শুক্রবার পানীয় জল ইস্যুতে শুক্রবার বিজেপির বিক্ষোভে তুমুল উত্তেজনা ছড়াল শিলিগুড়ি পুর নিগম চত্ত্বরে। এদিন বেলা ১২ টা নাগাদ বিজেপির কয়েক’শ কর্মী সমর্থক মিছিল করে পুরনিগমে ঢোকার চেষ্টা করে।
গেটের মুখেই তাঁদের আটকে দেয় শিলিগুড়ি পুলিশ। জোর করে পুর নিগমে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। শুরু হয়ে যায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। পুরনিগমের সামনে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল একই ইস্যুতে শিলিগুড়ি পুরনিগমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল সিপিএম। আর আজ বিজেপির বিক্ষোভে তোলপাড় হল পুর চত্বর। বিজেপি কাউন্সিলর অমিত জৈন পুরবোর্ডের পদত্যাগ দাবি করেন।
পুলিশের বাধা পেয়ে বিজেপি কর্মীরা গেটের সামনে মেয়রের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর চেষ্টা করলে পুলিশ সেটাতেও বাধা দেয়। কুশপুত্তলিকা দাহ করতে না পেরে, সেটিকে ছুড়ে দেয় পুরনিগমের গেটের ভিতরে।
মিছিলে মহানন্দা নদী থেকে আনা জল পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। গেটের সামনেই রাস্তার ওপরে বসে পড়েন বিজেপির বিক্ষোভকারীরা। শুরু হয় পথ অবরোধ। ঘটনাস্থলে এখনও বিক্ষোভ অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন বিজেপির কর্মী সমর্থকরা।
বিজেপি কাউন্সিলরের দাবি, পুরনিগম মানুষকে বিষ খাইয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তৃণমূল বোর্ড চালাতে ব্যর্থ। তাদের থাকার কোনও অধিকার নেই। অবিলম্বে তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত।
এর আগে বামেদের সঙ্গে বুধবার একপ্রস্থ ধাক্কাধাক্কা হয়েছে মেয়র গৌতম দেব ও ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকারের। তাঁদের ঘেরাও করে একই ইস্যুতে বিক্ষোভ দেখায় বামেরাও। মেয়র জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে জানিয়েও দায় বাম আমলের ব্যর্থতার উপর চাপান।
সাধারণত তিস্তার জল পরিস্রুত করে শিলিগুড়ি শহরে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছরের হড়পা বানে তিস্তার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষার আগে তা মেরামত করা প্রয়োজন। সেই কারণেই কিছু দিন তিস্তার জল বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
বিকল্প হিসাবে মহানন্দার জল পরিস্রুত করে সরবরাহ করছিল পুরসভা। বুধবার দেখা যায়, সেই জলে বিওডির মাত্রা বেশি। অর্থাৎ, মহানন্দার জল নিরাপদ নয়। তার পরেই ওই জল খেতে নিষেধ করেন মেয়র। যার ফলে শিলিগুড়িতে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
বিরোধীদের দাবি, জল সরবরাহ বন্ধ না রেখে, আগাম প্রস্তুতি না রেখে, পুরনিগম শুধুমাত্র জল খেতে বারণ করেই হাত গুটিয়ে নিয়েছে। পাউচ জলের প্যাক দেওয়া হয়েছে ওয়ার্ডগুলিতে। যদিও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অনেকের অভিযোগ। এর পাশাপাশি পাউচ জলের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
২ জুন পর্যন্ত সমস্য়া হবে বলে দাবি মেয়রের। তার মধ্যে জলের সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যাবে বলে তারা আশাবাদী। তত দিন জলের পাউচের মাধ্যমে শিলিগুড়িবাসীর তেষ্টা মেটানোর সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা।
তবে পাউচের মান নিয়ে অভিযোগের মাঝেই বেশির ভাগ মানুষ জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সুযোগে শিলিগুড়িতে শুরু হয়েছে জলের কালোবাজারি।
দোকানে ইচ্ছামতো দামে জল বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ। অবস্থা বেগতিক দেখে মেয়র জানিয়েছিলেন, সকলকে একজোট হয়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।
২ দিন আগেই সেই জল পান না করার জন্য শহরবাসীর কাছে আবেদন জানিয়ে ছিলেন মেয়র গৌতম দেব। মেয়রের এই ঘোষণার পরই শোরগোল পড়ে যায় শিলিগুড়িতে।
এই পানীয় জল ইস্যুতে গতকাল শিলিগুড়ি পুর নিগম চত্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছিল সিপিএম। মেয়র গৌতম দেবকে ঘিরেও ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সিপিএমের কর্মী সমর্থকরা। সেদিন সেভাবে পুলিশ মোতায়েন ছিল না পুরনিগমে। ফলে বিপাকে পড়তে হয় মেয়র ও ডেপুটি মেয়রকে।
এদিন আর ঝুঁকি নেয়নি পুরনিগম ও পুলিশ। আগে থেকেই পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ হয়েছিল এলাকা। এদিকে বিক্ষোভ নিয়ে বিরোধীদের দিকে রাজনীতির অভিযোগ এনেছেন মেয়র গৌতম দেব। তিনি সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানও জানান। যদিও অনেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিরোধী আসনে থাকার সময় তৃণমূল কীভাবে জল সমস্যা নিয়ে বিক্ষোভ আন্দোলন করেছিল।