ভোট বড় বালাই। নির্বাচনে ভোটারদের আাশীর্বাদ কুড়োতে কত কী না করতে দেখা যায় রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের। নির্বাচন যত এগিয়ে আসে ততই রাজনৈতিক নেৃতৃত্বের সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। 'আমি তোমাদেরই লোক', এমন ছবি তুলে ধরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তাঁরা। রাজনৈতিক মহল মনে করছে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বঙ্গ রাজনীতিতেও লেগে গিয়েছে তার ছোঁয়া। কেউ আদিবাসী পরিবারে পাত পেড়ে খাচ্ছেন, তো কাউকে আবার দেখা যাচ্ছে গ্রামের চায়ের দোকান দাঁড়িয়ে খুন্তি নাড়তে।
যদিও বাংলার রাজনীতিতে এর সূচনা কিন্তু কয়েক বছর আগেই। ২০১৭ সালে উত্তরবঙ্গে আদিবাসী পরিবার রাজু ও গীতা মাহালির বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছিলেন অমিত শাহ। যে ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। সেই শুরু, তারপর সাম্প্রতিক কালে একাধিকবার দেখা গিয়েছে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। গত নভেম্বর মাসে রাজ্যে এসে বাঁকুড়ায় এক আদিবাসী পরিবারে এবং পরের দিন এক মতুয়া পরিবারে দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন অমিত শাহ। তারপর ডিসেম্বর মাসেও বাংলায় এসে একইভাবে মেদিনীপুরে কৃষক পরিবারে এবং বীরভূমে বাউল বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন সারেন তিনি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে এর মধ্যে দিয়ে নিজেদের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবেই প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
অন্যদিকে কিছুটা একই ভূমিকায় তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। গত বছর দিঘায় তাঁকে দেখা গিয়েছিল রাস্তার ধারের দোকানে নিজে হাতে চা বানিয়ে সবাইকে খাওয়াতে। পাশাপাশি লজেন্স বিতরণ করেছিলেন এলাকার বাচ্চাদের মধ্যে। তাছাড়া কখনও আবার জন সংযোগে বেরিয়ে কোনও শিশুকেও কোলে তুলে নিয়েছেন মমতা। আর এবার সরাসরি একেবারে রাস্তার ধারের দোকানে খুন্তি নাড়তে দেখা গেল তাঁকে। বুধবার বীরভূম থেকে ফেরার পথে আদিবাসী গ্রাম বল্লভপুরে নামেন তিনি। একটি দোকানে চা খান। শোনেন মানুষের অভাব অভিযোগ। সেই সময় রান্না হচ্ছিল দোকানে। সেই রান্নাতেই হাত লাগান মমতা। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এর মধ্যে দিয়ে নিজেকে আরও একবার মা মাটি মানুষের প্রতিনিধি হিসেবেই তুলে ধরলেন তিনি।
যদিও তৃণমূল বিজেপি দুই দলই অবশ্য প্রতিপক্ষের এই ধরনের কাজকর্মকে কার্যত রাজনৈতিক গিমিক বলে দাবি করছে। এমনকি তৃণমূল তাঁদের এজেন্ডা অনুসরণ করছে বলেও দাবি করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে এই রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ির মাঝে কারা নিজেদের বেশি 'গরীব দরদী' প্রমাণ করতে পারলো তা অবশ্য বোঝা যাবে নির্বাচনের ফলাফলে।