দ্বিতীয় দফার ভোটকে এক কথায় 'নন্দীগ্রামের যুদ্ধ' (Nandigram) বললে অত্যুক্তি হবে না। ৩০টি আসনে দ্বিতীয় দফায় ভোট। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বনাম শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। অন্য আসনগুলিতেও মোটের উপরে লড়াইটা তৃণমূল বনাম একদা বাম বা কংগ্রেসের নেতা, বর্তমানে বিজেপি-র প্রার্থী।
দ্বিতীয় দফায় যে ৩০টি আসনে ভোট হচ্ছে, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই ৩০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ২১টি আসন। এবারে বিজেপির হানায় গতবারের ফল ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ ঘাস-ফুল শিবিরের কাছে। ২০১৬ সালে, এই ৩০টি আসনে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ১টি আসন। ভোট শতাংশের নিরিখে ৭ শতাংশ। ২০১১ সালের চেয়ে অবশ্য দ্বিগুণ। বামেরা পেয়েছিল ৫টি ও কংগ্রেস পেয়েছিল ৩টি আসন।
সবচেয়ে হাইভোল্টেজ লড়াই
গোটা দেশের চোখ এখন নন্দীগ্রামে। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক লোকসভার অন্তর্গত এই আসনটি সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল আসন। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর লড়াই ছাড়াও সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়কেও বাজি রাখছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
২০১৬ সালের নির্বাচনে এই আসনেই বিপুল ভোটে জিতেছিলেন তত্কালীন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। ৬৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। বামেরা ২৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৫ শতাংশ। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে নাটকীয় ভাবে সমীকরণটা বদলে যায়। তমলুকে ৩৭ শতাংশ ভোট পায় বিজেপি। ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী তমলুক লোকসভা আসনে জিতেছিলেন। বামেরা মাত্র ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অধিকারী ভাইরা ও তাঁদের বাবা শিশির অধিকারী এখন বিজেপি-তে।
হলদিয়া
২০১৬ সালে এই আসনে সিপিআইএম প্রার্থী তাপসী মণ্ডল জিতেছিলেন ৫০ শতাংশের বেশি ভোটে। তৃণমূলের মধুরিমা মণ্ডলকে ২১ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন। বিজেপি প্রার্থী প্রদীপ কুমার বিজলি মাত্র ১৩ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন। গত বছর সেই বামেদের সেই তাপসী মণ্ডল বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। তিনি এবারের নির্বাচনে পদ্ম প্রতীকে লড়ছেন হলদিয়া আসনে। তৃণমূলের প্রার্থী স্বপন নস্কর ও সিপিআইএম মনিকা কর পাইক।
তমলুক
২০১৬ সালে প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক দিন্দা সিপিআই প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন এই আসনে। হারিয়েছিলেন তৃণমূলের নির্বেদ রায়কে। এবারে সিপিআই প্রার্থী করেছে গৌতম পান্ডাকে। তৃণমূল প্রার্থী সৌমেন কুমার মহাপাত্র ও বিজেপির হরেকৃষ্ণ বেরা। দিন্দা ওই জেলারই ময়না থেকে লড়ছেন বিজেপির টিকিটে।
বাঁকুড়া
এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির প্রার্থী নীলাদ্রি শেখর দানা ও কংগ্রেসের প্রার্থী রাধারানি বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে এই আসনে জিতেছিলেন শম্পা দরিপা। ৪২.৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভায় বিধানসভাওয়াড়ি ফলে বাঁকুড়ায় লিড বিজেপির। অতএব তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জ।
খড়গপুর সদর
এই আসনটি মেদিনীপুর লোকসভার অন্তর্গত। সাংসদ বিজেপির রাজ্যসভাপতি দিলীপ ঘোষ। বর্তমান বিধায়ক তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। দিলীপ ঘোষ লোকসভায় প্রার্থী হওয়ায় এই আসনে ২০১৯ সালে উপনির্বাচন হয়। সেখানেই জয়ী হন প্রদীপ। এবারে এই বিধানসভা আসনে বিজেপির প্রার্থী অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
তমলুক, বড়জোড়া, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, পাঁশকুড়া পশ্চিম ও পাঁশকুড়া পূর্ব-- এই আসনগুলি দ্বিতীয় দফার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং আসন। কারণ গত বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনগুলিতে জয়ের মার্জিন খুবই ক্ষীণ ছিল। যেমন ২০১৬ সালে তমলুক ও বড়জোড়ায় জয়ের মার্জিন ১ হাজারেরও কম ছিল। তমলুকে তৃণমূলের নির্বেদ রায়কে মাত্র ৫২০ ভোটে হারিয়েছিলেন সিপিআই প্রার্থী অশোক দিন্দা। বড়জোড়ায় তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী মাত্র ৬১৬ ভোটে সিপিআইএম-এর সুজিত চক্রবর্তীর কাছে হেরেছিলেন।
নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় ১৭১ জন প্রার্থী কোটিপতি। ৪৩ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা রয়েছে। তৃণমূলের ১১ জন কোটিপতি প্রার্থী, বিজেপির ১০ জন।