scorecardresearch
 

মোদীর নয়া স্ট্র্য়াটেজিতে নেতাজি,বঙ্গের ভোটে 'ট্রাম্প কার্ড', বিশ্লেষণে জয়ন্ত ঘোষাল

বঙ্গ রাজনীতিতে এখন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু একটা বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছেন। রাজ্য়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে,দরজায় কড়া নাড়ছে বিধানসভা নির্বাচন। পাশাপাশি ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীও এগিয়ে আসছে। বাংলায় নেতাজি নিয়ে নয়া স্ট্র্য়াটেজি নিয়েছেন মোদী। যার খোলসা করছেন জয়ন্ত ঘোষাল।

Advertisement
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু
হাইলাইটস
  • বঙ্গ রাজনীতিতে এখন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু একটা বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছেন।
  • রাজ্য়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে,দরজায় কড়া নাড়ছে বিধানসভা নির্বাচন।
  • বাংলায় নেতাজি নিয়ে নয়া স্ট্র্য়াটেজি নিয়েছেন মোদী। যার খোলসা করছেন জয়ন্ত ঘোষাল।

বঙ্গ রাজনীতিতে এখন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু একটা বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছেন। রাজ্য়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে,দরজায় কড়া নাড়ছে বিধানসভা নির্বাচন। পাশাপাশি ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীও এগিয়ে আসছে। ওইদিনই রাজ্য়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নেতাজির জন্মবার্ষিকীতেই একাধিক অনুষ্ঠান ছাড়াও উদযাপন সভা রয়েছে তাঁর। তবে বাংলার মানুষ নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক বার্তা শোনার পাশাপাশি সুভাষ চন্দ্র বসুর বিষয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকারি অ্য়াজেন্ডা কী তা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন। 

সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে কলকাতার বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে।  স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতাজি সম্পর্কিত প্রদর্শনী হবে সেখানে। সংস্কৃতি মন্ত্রকের উদ্য়োগ নেতাজির বিরল ছবি ছাড়াও একাধিক প্রদর্শনী থাকবে ভিক্টোরিয়ায়। সন্ধ্যেবেলায় সেখানেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মোদীজি। কলকাতার বেশ কয়েকজন বিদ্বজ্জন অংশ নেবেন এই অনুষ্ঠানে। সেখানে রাজ্য়পাল থাকবেন। আয়োজকরা মুখ্যমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সেখানে। ইতিমধ্যেই ২৩ জানুয়ারিকে ভারত সরকার 'পরাক্রম দিবস' ঘোষণা করেছে। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দিনের জন্য জাতীয় ছুটির দাবি করেছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী এই দিনটিকে 'পরাক্রম দিবস' হিসাবেই ঘোষণা করেছেন। এটি ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আইএনএর স্মৃতির সাথে যুক্ত। নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন। তার পরপরই তিনি আইএনএ  নথিগুলি 'ডিস ক্লাসিফাই' করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যা অতীতে বহু বছর ধরে তালাবন্দি ছিল।

এই ক্লাসিফিকেশন প্রক্রিয়ায় নেতাজির পরিবারের সদস্যদেরও যুক্ত করেন নরেন্দ্র মোদী। বিশেষ করে চন্দ্র বসুকে এর সঙ্গে যুক্ত করেন তিনি।  বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণেই চন্দ্র বসুকে এর মধ্য়ে যুক্ত করা হয়। তিনি এই বিষয়ে খুবই সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিজেপির টিকিটে লোকসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। যদিও দক্ষিণ কলকাতা থেকে নির্বাচনে জিততে পারেননি চন্দ্র বসু। মূল প্রশ্ন হ'ল নরেন্দ্র মোদী কি কোনও দিক দিয়ে নেতাজির মধ্য়ে আরও এক বল্লভ ভাই প্যাটেল খুঁজছেন ?  বল্লভ ভাই প্যাটেল গুজরাতের এবং সুভাষ বাংলার, তবে এই দুটি ভিন্ন চরিত্রের মধ্যে একটি যোগ রয়েছে। সুভাষও নেহরু-গান্ধির সাথে আদর্শগতভাবে যুদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তীকালে সুভাষ ও নেহেরু এমনকী গান্ধির বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছিল।

