নন্দীগ্রামে (Nandigram) মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। প্রকাশ্যে বিপক্ষকে গুরুত্ব দিতে না চাইলেও লড়াই যে কঠিন, তা ভিতরে ভিতরে মানছে দু'দলই। তৃণমূলের দাবি, বিপক্ষে যেই দাঁড়ান না কেন, মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই থাকবেন। আবার বিজেপির দাবি, শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামের মাটির ছেলে, তাই মানুষের আশীর্বাদ তিনিই পাবেন। ইতিমধ্যেই লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন দুই প্রার্থীও। একে অপরের বিরুদ্ধে আনছেন অভিযোগ - পালটা অভিযোগ।
মঙ্গলবারই নন্দীগ্রামে কর্মীসভা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মীসভায় চণ্ডীপাঠ করেন মমতা। একইসঙ্গে নাম না করে বিজেপিকে বিঁধে উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, যারা ৭০ - ৩০ করছে তাদের বলে দেবেন, আমরাই ১০০। সভার পর একাধিক মন্দির ও একটি মাজার যান মমতা। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। কারণ বিজেপি নেতাদের বিভিন্ন সময় মন্দিরে পুজো দিতে দেখা গেলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেভাবে ভোটের আগে কোনও মন্দিরে বা মাজারে যেতে দেখা যায়নি। তাহলে এবার হঠাৎ করে নির্বাচনের আগে মন্দির - মাজারে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
প্রসঙ্গত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়াবেন এই কথা ঘোষণা করার পর শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুলেছিলেন, কার ভরসায় দাঁড়াবেন আপনি? হিসাব তো আমার কাছে আছে। গ্রামগুলি আমি চিনি। ৬২ হাজারের ভরসায় দাঁড়াবেন? পদ্ম তো ২ লক্ষ ১৩ হাজারের ভরসায়। যাঁরা জয় শ্রীরাম বলেন তাঁরাই ২ লক্ষ ১৩ হাজার। ৬২ হাজারেও সিঁধ কাটবো। চিন্তা করতে হবে না। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই ২ লক্ষ ১৩ হাজারের মধ্যে দিয়ে শুভেন্দু মূলত হিন্দু ভোটকেই বোঝাতে চেয়েছেন। এছাড়া বাকি ৬২ হাজার ভোটেও সিঁধ কাটার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। আর যদি সেটা হয় তাহলে তাঁদের ঝুলিতে কিছুটা সংখ্যালঘু ভোটও যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাহলে কি এই ফ্যাক্টরগুলিই মাথাব্যাথা বাড়াচ্ছে মমতার?
বিগত ১০ বছর ধরে দেখা গিয়েছে বারেবারেই সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল। উল্টোদিকে আবার মমতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ তুলেছে বিজেপিও। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শুভেন্দুর কথা অনুযায়ী নন্দীগ্রামের হিন্দু ভোটের বেশিরভাগটা যদি বাস্তবেই বিজেপির দিকে যায় এবং সংখ্যালঘু ভোট যদি সত্যিই ভাগ হয় তাহলে তা যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে খুব একটা সুখকর হবে না তা বলাই বাহুল্য। আর তাই সেকারণেই কি নিজস্ব রাজনীতির চেনা ছকের বাইরে গিয়ে হঠাৎ করে ভোটের আগে মন্দির ও মাজারে মমতা? এভাবেই কি সংখ্যালঘুর ভোটারদের পাশাপাশি হিন্দু ভোটারদের মনেও আরও বেশি করে জায়গা তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি? প্রশ্ন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মনে।