালান। সবরকম ভাবে পাশে থাকব। রেখাজি খুব ভাল লাগল কথা বলে। আপনার উৎসাহ দেখে ভাল লাগছে। বাংলা শক্তিপুজোর ভূমি, দুর্গাপুজোর ভূমি। যেভাবে কষ্ট করে কাজ করছেন, খুব বড় ব্যাপার। সন্দেশখালির ঘটনাকে দেশের মধ্যে তুলে ধরা ছোট ব্যাপার নয়। নারীশক্তি বিশেষ রূপে বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমাদের আশীর্বাদ দেবে। তৃণমূল সরকার আছে, মানুষ বিরক্ত। কীভাবে তৃণমূল সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, কেন্দ্রের প্রকল্পের নাম কীভাবে বদলাচ্ছে, তা বলুন সকলকে।
রেখা: সন্দেশখালিতে ২০১১ সাল থেকে ভোট চুরি হচ্ছে। স্বাধীনভাবে ভোট দিতে চাই। মা-বোনেদের সম্মান রক্ষা করা হোক। যেসব ভাইকে মারধর করা হচ্ছে, তা দেখব। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী: আপনার যা সাহস রয়েছে, তাতে ঈশ্বর আপনার সঙ্গে রয়েছেন। প্রত্যেক নাগরিকের সুরক্ষা এবং নারীর সুরক্ষাদের জন্য যেভাবে চিন্তা করছেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার সব লক্ষণ রয়েছে আপনার। আমার অনেক শুভকামনা। সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে চলুন।