scorecardresearch
 

সালিশি সভায় তিল তালাকের অভিযোগ! তোলপাড় জলপাইগুড়ির বিন্নাগুড়ি

তিনি আরও দাবি করেন, হঠাৎই অভিযুক্ত যুবক নির্যাতিতাকে তিন তালাক দেয়। আমরা সমাজের পক্ষ থেকে এই তিন তালাক মানি না।

Advertisement
জলপাইগুড়ির বিন্নাগুড়িতে তিন তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে (প্রতীকী ছবি) জলপাইগুড়ির বিন্নাগুড়িতে তিন তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে (প্রতীকী ছবি)
হাইলাইটস
  • সালিশি সভায় তিন তালাকের ঘটনা ঘটল বলে অভিযোগ উঠল
  • জলপাইগুড়ি জেলার বিন্নাগুড়ি চা-বাগানের বিচ লাইন শ্রমিক বস্তির ঘটনা
  • এই ঘটনায় এলাকা তোড়পা

সালিশি সভায় তিন তালাকের ঘটনা ঘটল বলে অভিযোগ উঠল। জলপাইগুড়ি জেলার বিন্নাগুড়ি চা-বাগানের বিচ লাইন শ্রমিক বস্তির ঘটনা। এই ঘটনায় এলাকা তোড়পাড়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সেখানকার জিন্নাত খাতুনের সঙ্গে এক বছর আগে নিজেদের পছন্দ মতোই বিয়ে করেছিলেন তাঁরা। বর্তমানে তাঁদের একটি সন্তানও রয়েছে। বিয়ের পর পণের জন্য নির্যাতিত হয়ে জিন্নাত খাতুন বাপের বাড়িতে চলে আসেন। এবং এই সমস্যার মীমাংসা করার জন্য আঞ্জুমান কমিটির কাছে আবেদন করেন।

লকডাউনের কারণে কমিটি ১০ মাস কোনও সালিশি সভা করতে পারেনি। অবশেষে ১ জুন বিন্নাগুড়ির জামা মসজিদে সালিশি সভা বসে। সেখানে কোনও মীমাংসা শেষ হওয়ার আগেই তাঁর স্বামী তিন তালাক দেন বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: মা-হারা শিশুদের মাতৃদুগ্ধ দিতে তথ্য ব্যাঙ্ক তৈরি করছেন কলকাতার ২ তরুণী

এই ঘটনার জেরে অসহায় জিন্নাত খাতুন বিচার পাওয়ার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ি তাঁকে পছন্দ করতেন না। এবং পরে সন্তান হলে স্বামীও শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতে শুরু করেন।

তাঁর আরও অভিযোগ, এই সব দেখে নির্যাতিতা বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন। এবং সেখান থেকে আঞ্জুমান কমিটিকে জানান হলেও তাঁদের সামনে তিন তালাক দেওয়া হয়। এখন আমি বিচার চাইতে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি এবং এর সঠিক বিচার চাই। 

ওই নির্যাতিতা মহিলা পুলিশের দ্বারস্থ হতেই তার পাশে দাঁড়িয়েছে বিন্নাগুড়ি আঞ্জুমান কমিটি। বিন্নাগুড়ি অঞ্চলের মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক আহমেদ দাবি করেন, ওই দম্পতির মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল এবং বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে আঞ্জুমান কমিটি সালিশি সভার আয়োজন করেছিল।

তিনি আরও দাবি করেন, হঠাৎই অভিযুক্ত যুবক নির্যাতিতাকে তিন তালাক দেয়। আমরা সমাজের পক্ষ থেকে এই তিন তালাক মানি না। এটা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। প্রশাসন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সমাজ তা-ই মেনে নেবে।

Advertisement

এই খবর প্রকাশ হতেই নিন্দার ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহলে। জলপাইগুড়ি মসজিদের দায়িত্বে থাকা শহিদুল ইসলাম জানান, সমাজের উচিত নির্যাতিতা নারীর পাশে দাঁড়ানো। সবার ঊর্ধ্বে দেশের আইন। যারা আইন মানবে না, প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের আইনজীবী ইউনুস আলি ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের ২০১৭ সালের একটি রায়কে উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে ভারত তিন তালাক বৈধ নয়। তাই যারা এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের ধিক্কার জানাই। এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন রাখি।

অন্যদিকে, এই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। জলপাইগুড়ি জেলার পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানান, অভিযোগ গ্রহণ করেছি। পুলিশ তদন্ত করছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে প্রশ্ন উঠছে, যেখানে দেশে তিন তালাক সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ, সেখানে এখনও এক শ্রেণীর মানুষ সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিন তালাকের মাধ্যমে অন্যায় ভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের চেষ্টা করছেন।

যার উদাহরণ দেখা গেল বিন্নাগুড়ি চা-বাগান এলাকায়। এই ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই সব ব্যক্তিদের কড়া বার্তা দেওয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

 

Advertisement