সুষমা স্বরাজ, জয়ললিতা, মায়াবতী, শীলা দীক্ষিত, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া, মেহবুবা মুফতি। সাম্প্রতিক অতীতে এঁদের সবাইকে বসতে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর আসনে। এক এক করে সবাইকে সরতে হয়েছে ক্ষমতা থেকে। রাজস্থানে ভোটের পর বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াও আর ক্ষমতায় নেই। এই আবহে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল তৃণমূলনেত্রী মতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বাংলায় নিজের শাসন ধরে রাখতে পারবেন? নাকি ২০১৯ সালে বিজেপির লোকসভা ভোটে অভতপূর্ব ফলে পর এবার বাংলার মসনদ বদল হবে। সেই বিতর্কের অবশেষে সমাধান হয়েছে। যা দাবি করেছিলেন তাই করে দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০ বেশি আসন নিয়ে ফের একবার নবান্নে বসতে চলেছেন মমতা। কিন্তু এবারের ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। ২০১১ সালের ভোটের থেকেও। দশ বছর আগে মমতা ক্ষমতার পরিবর্তন এনেছিলেন। আর এবার ক্ষমতার পরিবর্তন আটকানো ছিল তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ। আপাতত সেই চ্যালেঞ্জে সসম্মানে উন্নীত মমতা। তৃণমূলনেত্রীর এই জয়ের পেছনে যেমন রয়েছে মুসলিম ভোটের অবদান তেমনি রাজ্যের মহিলার হাত খুলে ভোট দিয়েছে তাঁকে। গত ১০ বছর ধরে এরাজ্যের মেয়েদের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প নিয়েছেন মমতা। চলুন একজনরে দেখে নেওয়া যাক সেই প্রকল্পগুলি।
নারী কল্যাণ মূলক প্রকল্পের কামাল
তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের একের পর এক নারী কল্যাণ মূলক প্রকল্পই যে কামাল দেখিয়েছে ভোট বাক্সে তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পকে ছাপিয়ে গিয়েছে মমতার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। তার সঙ্গে কামাল দেখিয়েছে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী। ইস্তেহারে বাড়ির মহিলাদের ৫০০ টাকা করে হাত খরচা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সব মিলিয়ে একেবারে মমতার ডাকেই সাড়া দিয়েছেন রাজ্যের মহিলারা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহিলা ভোটে এবার নজর ছিল বিজেপির। তবে এক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর 'দিদি, ও দিদি' বলে 'আওয়াজ' বাংলার মানুষ ভালো ভাবে নেননি, বরং অশ্লীল হিসেবেই বিবেচনা করেছেন। বাংলার মেয়েরা তাঁদের সহজাত ইন্দ্রীয় চেতনায় বুঝেছেন, পুরুষ প্রধানমন্ত্রীর এই 'দিদি, ও দিদি'র মধ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি একটি লিঙ্গভিত্তিক আক্রমণ রয়েছে। বাংলা তাই জবাব দিয়েছে মোদী অ্যান্ড কোম্পানিকে।
ঘরের মেয়ের হাতেই বাংলা
তাই শেষপর্যন্ত হ্যাট্রিক করল তৃণমূল কংগ্রেস। ফের বাংলায় সরকার গড়তে চলেছে তৃণমূল। তৃতীয়বারের জন্যমুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী-শাহের ঝোড়ো প্রচারেও বাংলায় পদ্মফোটানো গেল না। দিল্লির নেতাদের আনাগোনাতে বাংলায় তৃণমূলের দুর্জয় ঘাঁটিতে সিঁধ কাটতে পারল নাবিজেপি। হিসেব মিলিয়ে দিলেন পিকে। নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেল তৃণমূল কংগ্রেস। যার জন্য এই রাজ্যের মেয়েদের একটা বড় অবদান রয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১-এর নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, “আমি এক পায়ে বাংলা জয় করব।” তিনি সেটা করে ছাড়লেন। ২০২১-এর ভোটের ফল বুঝিয়ে দিল, বাংলার মানুষ বিজেপিকে প্রতিহত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ভরসা করল। বিজেপিও মেনে নিয়েছে, রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরই বাংলার উন্নয়নের জন্য ভরসা রেখেছে।