'তাড়াতাড়ি চলে যান, ট্রেন ছেড়ে দেবে।' হুগলির পুড়শুরায় বেসুরো তৃণমূল নেতাদের প্রতি এমনই কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে আসার আগে কার্যত ইস্তফার হুড়োহুড়ি তৃণমূলের বেসুরো নেতা-নেত্রীদের। আজ, শুক্রবারই রাতে রাজ্যে আসছেন শাহ।
পদত্যাগের হুড়োহুড়ি
বেশ কয়েক দিন ধরেই তৃণমূলের কয়েকজন নেতা, মন্ত্রী প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশালী ডালমিয়া, রথীন চক্রবর্তী, প্রবীর ঘোষাল এঁদের মধ্যে অন্যতম। রাজীব ইতিমধ্যেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন। বৈশালী প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বেসুরো ছিলেন হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তীও। আজ তিনি জানিয়ে দিলেন, বিজেপি-তেই যাচ্ছেন তিনি।
রাজীব যাচ্ছেন?
দল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়ে গত সপ্তাহেই মন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ইস্তফা দিয়েই তিনি গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করতে। আজ বিধায়ক পদেও ইস্তফা দিয়ে দিলেন রাজীব। রাজীব কি বিজেপি-তে যাচ্ছেন? রাজীবের তরফে উত্তর না পাওয়া গেলেও, সদ্য বিজেপি-তে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী আরামবাগের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলেন, 'রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বেসুরো। ৩১ তারিখ বা ৩০ তারিখ কী করবে জানি না। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যদি চলে যায় তিনি কি ডোমজুড়কে বলবে সেজো বোন? উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষালও বেসুরো। প্রবীরদা যদি চলে যায় কী বলবে? ছোট বোনের নাম উত্তরপাড়া? '
প্রবীর ঘোষালের বিজেপি যাওয়ার সম্ভাবনা
গত ২৬ জানুয়ারি সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। তারপর কোর কমিটির সদস্যপদ ও জেলা মুখপাত্রের পদ থেকে ইস্তফা দেন প্রবীর ঘোষাল। যদিও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি তিনি। তবে তাঁকে শোকজ করে তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি পুরশুড়ায় তৃণমূলনেত্রীর সভায় যাননি। দলে সম্মান পাচ্ছেন না ও কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ তোলেন। মঙ্গলবারই কোন্নগরে প্রবীর ঘোষালের সমর্থনে 'আমরা দাদার অনুগামী' পোস্টার পড়েছে।
বৈশালী কী করবেন?
রজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন মন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন, সেদিনই প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাওড়ায় তৃণমূলের বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া। দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গত বেশ কয়েক মাস ধরেই সরব হয়েছিলেন বালির বিধায়ক। প্রকাশ্যেই দলে প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বৈশালী। গত বৃহস্পতিবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্তফার পরেই বৈশালী বলেন, 'রাজীবদার পদত্যাগে দলের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এটা সাধারণ মানুষেরও ক্ষতি। এমন একজন দায়িত্ববান মন্ত্রীর ইস্তফা দলের জন্য সত্যিই দুশ্চিন্তা এবং অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। সত্যিই কাজ করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। প্রত্যেকেই দলকে ভালবাসেন। কিন্তু আত্মমর্যাদাও তো রয়েছে। যাঁদের আত্মসম্মান রয়েছে, তাঁরা দিনের পর দিন এই অপমান মেনে নিতে পারেন না।'