প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর বেশকিছু জায়গায় বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) অন্দরে। পরবর্তী ক্ষেত্রে সেই সমস্যা সংক্রমিত হয় বিজেপিতেও। দফায় দফায় যত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন বিজেপি (BJP) নেতৃত্ব, ততই বেড়েছে অসন্তোষ ও বিক্ষোভের তীব্রতা। বেশিরভাগ জায়গাতেই সদ্য দলে যোগ দিয়েই টিকিট পাওয়ার বিরোধিতা করেছেন বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। উঠেছে ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করার দাবি। কিন্তু এই সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবারের দমদমের ঘটনা। সেখানে রাজারহাট - গোপালপুর কেন্দ্রে দলের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের বিরোধিতা করেন গেরুয়া কর্মী সমর্থকেরা।
দিন কয়েক আগে পাঁচলা, উদয়নারায়ণপুর, রাইদিঘি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হেস্টিংসে দলের দফতরের সামনে লাগাতার বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ওই সমস্ত এলাকার পদ্ম শিবিরের কর্মী সমর্থকদের একটা বড় অংশ। এমনকি বিক্ষোভের মুখে পড়তে দলের শীর্ষস্তরীয় নেতা মুকুল রায়কেও। অন্যদিকে বিভিন্ন জেলাতেও শুরু হয় বিক্ষোভ প্রতিবাদ। হুগলির সিঙ্গুর, চন্দননগর, উত্তরপাড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। এরপর বৃহস্পতিবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা পর বিক্ষোভ শুরু হয় ওল্ড মালদা, হরিশ্চন্দ্রপুর, দুর্গাপুর পূর্ব, পান্ডবেশ্বর, জগদ্দলের মতো এলাকায়। প্রায় সব জায়গাতেই সদ্য যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁদের টিকিট দেওয়ায় প্রতিবাদ জানান বিক্ষোভকারীরা।
কিন্তু রাজারহাট - গোপালপুর আসনের ক্ষেত্রেও কেন একই ঘটনা ঘটল? ওই আসনে দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করেছে দল। তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কেন বিক্ষোভ দেখালেন দলীয় কর্মীরা? প্রকাশ্যে অবশ্য প্রার্থী অপছন্দের কারণই দেখাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। যদিও শমীকবাবুর বিরোধিতার ক্ষেত্রে সেটাই একমাত্র কারণ কি না তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। পাশাপাশি এও প্রশ্ন উঠছে যে, নির্বাচনের ঠিক আগে এভাবে ঘরোয়া কোন্দল চলতে থাকলে তা কীভাবে সামাল দেবে বিজেপি?
এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে প্রার্থীকে ঘিরে অসন্তোষের জেরে যে শুধু বিক্ষোভই হচ্ছে এমনটা নয়, শুরু হয়েছে দলত্যাগ পর্বও। ইতিমধ্যেই বেহালা পূর্বে টিকিট না পেয়ে বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও দল ছেড়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। চন্দননগরে গণ ইস্তফ দিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা। দল ছেড়েছেন হুগলি জেলা বিজেপির প্রাক্তন সভানেত্রীও। কোথাও কোথাও প্রাথী পরিবর্তন না হলে প্রয়োজনে নির্দল প্রার্থী দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। যদিও বিজেপি নেতৃত্বের আশা, সমস্ত সমস্যাই মিটে যাবে। এক্ষেত্রে দলের রাজ্য সভাপতি জানিয়েছেন, যাঁদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদেরই টিকিট দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে সহযোগিতার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু অপছন্দের প্রার্থী ঘিরে দিকে দিকে অসন্তোষ ও দলত্যাগ যেভাবে বাড়ছে তা ভোটের আগে বিজেপির পক্ষে খুব একটা ভাল বার্তা নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর তার মধ্যে কোনও কোনও কেন্দ্রে যদি সত্যিই বিক্ষুব্ধ দলীয় কর্মীরা নির্দল প্রার্থী দাঁড় করান তাহলে বিজেপির সঙ্কট যে আরও বাড়বে সেই বিষয়ে কার্যত নিশ্চিত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এখন দেখার দলের কর্মী সমর্থকদের সমস্ত ক্ষোভ প্রশমন করে আদও একসঙ্গে নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে কি না বিজেপি।