ফের বিতর্কে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বেফাঁস মন্তব্য করে ফেললেন। আর এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এদিন তিনি মন্তব্য করেন, গুরুদেবের সময়ও বিশ্বভারতীতে শয়তানের আবেশ ছিল। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রতনপল্লীতে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, "গুরুদেবের সময়েও যে সোনার বিশ্বভারতী ছিল তা নয়। তখনও ছলচাতুরি, শয়তানের আবেশ ছিল।"
বরাবরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেফাঁস মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না৷ এদিন বিশ্বভারতীর রতনপল্লীর রামকিঙ্কর মঞ্চে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান ছিল৷
সেখানে বক্তব্য পেশ করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। আর তখন তিনি বলেন, "আমি যে কথাগুলো, সমস্যাগুলো বলি, তার জন্য অনেকেই আমার সমালোচনা করেন৷ কিন্তু, এই প্রত্যেকটা কথা আমার কথা নয়৷ গুরুদেবও তখন ভেবেছিলেন। অর্থাৎ গুরুদেবের সময়েও যে সবটা সোনার বিশ্বভারতী ছিল, তা নয়৷ সেই সময়েও ছল-চাতুরী, শয়তানের আবেশ ছিল।"
ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, "সেই সমস্ত আবেশ দূর করে গুরুদেব বিশ্বভারতীকে আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব গুলোকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই ধরনের অনুষ্ঠান দরকার। তাই আমরা যেটা করছি, তার সঙ্গে গুরুদেবের ভাবনার কোন অন্তরায় নেই।"
প্রসঙ্গত, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে "বহিরাগত" উল্লেখ করে বিতর্কের মুখে পড়েছিল বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। জমি নিয়ে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের সঙ্গেও বিবাদ লেগেছিল। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়।
এদিকে, গত কয়েক মাস ধরে বেশ কিছু ঘটনায় সংবাদ শিরনামে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। এমনকি, বিশ্বভারতীকে ঘিরে রাজ্য-কেন্দ্র দ্বন্দ্বও চরমে। এছাড়া বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে, রবীন্দ্র-আদর্শ থেকে সরে যাচ্ছে বিশ্বভারতী। এই সকল একাধিক অভিযোগে সরব হয়েছেন আশ্রমিক, পড়ুয়া, প্রাক্তনী, শিক্ষা মহলের একটা বড় অংশ।
অন্যদিকে, বিশ্বভারতী যে রবীন্দ্র-আদর্শ-ঐতিহ্য থেকে সরে গিয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। দিন কয়েক আগে রতনপল্লীর রামকিঙ্কর মঞ্চে 'ভুল রাস্তা' শীর্ষক নাটক পরিবেশিত হয়। নাটক শেষে শিল্পীদের সাধুবাদ জানাতে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য।
সেই সময় তিনি বলেন, "আমি সব সময় বলি, বিশ্বভারতী আমাদের সবার। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ঐতিহ্য দিয়ে গিয়েছেন, তা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।" তিনি আরও বলেন, "কিন্তু, আমরা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারিনি৷ আমরা ব্যর্থ হয়েছি ঐতিহ্য ধরে রাখতে৷ যে বিশ্বভারতী ছিল সেই বিশ্বভারতীকে আমরা রাখতে পারিনি৷ এবার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর বড় দায়িত্ব।"