হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। তার পরেই শুরু হয়ে যাবে লোকসভা নির্বাচন। এ বার ভোটযুদ্ধে ৪০০ আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে মোদী বাহিনী। বিজেপি একক ভাবে ৩৭০ আসন পেতে মরিয়া। সবমিলিয়ে ৪০০ আসন নিজেদের দখলে রাখতে চায় এনডিএ। সেই লক্ষ্যপূরণে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরা। পুরোদমে চলছে প্রচার পর্ব। কিন্তু সম্প্রতি চারটি সমস্যা এনডিএ শিবিরে মাথাচাড়া দিয়েছে। এমন কিছু বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে পদ্মশিবিরকে যে, সেই সমস্যা না মিটলে ৪০০ আসল জেতার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হতে পারে।
প্রথম সমস্যা:
কর্নাটকের রাজনীতিতে লিঙ্গায়ত সম্প্রদায় বিজেপির একটা অন্যতম বড় ঘাঁটি। জনসংখ্যার প্রায় ১৭ শতাংশ এই সম্প্রদায়ের। ফলে এই সম্প্রদায়ের মানুষ যদি বিজেপির উপর ক্ষুব্ধ হন, তা হলে দক্ষিণের এই রাজ্যে বিপাকে পড়তে হবে পদ্ম বাহিনীকে। আর সেখানেই এবার সমস্যায় পড়তে হয়েছে দেশের শাসকদলকে। লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট সাধক ডিঙ্গলেশ্বর মহাস্বামী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে
ভোটে লড়াইয়ের কথা ঘোষণা করেছেন। যার জেরে 'চাপ' বেড়েছে বিজেপির। জানা গিয়েছে, লিঙ্গায়েত নেতাদের টিকিট না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট ডিঙ্গলেশ্বর। তিনি ক্ষোভের সুরে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ শেত্তারকে টিকিট না দেওয়ার নেপথ্যে যোশীর হাত ছিল। কংগ্রেসের টিকিটে হুবলি-ধারওয়াদ কেন্দ্রে শেত্তার লড়েছিলেন। যদিও হেরে যান তিনি। পরে ফের বিজেপিতে ফিরেছেন তিনি। অন্য দিকে, বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন বিজেপির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী ঈশ্বরাপ্পাও। শিবমোগ্গা কেন্দ্র থেকে নির্দল হিসাবে ভোটে লড়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের মানুষদের কেন মোদী সরকারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেওয়া হয়নি, তা নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে কোনও সমাধানের রাস্তা যদি বিজেপি বার করতে না পারে, তা হলে ভোটবাক্সে লোকসানের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
দ্বিতীয় সমস্যা:
সম্প্রতি গুজরাট এবং উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন রাজপুতরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুরুষোত্তম রুপালার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তাঁরা। একইভাবে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে ভি.কে. সিংয়ের টিকিট বাতিল হওয়ায় প্রকাশ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে নেমেছে রাজপুত মহাসভা। নয়ডা এবং গাজিয়াবাদে রাজপুতরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে তাঁদের টিকিট দেওয়া হয়নি। এই নিয়ে ক্ষোভের সুর শোনা গিয়েছে তাঁদের গলায়। রাজপুতদের ক্ষোভ মেটাতে আসরে নেমেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কিন্তু বরফ এখনও গলেনি।
তৃতীয় সমস্যা:
বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশও চিন্তা বাড়িয়েছে এনডিএ শিবিরের। সেখানে মায়াবতীর দল বিএসপিকে বিজেপির বি-টিম বলে কটাক্ষ করা হচ্ছে। রাজনীতির কারবারিদের মতে, বিএসপি এমন ভাবে ভোটের অঙ্ক কষছে যে, দেখে মনে হবে না তারা 'বিজেপির বি-টিম'।
বিএসপি এমন সব প্রার্থী দিচ্ছেন, যা বিজেপির পক্ষে স্বস্তিজনক নয়। ফলে বিজেপির ভোট কাটতে পারে মায়াবতীর দল। মিরাট, বিজনৌর, পিলিভীট, কাইরানা, মুজাফফরনগর, বাগপতের মতো এলাকায় বিএসপি এমন প্রার্থী করেছে যা বিজেপির পক্ষে বিড়ম্বনার।
চতুর্থ সমস্যা:
মোদী-শাহ কি মিরাকল জানেন! অতীতে টিকিট না পেয়েও বিজেপিতে কেউ বিদ্রোহী মনোভাব দেখাননি। তবে এবার ছবিটা অন্যরকম। টিকিট না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভপ্রকাশ করছেন। পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা, রাজস্থান, কর্ণাটক, বিহার, সর্বত্রই অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। হরিয়ানায় টিকিট পাচ্ছেন না দেখে প্রথমে বিজেন্দ্র সিং গেলেন, পরে তাঁর বাবা চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংও কংগ্রেসে যোগ দিলেন। কর্নাটকে ঈশ্বরাপ্পা নির্দল হিসাবে লড়ছেন। এমনকি তিনি বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বাড়িতে এলেও তিনি পিছপা হবেন না। ।রাজস্থানের দুই বারের বিজেপি সাংসদ রাহুল কাসওয়ান শুধু কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাননি, টিকিটও পেয়েছেন। এমতাবস্থায় টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে যে বিদ্রোহ-পর্ব চলছে, তা না থামলে বিজেপির ভোটবাক্সের হাল খারাপ হতে পারে।