scorecardresearch
 

২০২৪-এ লোকসভা ভোট, এখন থেকেই জোট নিয়ে কেন তৎপর মমতা?

পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা ভোটের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখন লক্ষ্য দিল্লি দখল। সেই জন্য সলতে পাকানোর কাজও শুরু করে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন বাড়ানোর জন্য তিনি দলের পুরোনো সৈনিক মুকুল রায় ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দিয়েছেন। বসে নেই নিজেও। গতকাল সোমবার দিল্লি উড়ে গিয়েছেন তিনি। লক্ষ্য ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি।

Advertisement
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
হাইলাইটস
  • পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা ভোটের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখন লক্ষ্য দিল্লি দখল
  • সেই জন্য সলতে পাকানোর কাজও শুরু করে দিয়েছেন
  • পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন বাড়ানোর জন্য তিনি দলের পুরোনো সৈনিক মুকুল রায় ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দিয়েছেন

পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা ভোটের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখন লক্ষ্য দিল্লি দখল। সেই জন্য সলতে পাকানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন বাড়ানোর জন্য তিনি দলের পুরোনো সৈনিক মুকুল রায় ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দিয়েছেন। বসে নেই নিজেও। গতকাল সোমবার দিল্লি উড়ে গিয়েছেন তিনি। লক্ষ্য ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি। আরও পরিষ্কার করে বললে, BJP বিরোধী দলগুলির সঙ্গে জোট গড়ে পরবর্তী লোকসভা ভোটে লড়তে চাইছেন তিনি। সেই সূত্রেই দিল্লি যাত্রা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

সূত্রের খবর, বুধবার কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এছাড়াও এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার-সহ একাধিক অ-BJP দলগুলির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। গত ২১ জুলাই শহিদ দিবসের ভার্চুয়াল মঞ্চ থেকে শরদ পাওয়ারদের BJP-বিরোধী জোট গড়ার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর দিল্লি যাত্রার লক্ষ্য, সেই জোটের রূপরেখাকে বাস্তবায়িত করা। 

কিন্তু, কেন এখন থেকেই জোট নিয়ে এত উঠেপড়ে লেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ২৪-এর ভোটের এত আগে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোট নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার মূল কারণ হল ২০১৯ লোকসভার শিক্ষা। সেবার ভোটের প্রাক মুহূর্তে তিনি BJP বিরোধী জোট গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সফল হননি। তাই এবার আগে-ভাগেই শরদ পাওয়ার, সোনিয়া গান্ধিদের ঐক্যবদ্ধ করতে চাইছেন। 

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়

উদয়নবাবুর মতে, একুশের নির্বাচনে BJP-কে পর্যদুস্ত করার পর দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন গেরুয়া বিরোধী প্রধান মুখ। তাই জোট গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিজের সেই ইমেজকে তিনি বজায় রাখতে চাইছেন। আবার মসনদে বসার পরপরই মমতার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, তিনি মোদী সরকারের কৃষি আইনকে সমর্থন করেন না। কৃষকদের আন্দোলনের পাশে আছেন। এই মুহুর্তে কৃষক বিরোধী আন্দোলন জাতীয় রাজনীতির বড় ইস্যু। সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে মোদী বিরোধিতাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন তিনি। কৃষি আইনের বিরোধিতা করেছেন অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তবে তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মোদীর বিরুদ্ধে 'রাফ অ্যান্ড টাফ' হতে পারেননি। এই কৃষি আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসেবে অন্য দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কথা তিনি নিজেও ভালো মতোই জানেন। আর সেই সুযোগকে হাতছাড়া করতে চাইছেন না। 

Advertisement

আর এক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহানন্দা কাঞ্জিলালের মতে, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ একাধিক রাজ্যে ২০২২ সালে বিধানসভা ভোট আছে। আবার ২৩ সালে বিধানসভা ভোট হবে ত্রিপুরায়। ওই ভোটগুলিকে পাখির চোখ করে এগোতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর লক্ষ্য, বিধানসভা ভোটগুলিতেও BJP বিরোধী শক্তিগুলিকে একজোট করা। যাতে ফল খারাপ হয় গেরুয়া শিবিরের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো মতোই জানেন, বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভার ভোটে BJP খারাপ ফলাফল করলে তার প্রভাব ২৪ এও পড়বে। সেই কারণে এখন থেকেই তিনি কোমর বেঁধে নেমেছেন। 

মহানন্দাদেবীর মতে, মোদী বিরোধী প্রধান মুখ যে তিনিই, তার প্রমাণ বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই দিয়ে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নোটবাতিল, সিএএ, কৃষি আইন, জিএসটি ইত্যাদি একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একরোখা প্রতিবাদ করে এসেছেন তিনি। যা অন্য রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতা করতে পারেননি। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই জোটের প্রধান মুখ তা স্বীকার করে নিচ্ছেন ঘোর মমতা বিরোধীরা। আর তৃণমূল নেত্রী তা ভালোভাবেই জানেন। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহানন্দা কাঞ্জিলাল
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহানন্দা কাঞ্জিলাল

মহানন্দাদেবীর আরও সংযোজন, 'একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে BJP বিরোধী দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। শুধু তাই নয়, একুশের প্রচার তিনি চালিয়েছেন তামিলনাড়ু ও মোদীর গড় গুজরাতের মতো রাজ্যে। সুতরাং, শুধু রাজনৈতিক দলগুলির কাছেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও জাতীয় নেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশের একটা সুযোগ তিনি খুঁজছেন, একথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। সেই ইমেজ ধরে রাখতে চাইছেন জোটের প্রস্তুতির মাধ্যমে।' 

এই জোট গড়ার প্রক্রিয়া কি সফল হবে? মহানন্দাদেবীর মতে, 'সেটা সময়ই বলবে।' আবার উদয়নবাবুর মতে, 'উত্তরপ্রদেশ বা অন্য যে সব রাজ্যে বিধানসভা ভোট আছে, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে জোট গড়ার প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ। মমতা যাঁদের নিয়ে জোট গড়তে চাইছেন, সেই সব দলগুলি যদি একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ বা প্রতি-আক্রমণের রাজনীতি খুব জোরালোভাবে শুরু করে, তাহলে জোট গঠনের প্রক্রিয়া মার খাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।'  


 

Advertisement