scorecardresearch
 

'বঙ্গভঙ্গ' নিয়ে অস্বস্তিতে রাজ্য BJP, নেপথ্যে অন্য কোনও 'খেলা'?

একুশের ভোটে ক্ষমতা দখল করা যায়নি কিন্তু মেরেকেটে আর আড়াই বছর পর দেশে লোকসভা নির্বাচন। ২০১৯-এ বাংলা থেকে ভাল ফল করে চমকে দিয়েছিল গেরুয়া বাহিনী। কিন্তু ২০২৪ সালে সেই ফল ধরে রাখাই পদ্ম শিবিরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এই আবহে দলীয় সাংসদদের মুখে বঙ্গভাগের কথা বিজেপির প্রতি রাজ্যের মানুষের বিরক্তি বাড়িয়ে দিতে পারে তেমন আশঙ্কা রয়েছে। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে বিব্রত দিলীপ ঘোষরা। আর এটাতেই অন্য খেলা দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এটা বাইরে থেকে দলের অন্দরে কোন্দল বাড়ানোর কৌশল হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁদের অনেকেই। তার স্বপক্ষে যুক্তিও সাজিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement
বিজেপির দলীয় সাংসদদের মুখে বঙ্গ ভাগের কথা বিজেপির দলীয় সাংসদদের মুখে বঙ্গ ভাগের কথা
হাইলাইটস
  • বিজেপির দলীয় সাংসদদের মুখে বঙ্গ ভাগের কথা
  • এতে দলের প্রতি মানুষের বিরক্তি আরও বাড়তে পারে
  • পরিকল্পনা করেই কি এমন মন্তব্য সাংসদদের, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন


নির্বাচনের পর যেন সব তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। কোথায় বাংলা দখল করবেন আশা ছিল নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহদের, তার বদলে এখন দলের ভাঙন আটকানোই দিলীপ ঘোষদের কাছে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলবদল তো রয়েইছে তার মধ্যে নতুন করে সংযোজন দলের দুই সাংসদের উস্কানি মূলক মন্তব্য। একুশের ভোটে ক্ষমতা দখল করা যায়নি কিন্তু মেরেকেটে আর আড়াই বছর পর দেশে লোকসভা নির্বাচন। ২০১৯-এ বাংলা থেকে ভাল ফল করে চমকে দিয়েছিল গেরুয়া বাহিনী। কিন্তু ২০২৪ সালে সেই ফল ধরে রাখাই পদ্ম শিবিরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এই আবহে দলীয় সাংসদদের মুখে বঙ্গভাগের কথা বিজেপির প্রতি রাজ্যের মানুষের বিরক্তি বাড়িয়ে দিতে পারে  তেমন আশঙ্কা রয়েছে। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে বিব্রত দিলীপ ঘোষরা। আর এটাতেই অন্য খেলা দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এটা বাইরে থেকে দলের অন্দরে কোন্দল বাড়ানোর কৌশল হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁদের অনেকেই। তার স্বপক্ষে যুক্তিও সাজিয়েছেন তাঁরা।

তারকা MP-MLA-দের নানা কেচ্ছার অভিযোগ, বিড়ম্বনায় তৃণমূল?

বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর দু'মাসও হয়নি। রাজ্যে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা নিয়ে সুর চড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। হাইকোর্টও বাংলার রাজনৈতিক হিংসা ও ঘরছাড়াদের নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তাই নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের কাছে রিপোর্টও তলব করা হয়েছে। আর এর মাঝেই ‘বঙ্গভঙ্গ’ তথা পৃথক রাজ্য তৈরির দাবি জানিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্কের শীর্ষে বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের স্বার্থে পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের দাবি তুলেছেন তিনি। বার্লার দাবির পর বোমা ফাটিয়েছেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁও। পৃথক জঙ্গলমহল রাজ্য গঠিত হোক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করতে গিয়ে এমনই দাবি তুলেছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। এ নিয়ে নানা যুক্তিও সাজিয়েছেন সৌমিত্র। স্পষ্টতই  দুই সাংসদের এমন মন্তব্যে রীতিমতো অস্বস্তিতে বিজেপি।

Advertisement

উপনির্বাচন না হলে বাঁচবে মমতার কুর্সি? আইন যা বলছে...

