২০১১ সাল। ৩৪ বছরের বাম শাসনকে উৎখাত করে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। সেবারও ডোমকলকে হাতছাড়া হতে দেয়নি সিপিআইএম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্যের অনেক বাম নেতা তৃণমূলে নাম লেখান। দেখতে দেখতে হাজির হয় ২০১৬-র বিধানসভা ভোট। ফলাফলে দেখা যায়, ডোমকলে ঘাসফুল ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। সৌজন্যে আনিসুর রহমান। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। টানা ছয় বারের বিধায়ক। সেই ১৯৯১ সাল থেকে টানা এই কেন্দ্রে জিতে আসছেন তিনি। তবে এবার প্রার্থী হননি। কারণ, বয়স। তাঁর জায়গায় সিপিএমের হয়ে লড়ছেন মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু, ডোমকলের ভোটারদের একাংশ এখনও মনে করেন, মোস্তাফিজুর নন, তাঁদের কাছে প্রার্থী আনিসুরই। বিজেপি-র রমরমার মধ্যেও ডোমকল কেন্দ্রে জেতার বিষয়ে আশাবাদী আনিসুরসাহেব।
প্রশ্ন: আপনি তো এবার ভোটে দাঁড়ালেন না?
আনিসুর: না, বয়সের কারণে আর পারলাম না। তবে মানুষের সঙ্গে আছি। যেভাবে আগে ছিলাম। আজও। তবে আগের মতো অতটা শরীরের জোর নেই। মনের জোর দিয়েই চালাচ্ছি।
প্রশ্ন: ডোমকল মানেই তো আনিসুর রহমান। আপনি প্রার্থী হননি। কর্মীরা হতাশ নন?
আনিসুর: হতাশ কেন হবে? সিপিএম তো ব্যক্তি কেন্দ্রিক দল নয়। আমাকে দল যা নির্দেশ দিয়েছে, তাই মেনে চলেছি। আমাকে দেখে মানুষ ভোট দিত, এটাও বিশ্বাস করি না। দলই শেষ কথা। তবে আমার মনে হয়, আমি এখানে মানুষের সাহায্যে সংগঠনে মজবুত করতে পেরেছিলাম। মানুষের ভালো-খারাপের সময়ও তাদের পাশে থেকেছি। তাই ভোট পেয়েছি।
প্রশ্ন: ২০১১, ১৬ সালেও দুর্গকে অক্ষত কীভাবে রাখলেন?
আনিসুর: ওই যে বললাম সংগঠন। আপনি এখানে যে কোনও গ্রামে, হাসপাতালে, পাড়ায় যান, নিজেই বুঝতে পারবেন সংগঠন কতটা মজবুত আছে আজও। দিনের পর দিন পরিশ্রম করে এই সংগঠন গড়ে তুলতে হয়েছে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম কি একদিনে নষ্ট হয়?
প্রশ্ন: কিন্তু, এবার তো বিজেপিও এসেছে। ২০১৯ লোকসভায় ফলাফলও ভালো করেছে
আনিসুর: ঠিকই। ভালো রেজাল্ট করেছে তো। তবে রেজাল্ট শেষ কথা নয়। মানুষের সঙ্গে থাকাটাই আসল কাথা। তখন হাওয়া ছিল মোদীর। ধর্মকে হাতিয়ার করে ওরা মেরুকরণ করেছে। মানুষকে মিথ্যে বলেছে। কিন্তু, মিথ্যে দিয়ে তো বেশিদিন চলে না।
প্রশ্ন: কিন্তু, সংসদীয় রাজনীতিতে ভোটের ফলাফলই তো শেষ কথা বলে
আনিসুর: হ্যাঁ, তা বলে। কিন্তু, মিথ্যে বেশিদিন টেকে না। মানুষ ধরে ফেলে। দেখছেন না, মমতার মিথ্যে কীভাবে ধরা পড়ছে এক এক করে।
প্রশ্ন: আপনিই বলছেন, বিজেপি ধর্ম নিয়ে খেলছে, তাহলে ডোমকলেও তো তার প্রভাব পড়বে?
আনিসুর: না পড়বে না। তৃণমূলও একইভাবে এখানে জেতার চেষ্টা করেছিল। পারেনি। বিজেপিও পারবে না। কারণ, মাটি। ধর্মনিরপেক্ষ মাটি এটা। এখানে হিন্দু-মুসলমান সবাই নির্বিবাদে থাকে। একে অপরের ভাই হয়ে। বিজেপি চক্রান্ত করলেও পারবে না।
প্রশ্ন: এবার তো মোস্তাফিজুর প্রার্থী, ওর আর আপনার অভিজ্ঞতার ফারাক তো অনেক?
আনিসুর: হ্যাঁ, ও আমার থেকে বয়সে ছোটো। কিন্তু, বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে অনেকদিন ধরে যুক্ত। ডোমকলের সঙ্গেও। তাই ওর পক্ষে নির্বাচনে লড়া ও জেতা বড় ব্যাপার নয়।
প্রশ্ন: কিন্তু, যদি জিততে না পারে?
আনিসুর: ও জিতবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমি মানুষের সঙ্গে কথা বলে সেরকম আভাস পেয়েছি। আর যদি হেরে যায়, তাহলে খারাপ লাগবে। তবে হার-জিত আছেই। শুধু মানুষের পাশে থেকে ভোটে জেতা যায় না, এটা তো প্রমাণিত সত্য।
প্রশ্ন: আর আপনার দলের ভবিষ্যৎ?
আনিসুর: দল কাজ করছে। চেষ্টা করছে। নতুন মুখকে সামনে আনছে। এটা ভালো ইঙ্গিত। এই তো কয়েকদিন আগে সিঙ্গুরের আমাদের প্রার্থী সৃজন আমার কাছে এসেছিল। অনেক কথা হল। ভালো লাগল। আর দল তো একদিনে গড়ে ওঠেনি। তিল তিল করে গড়ে উঠেছে। এত সহজে ভাঙবে কেন? ওঠা-নামা আছে সবক্ষেত্রেই। আমাদের দলের ক্ষেত্রেও সেটাই সত্যি। কিন্তু, মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে।
প্রশ্ন: তৃণমূল এবার ক্ষমতায় আসবে?
আনিসুর : কে আসবে কে যাবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। তবে বিজেপি ও তৃণমূলকেল মানুষ প্রত্যাখ্যান করবেই। আজ না হলেও কাল।
জয়ের বিষয়ে আশাবাদী এবারের ডোমকলের সিপিএম প্রার্থী মোস্তাফিজুরও। তিনি বললেন, 'আমরাই জিতব। তবে স্থানীয় পুলিশকে বিশ্বাস করি না। পুলিশ ও তৃণমূল মিলে ঝামেলা করতে পারে। যদি মানুষ ভোট দিতে পারে, অবাধে ভোট হয় তাহলে এবারও দুর্গ অক্ষতই রাখব আমরা।'