উত্তরবঙ্গকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ জন বারলা। এবার সাংসদের এই দাবিতে সুর মেলালেন বিজেপির উত্তরবঙ্গের আরও দুই বিধায়ক। এই দুই বিধায়ক হলেন মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মণ ও ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জী। অন্যদিকে বিজেপি সাংসদদের মন্তব্যে তুমুল সমালোচনা করেছে তৃণমূল। এদিন দলের পক্ষে থেকে জন বারলা ও সৌমিত্র খাঁয়ের কুশপুতুল পোড়ানো হয়।
এদিন মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মণ বলেন, "উত্তরবঙ্গ দীর্ঘদিন ধরেই বঞ্চিত। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৭৪ বছর হয়ে গেল কিন্তু উত্তরবঙ্গের মানুষ চিরকাল বঞ্চিতই থেকে গেছে। এইমস হওয়ার কথা ছিল উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জে। রায়গঞ্জের পরিবর্তে সেই এইমস দক্ষিণবঙ্গের কল্যাণীতে চলে যায়। এছাড়া উত্তরবঙ্গে এসএসসি নিয়োগের জন্য নর্দার্ন জোন ছিল সেই জোনটাকেও পরবর্তীকালে তুলে দেওয়া হয়। এরফলে উত্তরবঙ্গের ছেলেমেয়েরা স্কুল শিক্ষার চাকরীর ক্ষেত্রে বঞ্চিত। স্বাভাবিক ভাবেই উত্তরবঙ্গ দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত ও বঞ্চিত হয়েই থেকেছে। উত্তরবঙ্গে উত্তরকন্যা করা হয়েছে কিন্তু সেই উত্তরকন্যায় কোন কাজ হয় না। সেখানে কোন মন্ত্রী-আমলারা বসে না। উত্তরবঙ্গের সমস্যা সমাধানের কোনো চিন্তা-ভাবনা করা হয় না। উত্তরকন্যায় এর আগে উত্তরবঙ্গের একজন অন্তত মন্ত্রী থাকতো এবারে সেটাও নেই। উত্তরবঙ্গে যেসব মন্ত্রী রয়েছেন তারা অর্ধেক মন্ত্রী হয়ে রয়েছেন। উত্তরবঙ্গে যেমন নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ রয়েছে তেমনি কিছু দূরেই চীন। স্বাভাবিকভাবেই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দিক থেকে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। স্বাভাবিকভাবেই উত্তরবঙ্গের জন্য সরকারের এই যে বঞ্চনা তার বিরুদ্ধে সরব হয়েই মানুষ পৃথক রাজ্য কিংবা কেন্দ্রের শাসনের দাবী করছে। কেন্দ্র এ বিষয়ে নিশ্চয়ই ভাবনা চিন্তা করবে। উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রতি যে বঞ্চনা তার বিরুদ্ধে আমরা সরব হব।
অন্যদিকে মঙ্গলবার সাংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সরকার যদি এখানকার উন্নয়ন করতে না পারে তাহলে এই জায়গাটা ছেড়ে দিক। উত্তরবঙ্গের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমরা চাইছি আগামী দিন এখানে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হোক।" তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, "আলাদা রাজ্য মানুষ কখন চায়? যখন উন্নয়ন হয় না। উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্য চাইছে এটা মানুষের আবেগে জড়িয়ে গেছে। কামতাপুরি চাইছিল, গোর্খাল্যান্ডও চাইছিল। কারন এরা সবাই উন্নয়ন চাইছে। এর আগে যে সরকার ছিল তারাও এখানকার উন্নয়ন করে নি। বর্তমান যে সরকার আছে তারাও উন্নয়ন করে নি। না আছে এখানে বড় হাসপাতাল, বা না আছে এখানে কোনো শিল্প। এখানে কোনোরকম কোনো ব্যবস্থা নেই। উত্তরবঙ্গের মানুষকে ধোকা দেওয়ার জন্য উত্তরকন্যা বানিয়ে রাখা হয়েছে। তখন বলা হতো এখানে সমস্ত ধরনের দফতর থাকবে উত্তরবঙ্গের মানুষকে আর কলকাতায় যেতে হবে না। এখানেই সব দফতরের কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখলাম। এখানে কোন দপ্তরে কোন কাজ হয়না শুধু এখানে কিছু ছেলেপেলে আড্ডা মারে। এ ছাড়া আর কিছু হয় না। উত্তরবঙ্গের মানুষকে কলকাতায় যেতে হচ্ছে। সেখানে দু'চারদিন থাকতে হচ্ছে । দফতরগুলিতে দু-তিনদিন ঘুরেও হয়তো কাজ হচ্ছে না। একদিকে যেমন পয়সা খরচ হচ্ছে তেমন শারীরিক এবং মানসিকভাবে মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাই প্রত্যেকে চাইছে এখানে উন্নয়ন হোক। মানুষের এখন একটা ভাবাবেগ কাজ করছে। এখানে কোনো উন্নয়ন হয়নি উন্নয়ন হলে সেই দাবিটা আর আসতো না। মানুষ দাবি করতেই পারে এই দাবি মানুষের দীর্ঘদিনের। উন্নয়ন চাইতে গেলে যদি কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন এখানে দরকার তাহলে আমরা সেটাই চাই। "
অন্যদিকে, বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা ভাগের চক্রান্তর অভিযোগ তুলে বিজেপি সাংসদ জন বারলা এবং সৌমিত্র খাঁর কুশপুতল দাহ করল যুব তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি সংলগ্ন নকশালবাড়ি ব্লকের আপার বাগডোগরার বিহার মোড়ে জন বারলা ও সৌমিত্র খাঁর কুশপুতুল দাহ করে নকশালবাড়ি ব্লক ১ যুব তৃণমূল কংগ্রেস। অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের পর এখন রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা বাংলা ভাগের চক্রান্ত করে নষ্ট করতে চাইছে বিজেপি। নকশালবাড়ি যুব তৃণমূল সভাপতি স্বাগত ঘোষ বলেন, "বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে বিজেপি। আমরা সর্বতোভাবে সেই চক্রান্ত রুখবো। কোনভাবেই বাংলা ভাগ হতে দেবো না। আর রাজ্যবাসী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছে। যেসব বিজেপি নেতারা বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে তাদের মানুষ জবাব দেবে।"