দীর্ঘদিন ধরেই বহু মানুষ সান্দাকফু রুটে ট্রেকিংয়ে যেতে টাট্টু ঘোড়ার সাহায্য নেন। সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে বহু প্রজন্ম থেকে টাট্টু বা পনি ব্যবহার করেন। এক-একটা পনি ১০০ কেজির বেশি ওজনের পণ্য নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারে। ফলে এই রুটে ট্রেকাররা পনির পিঠে পণ্য চাপিয়েই ট্রেকিংয়ে বের হন। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক শতাব্দীর সেই রীতিতে ছেদ পড়তে চলেছে। আর হয়তো টাট্টুর পিঠে চড়ে সান্দাকফুতে চড়তে পারবেন না। সৌজন্যে বনদফতরের একটি ঘোষণা।
কেন টাট্টুতে নিষেধাজ্ঞা?
সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে পনি চলাচল নিষিদ্ধ করল বন দফতর। ফলে সান্দাকফু রুটে ট্রেকিংয়ে (Sandakphu) যাওয়ার সময় ট্রেকাররা আর এই টাট্টু ব্যবহার করতে পারবেন না। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পনির মাধ্যমে সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে বসবাসকারী পশুপাখির মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে আশঙ্কাতেই এটি বন্ধ করা হল। বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম টাট্টুগুলি এখানে রয়েছে। সেগুলি থেকে কোনও রোগ ছড়ানোর নজির নেই। ফলে এই নির্দেশ বাতিল করা হোক।
প্রায় ৭৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে রেড পান্ডা, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার সহ ৩৫০ প্রজাতির পাখির বসবাস। ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ সরকার সিকিমের কাছে এই বনাঞ্চল কিনে এটিকে সংরক্ষিত হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। ১৯৯২ সালে সিঙ্গালিলাকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করে এই অঞ্চল পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সান্দাকফু ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১,৯০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। বছরের অনেকটা সময় এখানে তুষারপাত হয়। পাশাপাশি এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং মাউন্ট এভারেস্ট খুব সুন্দর দেখা যাওয়ায় পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই সান্দাকফু এলাকা।
এই সিদ্ধান্তে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, কয়েক প্রজন্ম থেকে চলে আসা পনি নিষিদ্ধ হওয়ায় পর্যটনশিল্পের ক্ষতির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সমস্যায় ফেলবে। পনি নিষিদ্ধ করার আগে এখানে সড়ক যোগাযোগ গড়ে তোলার দাবি উঠেছে। বন দপ্তরের দাবি, পনি থেকে সেখানকার পশুপাখিদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু পর্যটনই নয়, পাশাপাশি এখানে রাস্তাঘাট না থাকায় স্থানীয়রাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পণ্য পরিবহণ, কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পুরোটাই পনির পিঠে চাপিয়েই করতে হয়। পনির ব্যবসার সঙ্গে বহু মানুষ যুক্ত রয়েছেন।
সান্দাকফু ট্রেকিংয়ে বর্তমানে প্রায় পাঁচদিন সময় লাগে। ট্রেকারদের মাথাপিছু প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। টাট্টু নিষিদ্ধ হওয়ায় এখন ট্রেকারদের মালবাহক নিতে হবে এবং এর জন্য খরচ অনেকটাই বাড়বে। প্রশাসন সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে আগে যানবাহন চলাচলের মতো রাস্তা তৈরি করে তার পরেই পনি নিষিদ্ধ করুক। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এখানে প্রায় ২০টি গ্রাম রয়েছে। ৪০টিরও বেশি হোমস্টে রয়েছে। পনি না পেয়ে ট্রেকাররা মুখ ফিরিয়ে নিলে এখানকার অর্থনীতিও মুখ থুবড়ে পড়বে।