দুমাস ধরে চা কারখানায় কাজ পাচ্ছেন না কর্মীরা। ফলে সমস্যায় পড়ছেন ৪০ জন শ্রমিক। বাড়িতে দানা পানি নেই। কখনও চেয়ে কখনও ধার করে চলছে দুবেলার পোষণ। এভাবে দীর্ঘদিন কীভাবে চলবে জানেন না ৪০টি পরিবারের সদস্যরা। ফলে শেষমেষ বাধ্য হয়ে অধিকার আদায়ের দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলনে নামলেন শ্রমিকদের পরিবার।
চা শ্রমিকদের দাবি, তাঁরা মোট ৪০ জন শ্রমিক রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ১৬ জন স্থায়ী। এঁদের মধ্যে ১২ জনের প্রভিডেন্ড ফান্ড রয়েছে। বাকি ৪ জন স্থায়ী হলেও তাঁদের কোনও প্রভিডেন্ড ফান্ড নেই। মোাটের উপর বাকি ২৪ জন অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক।
এক স্থায়ী কর্মী লক্ষ্মী সিং জানালেন, আগে ঠিক থাকলেও মালিক কেডিয়া মূলত ম্যানেজারের পরামর্শেই তাঁদের কাজে বঞ্চিত রাখছেন। তাঁদের গত দুমাস থেকে নিয়মিত কাজ দেওয়া হচ্ছে না। এমনকী স্থায়ী শ্রমিকদেরও মাঝে মধ্যে দুএকদিন কাজ করালে সেই অনুযায়ী অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের মতো কাজ করানো হচ্ছে। ফলে তাঁদের দিনযাপন করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। অপর একজন স্থায়ী কর্মী জানান, স্থায়ী কাজের জায়গায় কাজ না পেলে অন্য কোথাও কেউ অল্প কিছুদিনের জন্য কাজে নিচ্ছে না। ফলে এভাবে আর কিছুদিন চললে আত্মঘাতী হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।
শুক্রবার শিলিগুড়ির নকশালবাড়ির পরশুরাম টি ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড কারখানায় চা কারখানার সামনে সিপিএমের কর্মী সংগঠন সিটুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করেন চা শ্রমিকরা। আন্দোলনে কাজ না হলে আইনি পথে যাওয়ার হুমকিও দেন তাঁরা।
কারখানার মালিক গোাবিন্দ কেডিয়া জানান, শ্রমিকদের সমস্যা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাজ না থাকলে বেতন দেওয়া সম্ভব নয়। আর এটা করতে হলে সুনির্দিষ্ট আইন আনতে হবে, যাতে সবার জন্য আইন সমান হয়। তবে শনিবার থেকে তিনি পাতা সংগ্রহের চেষ্টা করবেন। কারণ বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হওয়ায় কিছু পাতা ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর দাবি, কারখানা বন্ধ রাখতে তিনিও চান না। একদিন কারখানা বন্ধ থাকলে প্রচুর টাকার ক্ষতি হয়। সমস্যার সমাধানে তিনি আগ্রহী।
সিটু নেতা গৌতম ঘোষ জানান, শ্রমিকদের অন্য কোনও বিকল্প নেই। অন্যদিকে ইচ্ছে করলে মালিক অন্য বাগান থেকে পাতা এনে কাজ চালাতে পারেন। তাহলে প্রোডাকশনও ঠিক থাকে, আবার শ্রমিকদের ঘরও বাঁচে। মালিকের সঙ্গে কথা বলে, বিক্ষোভ দেখিয়ে কোনও কাজ না হলে শ্রম আইনে তাঁরা পদক্ষেপ করবেন বলেও হুমকি দেন। অন্যদিকে আইএনটিটিইউসির স্থানীয় নেতা নির্জল দে মালিকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে সত্যি চা পাতা হয়নি। পাতা না হলে তা কারখানায় আসছে না। আর কারখানায় পাতা না এলে চা তৈরি করা সম্ভব নয়।
শ্রমিকদের বিকল্প কাজে লাগানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। চা বাগানের শ্রমিকদের পাতা তোলার বাইরেও বাগান পরিষ্কার, কিংবা বাগান পরিচর্যার কাজে লাগানো সম্ভব। কিন্তু কারখানায় প্রোডাকশনের কাজ ছাড়া বিকল্প কাজ নেই বললেই চলে। আর যে কাজ আছে তাতে স্কিলড লেবার প্রয়োজন হয়। যন্ত্রাদির কাজে প্রোডাকশনের কর্মীদের লাগানো সম্ভব নয়।