Darjeeling Bimal Gurung: ৫ বছরে বদলে গিয়েছে গোটা ছবি। ৫ বছর আগে তাঁর দরজায় ভিড় করে থাকতেন সঙ্গী থেকে বিরোধী সকলেই। তাঁর আশীর্বাদপ্রাপ্তির আশা নিয়ে ঘুরঘুরে করত সমতলের সব রাজনৈতিক দল। দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে তিনিই ছিলেন শেষ কথা। ৫ বছর পর যখন ফের আরও একটা লোকসভা নির্বাচন দোরগোড়ায়, তিনি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের দরজা এখন ফাঁকা। নিঃসঙ্গ বিমল এখন ছোট ছোট জনসভা করে নিজের পুরনো অতীতকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন। সঙ্গী শুধু দীর্ঘদিনের সঙ্গী দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এবং গুটিকয় ছায়াসঙ্গী। নিজের খাসতালুকেই তিনি এখন অপ্রাসঙ্গিক।
২০১৭ সালে পাহাড়ে জিটিএ ত্যাগ করে ধারাবাহিক হিংসার সময় থেকে দাপট কমছিল বিমলদের। প্রায় ২ বছর একাধিক মামলায় জড়িয়ে পালিয়ে থাকার সময়ই পাহাড়ের কতৃত্ব হাতছাড়া হয়। তাঁর অনুপস্থিতিতে পাহাড়ের রাশ তুলে নেন তাঁরই একদা দুই সঙ্গী বিনয় তামাং, অনিত থাপারা। পরে মামলা খারিজ হওয়ার পর ফিরে এলেও আর পুরনো জায়গা ফিরে পাননি তিনি। তাঁর একদা সঙ্গীদের প্রধান তিন মুখই এখন বিচ্ছিন্ন। আগেই নিজের নতুন দল খুলে বিদ্রোহ করেছিলেন হরকাবাহাদুর ছেত্রী। নতুন দল গড়েছেন অনিত থাপাও। বিনয় বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন কংগ্রেসে। তাঁর নাম পাহাড়ে প্রার্থী করার জন্য পাঠানো হয়েছে কংগ্রেসের তরফে। তিনি বিমল এখন ফের পাহাড়ে ছোট ছোট সভা করে পুরনো অনুগতদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু কার হয়ে বা কার জন্য তাঁর এই প্রচার, নিজের কাছেই স্পষ্ট নয়। বিজেপির সঙ্গে তিনি রয়েছেন এমন কোনও খবর এখনও নেই। তৃণমূলের সঙ্গ তিনি নিজেই ছেড়ে দিয়েছেন।
তাহলে এবার লোকসভা ভোটে কি ভূমিকা থাকছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার? মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, 'লোকসভা ভোট নিয়ে আমাদের এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে জানিয়ে দেওয়া হবে।' কবে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন কেউ জানে না। আর জানলেও এখন তাঁদের সেই সিদ্ধান্ত যে পাহাড়ে কোনও প্রভাব ফেলবে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত অনিতরা। পাহাড়ে এখন প্রভাব অনিতদেরই বেশি। তবে ভোটে কারা জিতবে তা অবশ্য নিশ্চিত নয়। জিএনএলএফের সরাসরি সমর্থন রয়েছে বিজেপির দিকে। হামরো পার্টি তৃণমূল বিরোধী। ফলে এবার লড়াই জমজমাট। এদিকে বিনয় যদি প্রার্থী হন, তাহলে তিনিও একটা বড় ফ্যাক্টর হতে পারেন। জিততে যদিও না পারেন, কাউকে হারিয়ে দিতে পারেন, এ বিশ্বাস পাহাড়ের আনাচে-কানাচে।
বিমল এখন পৃথক গোর্খাল্যান্ডের পুরনো ইস্যুতে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু পুরনো পরিচিত ও কৃপাধন্যরা এসে হেসে করমর্দন করে যাচ্ছেন বটে। কিন্তু তাঁর কথায় ময়দানে নামতে চাইছেন কেউ, এমন খবর নেই। ফলে একদা পাহাড় ও ডুয়ার্সের একাংশের একচ্ছত্র অধিপতি বিমল এখন পাহাড়ের আনাচে-কানাচে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে ফিরছেন।