সময় যত গড়াচ্ছে, নেপালে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ATR-72 বিমানটিতে ৬৮ জন যাত্রী এবং ৪ ক্রু সদস্য নিয়ে কাঠমান্ডু থেকে রওনা হয়েছিল এবং রবিবার পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হয়।
কাঠমান্ডু পোস্ট অনুসারে, উদ্ধারকারীরা এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনার ধ্বংসাবশেষ থেকে ৬৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।বাকি ৪ জনের সন্ধান চলছে। সেনার দাবি দুর্গম ভূখণ্ডের কারণে উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত রাতে তা বন্ধ করতে হয়েছিল। সকালে আবার অনুসন্ধান অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। নিউজ এজেন্সি এএনআই-এর বক্তব্য অনুযায়ী, নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ ভান্ডারি বলেছেন, "আমরা দুর্ঘটনাস্থল থেকে কাউকে জীবিত উদ্ধার করতে পারিনি।" যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গন্ডকি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।, জেলা প্রশাসনের অফিসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বেশিরভাগ মৃতদেহ এতটাই পুড়ে গেছে যে সেগুলো শনাক্ত করাও সম্ভব নয়।
বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তার মতে, যাত্রীদের মধ্যে ১৫ জন বিদেশী নাগরিক ছিলেন, যার মধ্যে ৫ জন ভারতীয়, ৪ জন রাশিয়ান, ২ জন দক্ষিণ কোরিয়ার, ১ অস্ট্রেলিয়ান, একজন ফরাসি, একজন আর্জেন্টিনার এবং একজন আয়ারল্যান্ডের নাগরিক ছিলেন। মৃত পাঁচ ভারতীয়ের নাম অভিশেখ কুশবাহা (২৫), বিশাল শর্মা (২২), অনিল কুমার রাজভর (২৭), সোনু জয়সওয়াল (৩৫) এবং সঞ্জয় জয়সওয়াল৷ পাঁচ ভারতীয়ের মধ্যে চারজন পোখারার পর্যটন কেন্দ্রে প্যারাগ্লাইডিং করতে যাচ্ছিলেন। ৫ ভারতীয় নাগরিকের মধ্যে, ৪ জন সবেমাত্র শুক্রবার ভারত থেকে কাঠমান্ডু পৌঁছেছিলেন।
দক্ষিণ নেপালের সরলাহি জেলার বাসিন্দা অজয় কুমার শাহ সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে বলেছেন, "চারজনই লেক সিটি এবং পর্যটন কেন্দ্র পোখারাতে প্যারাগ্লাইডিং উপভোগ করার পরিকল্পনা করছিল।" তিনি আরও বলেন, আমরা ভারত থেকে একই গাড়িতে একসঙ্গে এসেছি। "পোখরা যাওয়ার আগে তারা পশুপতিনাথ মন্দিরের কাছে গোশালায় এবং তারপর হোটেল ডিসকভারিতে ছিলেন," তিনি বলেছিলেন। তারা পোখরা থেকে গোরখপুর হয়ে ভারতে ফেরার পরিকল্পনা করছিলেন বলেও তিনি জানান।
মারাত্মক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ ভারতীয়ের মধ্যে চারজন উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মৃতের আত্মীয়দের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং চার যুবকের মৃতদেহ নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের 9N-ANC ATR-72, বিমানটি রবিবার সকাল ১০:৩৩ টায় কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়েছিল। সকাল ১০.৫০ টায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সাথে চূড়ান্ত যোগাযোগ করেছিল। নেপালের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি জানিয়েছে, পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কিছুক্ষণ আগে এটি সেতি, গন্ডকি নদীর তীরে বিধ্বস্ত হয়। মাত্র ২ সপ্তাহ আগে বিমানবন্দরটি নতুন উদ্বোধন করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল 'প্রচন্ড' মন্ত্রী পরিষদের জরুরি বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর সরকার দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এটি আরও নির্দেশ দিয়েছে যে প্রতিটি অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন্সের বিমানগুলি ফ্লাইট নেওয়ার আগে কঠোর পরিদর্শন করে। নেপাল আজ ১৬ জানুয়ারি, তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অভ্যন্তরীণ বিমান বিপর্যয়কে শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।