জন বার্লা ও সৌমিত্র খাঁর এমন মন্তব্যের পর স্বভাবতই  রাজ্য রাজনীতি উত্তাল। গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে বঙ্গভঙ্গে মদতের অভিযোগ করছে শাসক তৃণমূল। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজেপি বাংলাকে অবিভক্ত রাখতে চায় বলতে হচ্ছে দিলীপ ঘোষদের। বিজেপির লক্ষ্য অখণ্ড পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন এমন দাবি করা হচ্ছে।  দিলীপবাবু স্পষ্ট জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল হোক এমন দাবি সমর্থন করে না বিজেপি। একই সুর রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের গলাতেও। আজতক বাংলাকে  শমীকবাবু বলেন, "অখন্ড বাংলার সুষম উন্নয়নই ভারতীয় জনতা পার্টির লক্ষ্য। তবে স্বাধীনতার পর কংগ্রেস-বাম ও তৃণমূল কোনও আমলেই জঙ্গলমহল হোক বা উত্তরবঙ্গ, উন্নয়নের আলো দেখেনি। সেই ক্ষোভেরই হয়তো বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে কারও কারও বক্তব্যে। তবে দল কোনওভাবেই বাংলা ভাগের পক্ষে নয়।" শমীক ভট্টাচার্য জানান, জিটিএ চুক্তি করার সময় বরং গোর্খাল্যান্ডের শর্ত মেনে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও অভিযোগ করেন, বাংলা ভাগ করতে চায় এমন নেতা (বিমল গুরুং) রয়েছেন মমতার আশ্রয়েই। তবে এসবের মধ্যে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে যে দুই নেতা বঙ্গভঙ্গের কথা বলেছেন তাঁদের নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ দু'জনেই একসময় মুকুল রায়ের  হাত ধরে বিজেপিতে আসেন। এমনকি একসময় মুকুলকে নিজের রাজনৈতিক গুরুও বলেছিলেন সৌমিত্র। এই অবস্থায় মুকুল দল ছাড়তে সৌমিত্র তাঁকে মীরজাফর বলেলও তা পাত্তা দিতে চাইছেন না ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। বরং তাঁদের যুক্তি সুচারু ভাবে বিজেপির অন্দরে দলীয় কোন্দল বাড়িয়ে দেওয়াই এর পেছনের পরিকল্পনা হতে পারে। আর এখানেই উঠে আসছে বাংলার চাণক্য হিসেবে পরিচিত মুকুল রায়ের নাম। যদিও বিজেপি সুংসগঠতি দল। চক্রান্ত করেও কোনও লাভ হবে না বলে স্পষ্ট জানাচ্ছেন শমীক ভট্টাচার্য। 

 

দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল হোক এমন দাবি সমর্থন করে না বিজেপি
দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল হোক এমন দাবি সমর্থন করে না বিজেপি

 

২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পর উত্তরবঙ্গে গেরুয়া ঝড় উঠেছিল। কিন্তু একুশের বিধানসভা ভোট মিটতেই সে ছবিতে বদল এসেছে। এরইমধ্যে  বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়েছেন দলেরই সাংসদ জন বার্লা। উত্তরবঙ্গকে তিনি কোনও ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দেখতে চান না। অর্থাৎ ‘বঙ্গভঙ্গ’ চাইছেন বিজেপি সাংসদ। সে কারণেই বিজেপি শিবিরে ভাঙন শুরু হয়েছে । বাংলা ভাগের দাবির বিরোধিতায় দল ছাড়ার হিড়িক দেখা যাচ্ছে। সোমবারই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। মুকুল রায়, ব্রাত্য বসু, সুখেন্দুশেখর রায়ের উপস্থিতিতে শাসকদলে যোগ দেন ডুয়ার্সের এই দাপুটে বিজেপি নেতা। গঙ্গাপ্রসাদ ছাড়াও শিবির বদল করেছেন  আলিপুরদুয়ারের সাধারণ সম্পাদক বীরেন্দ্র বরা, জেলার সম্পাদক বিনোদ মিঞ্জ ও অসীম কুমার লামা, সহ সভাপতি বিপ্লব সরকার, কুমারগ্রাম মণ্ডল প্রেসিডেন্ট নিশান লামা, কালচিনি বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক কৃপাশঙ্কর জয়সওয়াল, কালচিনির সহ আহ্বায়ক কিশোরকুমার বিশ্বকর্মা। রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ মনে করছে, মুকুল রায় তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের দিয়ে বিজেপির অন্দরে কোন্দলের সৃষ্টি করতে চাইছেন। সেই কোন্দলের পথেই আসবে ভাঙন। ঠিক যেভাবে উত্তরবঙ্গে ভাঙন ধরেছে, সেভাবেই সৌমিত্রর দাবির পর রাঢ়বঙ্গেও এবার আঘাত আসতে পারে।

 

বিতর্কের কেন্দ্রে সৌমিত্র খাঁ
বিতর্কের কেন্দ্রে সৌমিত্র খাঁ

 

গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, হঠাৎ আলাদা আলাদা রাজ্যের দাবি তোলা দলের পরিকল্পনাতেও ছিল না। এমনকি ২০০৯ সাল থেকে দার্জিলিং বিজেপির দখলে থাকলেও কখনই পৃথক গোর্খাল্যান্ডকে সমর্থন জানায়নি দল। যদিও কংগ্রেস নেতা তথা অরুণাভ ঘোষ জানাচ্ছেন, রাজ্য ভাগ করার অধিকারের কথা  সংবিধানে রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজ্যের বিধানসভার অনুমতির প্রয়োজন হয়। তবে শেষপর্যন্ত আইন পাস হবে সংসদেই। তাই বিধানসভা অনুমতি না দিলেও কেন্দ্র চাইলে  রাজ্য ভাগ করতে পারে। ঠিক এভাবেই বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশে ভেঙে তেলেঙ্গনা বা মধ্যপ্রদেশ ভেঙে ছত্তিশগড় গঠিত হয়েছিল।

Advertisement

 

Advertisement