২০১৪ সাল। মিঠুন চক্রবর্তীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভায় নির্বাচিত করে পাঠালেন। মিঠুন বললেন, 'আমার বোন আমায় রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে।'
কাট টু ২০১৫। কলকাতায় শহিদ মিনারের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, 'মিঠুন আর আমার সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না ভয়ে। মিঠুন চক্রবর্তী আমার সাংসদ। সে আমার সঙ্গে কথা বলতে ভয় পায়! এমন করে সব ভয় দেখায়!’
মাত্র এক বছরের মধ্যেই ভাই-বোনের সম্পর্কে চিড়! কী ঘটেছিল? মমতা ও মিঠুনের সম্পর্ক তলানিতে আসার মূল কারণ ছিল সারদা কেলেঙ্কারি?
আরও পড়ুন: 'কারও দিকে আঙুল তুলছি না, কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত ছিল,' BJP-তে যোগ দিয়ে প্রতিক্রিয়া মিঠুনের
নক্সাল আন্দোলন থেকে সুভাষ ঘনিষ্ঠ
মিঠুনের জন্ম নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে। মা-বাবার দেওয়া নাম ছিল গৌরাঙ্গ। একসময় নক্সাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বেশ কিছু সময় গা ঢাকাও দিয়েছিলেন। নক্সাল নেতা চারু মজুমদারের সঙ্গে ওতোপ্রত যোগাযোগের কথা পরে স্বীকারও করেছিলেন। বলেছিলেন, 'ইন্ডাস্ট্রি ও বাইরের সবাই জানত, আমি নক্সাল আন্দোলনে জড়িত ছিলাম, চারু মজুমদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পরিবারে এক দুঃখজনক ঘটনার পরে আমি নক্সাল আন্দোলন ছেড়ে দিয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও পুনের FTII বা মুম্বইয়ে অভিনয় করতে যাওয়া, নক্সাল আন্দোলনকারীর তকমা আমায় বয়ে বেড়াতে হয়েছে।' এহেন মিঠুনের সঙ্গে পরবর্তীকালে বাম জমানায় সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনেকেরই জানা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক ছিল মিঠুনের। কিন্তু বাম সরকারের আমলে মিঠুনের নাম পদ্মশ্রীর জন্য প্রস্তাব করা হয়নি কখনও রাজ্য থেকে।
মমতার সঙ্গে সম্পর্ক ও সাংসদ
২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসে। তার আগে ২০০৯ সালে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে কংগ্রেস প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারে মিঠুনকে দেখা গিয়েছিল। ২০১৪ সালে মিঠুনকে রাজ্যসভার সাংসদ করেন মমতা। মিঠুনও মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্যব্যাপী তৃণমূলের প্রচারে মাঠে নামেন। মিঠুনের নাম ঘোষণা করে ফেসবুকে মমতা লিখেছেন, 'শ্রীচক্রবর্তী এক জন সুপরিচিত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তিনি নিজের জীবন সফল ভাবে উৎসর্গ করেছেন। তিনি শুধু পশ্চিমবঙ্গের নন, সারা দেশের সম্পদ। তাঁকে প্রার্থী করতে পেরে আমরা গর্বিত।' মিঠুনকে তার আগেও মমতা রাজ্যসভায় যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু মিঠুন এড়িয়ে যান। ২০১৪ সালে যখন মিঠুনকে মমতা রাজ্যসভার প্রার্থী ঘোষণা করলেন, মিঠুন বলেছিলেন, 'এ বার বলার পর আমি আবার ওঁকে বলেছিলাম, আমি কি পারব ওই দায়িত্ব সামলাতে? উনি বলেছিলেন, 'কেন মিঠুনদা তুমি বারবার না বল? যেখানে লতাজি, রেখাজি, সচিন তেন্ডুলকর রাজ্যসভায় আছেন! এটা তো একটা সম্মানের ব্যাপার!'
সারদা কেলেঙ্কারি ও মিঠুনের জেরা
এরপর হঠাৎ করেই সারদা কেলেঙ্কারিতে উঠে আসে মিঠুনের নাম। ২০১৫ সালে ইডি-র জেরার সম্মুখীন হতে হয় এই অভিনেতাকে। তারপর থেকেই মিঠুন রাজনীতির অন্তরালে চলে যান। খোঁজ মিলছিল না তাঁর। ফোন ধরেননি, এমনকী কলকাতায় তাঁর নিকটজন ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গেও কোনও কথা বলেননি। একসময় সারদা চিটফান্ড সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন মিঠুন। মিঠুন চক্রবর্তীকে জেরা করায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। তারপর থেকেই নিজেকে তৃণমূল থেকে সরিয়ে নেন। পরোক্ষভাবে তৃণমূলের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তৃণমূলের নেতা-সাংসদ-মন্ত্রীরা ফোন করলেও ফোন ধরেননি মিঠুন।