গেরুয়া ঝড়ে উত্তরবঙ্গ ঢেকেছে লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই। কোচবিহার থেকেই সম্প্রতি বিজেপির চতুর্থ পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রতিটি জেলায় পদ্মের স্থানীয় সাংসদ, বিধায়ক, গেরুয়া পতাকায় মোড়া এলাকা। কেবল একটি এলাকা বাদে।
হাইওয়ে ধরে গেলে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরত্ব হাসিমারা রেলস্টেশন থেকে। উত্তরবঙ্গের একেবারে প্রান্তিক এলাকা। যেখানে বিজেপির কোনও ছোঁয়া নেই, নেই 'জয় শ্রী রাম'ও। গ্রামে বসবাস করে ৫ হাজার বাসিন্দা। যার মধ্যে ১৬০৩ জন দেশের প্রাচীনতম এবং প্রায় বিপন্ন হয়ে যাওয়া টোটো উপজাতি। আন্দামানের সেন্টিনেলদের মত এরাও বহির্জগতের মানুষদের সঙ্গে কথাবার্তায় বিশেষ আগ্রহী নয়।
তবে বাংলা ভাষা বলতে পারা ভক্ত টোটো জানালেন এখন তাঁরা ক্রমশ সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসছে। এর নেপথ্যে রয়েছে সন্তোষ ভট্টাচার্য। যিনি এই টোটো জাতিদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বাংলা শিখিয়েছেন। ভক্ত টোটো বাংলা বললেন একেবারে সাবলীলভাবে। তিনিই মাদারিহাটের গ্রামীণ ব্যাঙ্কে কর্মরত। তাঁর মেয়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন।
উত্তরবঙ্গে যেখানে গেরুয়া ঝড়ের প্রাবল্য বাকি দল কার্যত হাওয়া, সেখানে এই গ্রামে সেই গেরুয়ার লেশমাত্র নেই। পদ্ম তো দূর, সুবাসটুকুও নেই। প্রশ্ন শুনেই ভক্ত টোটো বলেন, "এখানে বিজেপির কেউ আসেনি। এই এলাকা একমাত্র তৃণমূলেরই। এই দল আমাদের এখানের উন্নতির জন্য অনেক কাজ করেছে। যদিও বামেরাই প্রথম আমাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। খাবার ও জলের ব্যবস্থা যা করার সব বামেরাই করেছিল।"
উত্তরবঙ্গের এই সীমান্ত গ্রামটিতে এখনও জল অপর্যাপ্তই। ভক্তের কন্যা জানান যে ভূটান সরকার পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির জন্য ডলোমাইট বিস্ফোরণ করে মাঝে মধ্যেই।যার জেরে মূল নদী বাঁক নিয়ে সরে গিয়েছে। তাই জলের অভাব আজও রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইতিহাস জানায় এই টোটো উপজাতি আসলে রাজবংশীদের একটি অংশ। এরা কিন্তু নিজেদের অজান্তেই গো-মাংস খেয়ে থাকেন। ভারত-ভূটান সীমান্তেই এদের বাস। যদিও ১৮৬৪-৬৫ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে ভূটানের যুদ্ধে এদের অনেকে কেউ ভূটান কেউ ভারতের এই গ্রামে চলে আসে। এই জাতির গঠন ও গড়নের জন্য ব্রিটিশরা এদের মঙ্গোলিয়ান হিসেবেই দেখত বলে জানা যায়।
বর্তমানে সাত সমুদ্র পেরোতে না হলেও আটটি নদী পেরিয়ে এই গ্রামে পৌঁছতে হয়। যদিও সব'কটি খরা। বর্ষায় অবশ্য সে রূপ অন্য। টোটোদের গ্রামে বিজেপি হাওয়া না পৌঁছলেও তাঁরা এখন 'আত্মনির্ভর'। তবে নিজেদের স্বতন্ত্রতা বিসর্জন দিয়ে নয়। টোটো ভাষা, শব্দমালা নিয়ে কাজ করছেন অনেকেই। বাংলাভাষী রাজবংশীদের এই গ্রাম 'বাংলার মেয়ে'কে চায় না কি গেরুয়া হাওয়াতে ভাসবেন তা আপাতত শুকিয়ে যাওয়া নদীর মতোই প্রশ্ন হয়ে থাক।