Advertisement

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সুভাষ গান্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি গান্ধিজির প্রার্থীকে পরাজিত করে দলের সভাপতি হন। সেই বিখ্যাত হরিপুরা কংগ্রেস কেবল বাঙালি নয়, ভারতীয়দের কাছে সুপরিচিত। আদর্শগতভাবে নেহেরু এবং নেতাজি সুভাষ সমাজতন্ত্রের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু বাংলার ধারণা, নেহেরু-গান্ধি পরিবার সর্বদা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং সুভাষের ভূমিকাকে প্রান্তিক করে রেখে দিয়েছিল। দিল্লির কাছ থেকে যথাযোগ্য সম্মান পাননি নেতাজি। এমনকি তাইহোকো বিমানবন্দরে নেতাজির মৃত্যু নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। বাংলার ধারণা, দিল্লিতে নেহেরু-গান্ধি পক্ষপাতিত্বের জন্যই নেতাজির মৃত্যু নিয়ে যথাযথ তদন্ত হয়নি। এটা হতে পারে যে, মোদী এখন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজির ভূমিকা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। আগামী দিনে তিনি নেতাজির বিষয়ে কয়েকটি বড় ঘোষণা করতে পারেন। 


এরকম প্রচুর প্রস্তাবের সম্ভাবনা রয়েছে। যার মধ্য়ে একটি প্রস্তাবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নাম পরিবর্তন করে নেতাজির নামাঙ্কিত করতে পারে ভারত সরকার। যদিও এই নিয়ে আপত্তি রয়েছে অনেকেরই। আমলাদের একটি অংশ এই নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে। কারণ তারা মনে করেন, ঐতিহাসিকভাবে রানি ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে জড়িত এই স্মৃতিসৌধ। এছাড়াও  রয়েছে সর্দার প্যাটেলের মতো নেতাজি সুভাষের বিশাল মূর্তি গড়ার প্রস্তাব। তবে কেউই জানেন না, যে আসলে নরেন্দ্র মোদী কী ঘোষণা করতে চলেছেন। তবে মোদী যে নেতাজিকে প্রোজেক্ট করার চেষ্টা করছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এলগিন রোডে নেতাজির বাড়িতে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এই সেই বাড়ি, যেখান থেকে মধ্যরাতে ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে চলে যান নেতাজি। এই বাড়িতে যাওয়ার মাধ্য়মে কি ইতিহাসের নতুন ব্যাখ্যা দিতে চাইছেন মোদী? আসলে মোদী পুনরায় এই নেতাজির ব্যাখ্যা দিতে  চান না। তবে তিনি পশ্চিমবঙ্গবাসীকে দেখাতে চান, যে তিনি সুভাষ বসুর বিষয়ে কতটা সংবেদনশীল এবং মানসিকভাবে একাত্ম। 

নেতাজির পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের। কারণ প্রয়াত শিশির বসুর স্ত্রী প্রয়াত কৃষ্ণা বসুও ছিলেন তৃণমূল সাংসদ। তার ছেলে সুগত বসুও তৃণমূল সাংসদ ছিলেন। এক সময় নেতাজিকে তোজোর কুকুর বলত কম্যুনিস্টরা। অতীতে বামেরা নেতাজির জন্মদিন উদযাপন করতেন না। পরবর্তীকালে তারা বুঝতে পেরেছিলেন,বাংলার মানুষের সঙ্গে নেতাজির অনুভূতি জড়িয়ে রয়েছে। সুতরাং এই বিষয়ে তাদের নেতিবাচক মানসিকতা থাকা উচিত নয়। নেতাজি সম্পর্কে কমিউনিস্টরাও তাদের কৌশল পরিবর্তন করেন। তবে বিজেপি বাজপেয়ী-আদবাণীর সময়, এমনকী আরএসএস এবং সংঘ পরিবারও  নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করত। সেকারণে বাংলায় হিন্দুত্বের রাজনীতি ছাড়াও নেতাজি বর্তমানে একটা বড় 'পলিটিক্যাল স্ট্র্য়াটেজি'। এটা এখন বাংলার 'আইডেনটিটি পলিটিক্স'-এর সঙ্গে জড়িত। যা মোদী-অমিত শাহ ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছেন। তাই নেতাজি তাদের একটা কৌশলের অঙ্গ।

Advertisement